শরীরের গড়ন হালকা। মেয়ে বললে ভুল হবে, কিশোরী বলাই ভালো। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাড়ী। সোনারগাঁও বললে, আমি নানা কারণে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ি। তার একটি কারণ হচ্ছে আমার লেখনীর শিক্ষাগুরু প্রখ্যাত সাংবাদিক লেখক ও কলামিষ্ট জনাব শফিকুল কবির এর বাড়ী এই সোনারগাঁওয়ে। যাই হোক, সোনারগাওয়ের সেই মেয়েটি বললেন, আমি ফর্সা হতে চাই ডাক্তার সাহেব। আমি বললাম তুমিতো অনেক সুন্দর এবং তোমার গায়ের রং যথেষ্ট ভালো। মিয়েটিকে আশ্বস্ত করতে বললাম, আমার মেয়ের গায়ের রং ও তোমার মত। তাছাড়া ত্বক ফর্সা করার কোন চিকিৎসা নেই।
আজকাল কিছু কিছু বিউটি পার্লারের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে তরুণী-মহিলারা ছুটছেন তক ফর্সা করতে। আসলে ত্বক ফর্সা করার কোন ব্যবস্থা চিকিৎসা শাস্ত্রে নেই। বহুবার বলেছি আমি আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের দু’টি বিখ্যাত হাসপাতালে স্কিন, লেজার ও কসমেটিক সার্জারির ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় কখনও ত্বক ফর্সা করা সম্ভব এমন কথা শুনিনি। কখনও কেউ বললেনি ত্বক ফর্সা করা যায়। তবে আজকাল লেজার টেকনোলজির সুবাধে ত্বক ব্রাইট করা যায়, ফর্সা করা যায় না। মুখের ব্রাউন স্পট, পিগমেন্ট, তিল, মোল, আঁচিল, অবাঞ্ছিত লোম দূর করা যায়। ত্বক ফর্সা করার কোন লেজার ও চিকিৎসা এখনও বের হয়নি।
তবে তথাকথিত হুয়াইটিনিয সিস্টেমের নামে মুখের ত্বক পুড়িয়েং দিয়ে ফর্সা করার মারাত্মক ক্ষতিকর উপায় নিয়ে দু’একটি বিউটি পার্লার প্রচার করে থাকে। এসব অবৈজ্ঞানিক মারাত্মক ক্ষতিকর হুয়াইটিং সিস্টেম নিয়ে আর একদিন বিস্তারিত লিখবো।
সোনারগাঁও এর ঐ মেয়েটির কাছে জানতে চাইলাম- তুমি কেন ত্বক ফর্সা করতে চাইছো। প্রথমে মেয়েটি সংকোচ বোধ করলেও সে জানালো আমার বিয়ে হয়েছে একমাস। স্বামী আমেরিকা প্রবাসী। বর্তমানে দেশে আছে। স্বামী চায় আরও ফর্সা ত্বক। এরপর জানতে চাই তোমার স্বামী কোথায়। মেয়েটি বললো ও আমার সঙ্গেই এসেছে। ধারণা ছিলো অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ১৪/১৫ বছরের মেয়েটির স্বামীর বয়স ২০/২২-এর বেশী হবে না। ওমা বয়সে ৩৮/৪০ এর কম হবে না। প্রথম মিনিট খানেক ভীষণ রাগ হয়েছিলো। যাহোক, রোগীদের ওপর রাগ করার কোন অধিকার ডাক্তারের নেই। স্বাভাবিক হয়ে জানাতে চাইলাম আপনার নতুন বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে। এরপর বেশখানিকটা সময় নিয়ে কথা হলো। ত্বক ফর্সা করার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে কিশোরী মেয়েটিকে বাইরে যেতে বললাম। এর পর মধ্যবয়স্ক যুবকের কাছে জানতে চাই কেন আপনার অর্ধেকের চেয়ে কম বয়সের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। যুবকটি কোন সদুত্তোর দিতে পারলেন না। এই যুবকটি ঢাকার একটি নামকরা কলেজ এবং একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যুবকটি জানালেন এখনই তাদের ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা হচ্ছে। বললেন ডাক্তার সাহেব শরীর ঠিক রাখতে কোন ওষুধ দেয়া যাবে কিনা। আমি দু’একটি মামুলি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে দিয়ে আর একদিন আসতে বলি।
আজ থেকে ১০ বছর পরের একটি দৃশ্যের কথা চিন্তা করুন। যখন সোনারগাওয়ের কিশোরী মেয়েটির বয়স হবে ২৫/পরিপূর্ণ এক যুবতী। আর যুবকটির বয়স হবে ৪৮/৫০ এ বয়সে নিশ্চয়ই দু’জনের চাওয়া-পাওয়ার ক্ষেত্রে থাকবে অনেক ব্যবধান। এখানে আজকের কিশোরীটির চিরায়ত বাঙালী চরিত্রের রূপায়ণ অর্থাৎ সব কিছু নিরবে মেনে নিয়ে বয়স্ক স্বামীর ঘর করা অথবা পরিবারের সকলের অমতে ভিন্ন চিন্তা করাই কিন্তু আমাদের মত রক্ষণশীল সমাজে সব সময় ছাড়া উপায় নেই। কাজটি করতে পারে না অথবা করে না। যাহোক, আমাদের দেশে এখনও আইন বলবৎ আছে মেয়েদের ১৮ বছরের নীচে এবং পুরুষের ২১ বছরের কম বয়স বিয়ে করা উচিত নয়।
বয়সের পার্থক্য কেমন হবে তা অবশ্য আইনে বলা নেই। তবুও একজন নগন্য সেক্সোলজিষ্ট হিসেবে আমার নিজস্ব অ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বয়সের ব্যবধান বেশী থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। এছাড়া কোন অবস্থাতেই মেয়েদের ১৮ বছরের নীচে বিয়ে দেয়া উচিত নয়। সম্ভব হলে মেয়েদের নূন্যতম বিয়ের বয়স ২০ বছর নির্ধারন করা উচিৎ। বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের একই বয়সী না হলে বয়সের ব্যবধান সর্বোচ্চ ৫/৭ বছরের মধ্যে থাকা ভালো। তবে যে কোন মেয়ে তার পরিপূর্ণ বয়সে যে কোন বয়সের পুরুষদের বিয়ে করার আইনগত অধিকার রাখেন। এটা নিশ্চয়ই তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে অপরিণত মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বামীর বয়স নির্ধারণ করার দায়িত্ব অবশ্যই অভিভাবক বা পিতা-মাতার। শারীরিক ও মানসিক সমস্যা এড়াতে অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কম হওয়া উচিত। পাশাপাশি যদি কেউ বেশী বয়সে বিয়ে করতে চান তাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। এতে ভবিষ্যতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট নানা সমস্যা এড়ানো যায়।