শ্বাশুড়ির সাথে পুত্রবধুর বনছে না বা ননদের সাথে ভাবির রেষারেষি - এমন গল্পের দেখা আমাদের সমাজে হরহামেশাই মেলে! কিন্তু দেবরের সাথে ভাবির মন কষকষি বা সম্পর্ক খারাপ, এমন গল্প শুনেছেন কি? শুনে থাকলেও তার পরিমাণ যে অন্য দুই ঘটনার তুলনায় খুবই নগন্য, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
অথচ ব্যাপারটি অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল। শ্বাশুড়ি স্বামীর মা, সেই সুত্রে পুত্রবধু-শ্বাশুড়ির সম্পর্ক মা-মেয়ের সম্পর্কের মতোই আপন হবার কথা! আবার ননদ যেহেতু একজন মেয়ে, তাই ভালো-মন্দে ননদ-ভাবির সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক! কিন্তু আমাদের সমাজে এই সম্পর্কগুলো এভাবে তৈরি হয়ে ওঠে না। বরং দেখা যায়, শ্বশুরবাড়িতে দেবরই হয়ে ওঠে ভাবির আপনজন, বন্ধু এবং নির্ভরতার জায়গা! নতুন ভাবিকে দেবরই দেয় আশ্বাসের বাণী। বুঝে উঠতে সাহায্য করে বাড়ির অন্য সদস্যদের মানসিকতা। পাশে এসে দাঁড়ায় ভাবির দুঃসময়েও। কখনো কখনো পারিবারিক কোন্দলে স্বামী পাশে না থাকলেও দেবর ঠিকই থাকে প্রচ্ছন্নভাবে। দেবর-ভাবির সম্পর্ক এমনই সুমধুর ও মমতার।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের হওয়ায় সাধারণত দেবর ও ভাবি নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে না। ফলে মানসিক দূরত্বের অবকাশ এখানে কম থাকে। যেখানে শ্বাশুড়ি বা ননদের সাথে সম্পর্কে মানসিক দূরত্ব গড়ে ওঠে যোজন যোজন। ফলে একই লিঙ্গের হলেও প্রচ্ছন্ন মানসিক প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার কারণে এসব সম্পর্কে অমিল ও রেষারেষির পরিমাণটাই বেশি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর বউদি কাদম্বরী দেবীকে নিয়ে অনেক মুখরোচক কথা প্রচলিত থাকলেও তাঁদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, রবীন্দ্রনাথের 'কবিগুরু' হয়ে ওঠার পেছনে কাদম্বরী দেবীর অনেক অবদান ছিল।
একজন দেবর যেমন ভাবির বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন, তেমনি একজন ভাবি হয়ে দেবরের অনুপ্রেরণাদাত্রী। সম্পর্কের এই পারস্পরিক বোঝাপড়াটা তখনই সম্ভব যখন দ্বিধা ভুলে দুজনই বন্ধুত্বপূর্ণভাবে একজন আরেকজন গ্রহণ করবেন, সহজভাবে মেনে নেবেন। বিশেষ করে দেবরের ওপর দায়িত্ব বর্তায় নতুন ভাবিকে পরিবারে সহজ করে তোলা। আর ভাবিরও উচিত নতুন এই সম্পর্কটাকে সহজভাবে গ্রহণ করা।
দেবরের প্রতি :
*অনেক সময় বড় ভাইয়ের বউ বয়সে ছোট হয়। বয়সে ছোট হলেও তিনি আপনার সম্পর্কে বড়। তাই বয়স কম বলে তাকে হেলাফেলা করবেন না, ভাবির উপযুক্ত সম্মান তাকে দিন।
*নতুন পরিবেশে তার অস্বস্তি কাটাতে সাহায্য করুন। বলুন, যেকোনো প্রয়োজনে আপনাকে বলতে।
*বাড়ির অন্য সদস্যদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে একটু একটু করে নতুন ভাবিকে ধারণা দিন।
*তাকে সহজ করতে তার সাথে গল্প করুন, নিজেকে নিয়েই কথা বলুন। আপনার বন্ধু, কাজের জায়গা বা স্কুল-কলেজ নিয়ে কথা বলুন।
*নিজের কিছু কিছু কাজে ভাবির সাহায্য নিন। এতে সম্পর্কটা সহজ হয়ে উঠবে।
*বাড়ির নিয়ম-কানুন ভাবির জানা না থাকলে তাকে সেসব সম্পর্কে বুঝিয়ে বলুন।
*কোনো ভুল করে ফেললে তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলুন, সবার সামনে লজ্জা দেবেন না।
*ভাবির সাথে দেবররা দুষ্টুমি করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুষ্টুমি যেন মাত্রা না ছাড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
*ভাবির বাবার বাড়ি নিয়ে কোনো ঠাট্টা করবেন না।
ভাবির প্রতি :
*দেবর হলেন ভাইয়ের মতো। দেবর বয়সে বড় হলে তাকে শ্রদ্ধা করুন, ছোট হলে স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
*দেবর বয়সে বড় হলে কোনো উপদেশ দিলে সেটা মেনে চলুন।
*বাড়ির সদস্যদের সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে সেটা দেবরকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
*পরিবারের কাউকে সারপ্রাইজ দিতে হলে দেবরের সাথে পরামর্শ করুন।
*দেবর কোনো কাজে সাহায্য চাইলে হাসিমুখে তাকে সাহায্য করুন।
*ভুল বুঝলে বা অন্যায় আচরণ করলে আপনি এগিয়ে গিয়ে 'সরি' বলুন।
*মাঝে মাঝে দেবরের সাথে গল্প করুন।
*দেবর কোনো তার নিজের সম্পর্কে কোনো গোপন কথা শেয়ার করলে সেটা গোপনই রাখার চেষ্টা করুন।
*দেবর ছোট হলে তাকে পড়ালেখায় বা অন্যান্য কাজে সাহায্য করুন।
0 comments:
Post a Comment