দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে হলে ভালোবাসার পাশাপাশি প্রয়োজন বিশ্বস্ততা ও সমঝোতার। এর সাথে দরকার একে অপরের জন্য সম্মানবোধ। কিন্তু সব সময় কি এসব বিষয় মাথায় থাকে? মাঝেই মাঝেই আমরা ভুলে যাই এসব জরুরি বিষয়গুলো। তাই নিজের অজান্তেই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াই ভালোবাসার মানুষটির। ভুল করে তাঁকে বলে ফেলি কটু কথা, অসম্মান করে বসি তাঁকে, মনোকষ্টের কারণ হয়ে যাই তাঁর। কখনো কখনো রেগে গিয়ে বা না বুঝে আমরা এমন অনেক কথা বলি, যা হয়তো বলতে চাই না। কিন্তু এই না বলতে চাওয়া কথাটাই হয়তো অনেকখানি দুঃখ দিয়ে ফেলে প্রিয় মানুষটিকে।
আপনি আপনার প্রেমিক বা স্বামীকে হয়তো অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু মাঝে মাঝে কি তাঁর মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ান না? আপনার একটা ভুল আচরণ বা কটু কথা তাঁকে হয়তো অনেকখানি কষ্ট দিয়ে ফেলে। তাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে হতে হবে আরো যত্নশীল। বলবেন না এমন কোনো কথা বা করবেন না এমন কোনো কাজ যাতে আপনার সঙ্গী আপনার ওপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলে।
হেয় করার চেষ্টা করবেন না :
একজন পুরুষকে তাঁর চেহারা নিয়ে যত কটু কথাই বলা হোক না কেন, তাতে তিনি খুব বেশি কিছু মনে করবেন না। কিন্তু যখনই কথা উঠবে তাঁর ব্যক্তিত্ব প্রসঙ্গে তখনই আঘাত সরাসরি গিয়ে লাগবে তাঁর 'ইগো'তে! একজন পুরুষের অন্যতম সম্পদ হলো তাঁর ব্যক্তিত্ব। তাই ব্যক্তিত্ব নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা মানে তাঁকে হেয় করা। অন্যদের সামনে তাঁর খুঁতগুলো প্রকাশ করা মানেও কিন্তু তাঁকে হেয় করা! আর এ কাজটি করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এ বিষয়টি আপনার স্বামী বা প্রেমিক সহজে ভুলবেন না।
অর্থনৈতিক ব্যাপারে নাক গলাবেন না :
প্রাচীনকাল থেকেই এ কথা প্রচলিত আছে যে, পুরুষদের তাঁর বেতনের কথা জিজ্ঞেস করতে হয় না! আপনার সঙ্গীর অর্থনৈতিক উপার্জনের ব্যাপারে যতটা সম্ভব কম কথা বলুন। তাঁকে বারবার এই বলে চাপ প্রয়োগ করতে থাকবেন না যে, কেন তুমি কম উপার্জন করো বা কেন আরো বেশি উপার্জন করো না? এতে তিনি যার পর নাই বিরক্ত হবেন! তাছাড়া আপনার সঙ্গী কত রোজগার করেন, কীভাবে খরচ করেন, কেন খরচ করেন - এসব কথা জিজ্ঞেস করলেও বিরক্ত হবেন। আর বারবার অর্থনৈতিক ব্যাপারে কাউকে উত্যক্ত করা মানে তাঁকে ছোট করার চেষ্টা করা। তাই এ কাজটি করা থেকেও বিরত থাকুন।
ভালোবাসার মানুষটির সামনে অতি অহংকার করবেন না :
অহংকার খুবই খারাপ একটি বিষয়, আর সেটা যদি হয় আত্মঅহংকার, তাহলে তো কথাই নেই! ভালোবাসার মানুষটির সামনে আত্মঅহংকার করা একেবারেই উচিত নয়। আপনার সঙ্গী যদি আপনার চেয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতায় কম হন, চাকরির পদে ছোট হন অথবা কম আপনার চেয়ে বেতন কম পান তাহলে সেসব তাঁকে বারবার বলে খোটা দেবেন না। এতে যেমন তিনি ব্যথিত হবেন, তেমনি সম্ভাবনা থাকবে সম্পর্ক ভেঙে যাবারও। আপনার বাবার যদি বেশি ধনী হন বা আপনার সঙ্গীর পারিবারিক মর্যাদা যদি আপনার চেয়ে কম হয় তাহলেও উচিত হবে না এসব কথা বারবার বলা। কারণ আপনি তাঁকে ভালোবেসেছেন তাঁর অবস্থান জেনেই। আর এমনটা করলে ভালোবাসাকেই অসম্মান করা হয়।
অন্যদের সামনে পরিবার নিয়ে কটু কথা বলবেন না :
আপনার কাছে যেমন আপনার পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আপনার সঙ্গীর কাছেও তাঁর পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁর আপনজনদের ব্যাপারে কখনোই কোনো কটু কথা বলবেন না। আপনার সঙ্গীকে চার দেয়ালের ভেতরে বা একা তাঁর পরিবার সম্পর্কে কটু কথা বললেও তিনি হয়তো তেমন কিছু মনে করবেন না। কিন্তু অন্য লোকদের সামনে কিছু বললে তিনি অবশ্যই ব্যথিত হবেন। তাই এ কাজটি কখনোই করবেন না। এতে কিন্তু তাঁকে অসম্মান করা হয়। আর যদি সম্পর্কে এই অমর্যাদার ব্যাপারটি চলে আসে, তাহলে কিন্তু ক্ষতি আপনারই। আপনার সঙ্গী আপনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে।
অন্য পুরুষের সাথে তুলনা করবেন না :
ছেলেরা অন্য পুরুষের সঙ্গে নিজের তুলনা করা খুবই অপছন্দ করে। সেটা যদি কোনো সিনেমার নায়কের সাথেও হয়, তবুও! আপনার স্বামী বা প্রেমিককে ভুলেও অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। কখনোই বলবেন না যে, তুমি অমুকের মতো হ্যান্ডসাম না বা তমুকের রুচি তোমার চেয়ে ভালো। এতে সম্পর্কের অবনতি ছাড়া আর কিছুই হবে না। অন্যের সফলতা বা অগ্রগতি নিয়েও তুলনা করবেন না। এতে আপনার সঙ্গীর মনে হবে, আপনি তাঁকে নিয়ে সুখী নন।
সঙ্গীর বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখবেন না :
আপনার প্রেমিক বা স্বামীর বন্ধুদের সাথে খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা না রাখাই ভালো। নয়তো দেখা দিতে পারে নানা রকমের সমস্যা। যেমন এতে আপনার সঙ্গীর মনে দেখা দিতে পারে অমূলক সন্দেহ, আপনার সঙ্গীর বন্ধু আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে ইত্যাদি। এছাড়া নিজের গোপন কথা অনেক সময়ই বলে ফেলতে পারেন সেই বন্ধুকে। এতে হতে পারে মারাত্মক পর্যায়ের ভুল বোঝাবুঝি। মোটকথা, সঙ্গীর বন্ধুদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন।
মিথ্যা সন্দেহ ও জেরা করবেন না :
আপনার সঙ্গীর খোঁজখবর আপনি রাখতেই পারেন। যেমন সে কোথায় যাচ্ছে, কখন ফিরবে ইত্যাদি। কিন্তু সেটা যেন জেরার পর্যায়ে চলে না যায়। এটা তাঁর বিরক্তির উদ্রেক করবে। এতে তাঁর মনে হতে পারে যে, আপনি তাঁকে অবিশ্বাস করেন। আবার মিথ্যা সন্দেহ করাটাও কিন্তু সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। তাই কোনো ব্যাপারে সন্দেহ করার আগে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার আগে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
0 comments:
Post a Comment