আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী কে না হতে চায়। সহজ ভাষায়, ব্যক্তিত্ব হল আপনার চরিত্রের আপাত স্থায়ী বৈশিষ্ট্য। যেভাবে আপনি কথা বলেন, আচরণ, আবেগের প্রকাশ ঘটান ইত্যাদি। কিন্তু এই ব্যক্তিত্ব বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি আপনাকে অন্যদের কাছে তুলে ধরে এবং আপনাকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করে। আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছেন যাদের সাথে একবার মেশার পর তাদের ব্যক্তিত্বই তাদেরকে আমাদের কাছে স্মরণীয় করে রাখে। আড্ডায় বা অনুষ্ঠানে তাদের ঘিরেই থাকে জটলা। এতো সহজে তাদের আসরের মধ্যমনি হয়ে ওঠা দেখে হয়তো একটি বারের জন্যে আপনারও মনে হয়, ইশ! আমি যদি তার মত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারতাম! হতেই পারেন! চাই একটু অভ্যাস আর প্রচেষ্টা। আপনারই জন্যে রইলো কিছু টিপস-
প্ল্যান করে ফেলুনঃ
প্রথমেই প্ল্যান করে ফেলুন আপনি আপনার ব্যক্তিত্বে কি ধরনের পরিবর্তন আনতে চান। একেবারে খুঁটিনাটি সহ লিখে ফেলুন। যেমন- হতে পারে আপনি কথা বলার সময় খুব দ্রুত কথা বলেন, যার কারণে অনেক কথাই বোঝা যায় না। আবার বেশী হাত বা মাথা নেড়ে, চিৎকার করে কথা বলা, বিরক্তিকর কোন ভঙ্গী বা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা, একা একা থাকতে পছন্দ করা ইত্যাদি। এসব কিছুর প্রতিটি লিখে রাখুন পয়েন্ট আকারে। আর এ থেকে বের হবার জন্যে আপনার কি কি করা উচিৎ সেটাও পাশে লিখে ফেলুন।
কারো সাথে আলোচনা করুনঃ
কাছের কোন বন্ধু বা মা-বাবার সাথে আলোচনা করতে পারেন যে আপনার ব্যাক্তিত্বের কোন কোন বিষয়গুলো ভালো এবং কোন বিষয়গুলো পরিবর্তন করা দরকার। শুধু নিজের ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক দিকগুলোই খুঁজবেন না। ইতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কেও ধারনা রাখুন। সেগুলো যাতে হারিয়ে না যায়।
আমূল পরিবর্তন নয়ঃ
নিজেকে ১০০% পরিবর্তন করতে যাবেন না কখনোই! প্রতিটি মানুষেরই স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যে কারণে সে অন্যদের তুলনায় স্বতন্ত্রভাবেই সুন্দর। সুতরাং নিজের এই স্বকীয় দিকগুলো বিসর্জন দিতে যাবেন না ভুলেও! নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলা কোন কাজের কথা নয়!
নিজেকে লেবেলিং করবেন নাঃ
“আমি এমনই!”, “আমি এভাবেই কথা বলি!”, “আমি অগোছালোই!” এই ধরনের লেবেলিং করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। এটা আপনার ইতিবাচক পরিবর্তনকে বাধা দেবে। আপনি কি সেটা না ভেবে ভাল হয় আপনি কি হতে চান সেটা ভাবলে।
নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুনঃ
নেতিবাচক কোন চিন্তা মাথায় আশ্রয় দেবেন না। এগুলো আপনার ইতিবাচক ও সৃজনশীল পরিবর্তনকে বাধাগ্রস্থ করবে। বরং নিজের নতুন চরিত্রটি নিজে নিজে নিজে ভাবুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাক্টিস করুন। নতুন আর কি কি সংযোজন বিয়োজন করা যায় ভাবুন।
নতুন পরিবেশে যানঃ
নতুন পরিবেশে যান। নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশতে চেষ্টা করুন। তাদের সাথে আপনার নতুন আচরণগুলো চর্চা এবং রপ্ত করা সহজ হবে। কারণ, তারা আপনার আগের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানেন না।
দ্বৈত সত্ত্বা নয়ঃ
এটা ভুলেও করতে যাবেন না। জনসম্মুখে আপনি খুব ভদ্রজনোচিত আচরণ করলেন আর বাসায় ফিরে যদি খেতে বসে ঢেঁকুর তোলা, আওয়াজ করে খাওয়া, স্ল্যাং ব্যবহার করার মত কাজগুলো করেন তাহলে কিন্তু সেটা আর ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হল না। এভাবে আপনি কেবল অভিনেতা হতে পারবেন, ব্যক্তিত্ববান নয়!
লুকে আনুন পরিবর্তনঃ
পোষাক এক ধরনের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তাই আপনার পছন্দমত অন্যরকম কিছু পোষাক ট্রাই করতে পারেন। হেয়ারস্টাইলে আনতে পারেন পরিবর্তন। দেখবেন নতুন একটা লুক আপনার ব্যক্তিত্বে অন্যরকম একটা ছাপ ফেলার পাশাপাশি আপনার বাকি পরিবর্তনগুলো করতেও কেমন সাহস যোগাচ্ছে!
নিজেকে হ্যাঁ বলুনঃ
হ্যাঁ বলতে শিখুন। যদি আপনার মনে হয় একটা সমাবেশে বা মিটিং এ আপনি কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছেন। তবে ভুলেও এ চিন্তা মাথায় আসতে দেবেন না যে, আপনি এটি পারবেন না। দুটো কথা হলেও বলুন, জোর করে হলেও বলুন। তবে খেয়াল রাখুন, তা হতে হবে প্রাসঙ্গিক।
নিজেকে বদলাবার সময় দিনঃ
নিজের এতদিনের অভ্যস্থতার সাথে লড়াই করাটা এত সহজ নয়। আর এক রাতেই আপনি নিজেকে বদলে ফেলতে পারবেন না। তাই নিজেকে সময় দিন। একটা একটা করে নিজের অপছন্দের দিকগুলো পরিবর্তন করুন।
সময় বেঁধে নিনঃ
নিজের জন্যে একটা সময় বেঁধে নিন। হতে পারে তা এক বছর। এই এক বছরের ভেতরেই নিজেকে পরিবর্তনের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করুন।
প্রতিক্রিয়ার মোকাবেলা করুন দৃঢ়ভাবেঃ
প্রথম প্রথম আপনার এই পরিবর্তনে অনেকে টিটকিরি বা ঠাট্টা করতে পারে। এতে ক্ষেপে যাবেন না। বরং সবাইকে বোঝানোর সময়, সু্যোগ ও পরিস্থিতি না থাকলে ধৈর্য ধরুন।
নিজের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনুন আর চমকে দিন আশপাশের মানুষদের। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে হয়ে উঠুন অনেকের মাঝে অন্যতম!
0 comments:
Post a Comment