ভালোবাসার সম্পর্ক ইদানিং কেমন যেন ছেলেখেলা হয়ে গিয়েছে। আগের মত পবিত্রতা এখন অনেক সম্পর্কেই খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রতারনার জাল ভালোবাসার সম্পর্কের প্রবিত্রতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। কারণে অকারণে প্রতারনার আশ্রয় নেয়ার ঘটনা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
ভালোবাসার সম্পর্কে প্রতারনার প্রায় ৬০%ই হয় পুরুষের দিক হতে। গবেষকদের মতে যখন প্রথম ভালোবাসা অনুভূত হয় তখন মানুষের শরীরে একধরনের কেমিকেলের নিঃসরণ ঘটে। পরবর্তীতে যখন অন্য কাউকে দেখে একই ধরনের কেমিকেলের নিঃসরণ হয়, তখনই প্রতারনার আশ্রয় গ্রহন করে মানুষ। আর এই ঘটনাটি ছেলেদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এ তো গেল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুসারে ছেলেদের প্রতারনার কারণ। এছাড়াও আরও অন্যান্য আরও কারণ রয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক কারণ গুলো কী কী।
প্রেমিকা/স্ত্রীকে আর আকর্ষণীয় মনে না হলে
যেসব পুরুষরা প্রতারণা করেন তাদের বিশাল একটা অংশের অভিমত এই যে তারা আর সঙ্গিনীকে আগের মত আকর্ষণীয় মনে করেন না। ভালোবাসার শুরুতে যে আকর্ষণের জন্য তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, সেই আকর্ষণ হারিয়ে গেছে বলেও দাবী করেন অনেকে। কিন্তু প্রতারণা কেন? সম্পর্ক ভেঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়ালেই পারেন? কিন্তু এরও ব্যাখ্যা রয়েছে। গবেষকদের মতে, যারা নিজের প্রেমিকাকে আকর্ষণীয় মনে করেন না তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে না ফেলার পিছনে রয়েছে বন্ধুত্ব। প্রেমিকার সাথে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে তিনি বর্তমানে জড়িয়ে আছেন তা ঝেড়ে ফেলতে চান না। অথচ জীবনে নতুন আনন্দ চান। তাই প্রতারণার আশ্রয় নেন।
বর্তমান সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলার জন্য
মনোবিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৩৬ ভাগ পুরুষেরা নিজের বর্তমান সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলার জন্য প্রতারণাকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। সাধারন কোন মেয়ের পক্ষে তার একান্ত পুরুষের প্রতারণা মেনে নেয়া সম্ভব হয় না। আর তখনই ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে যায়।
কিন্তু কেন এই কাজটি করা হয়? মনোবিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে অনেকদিন ধরে চলা সম্পর্ক হতে অনেক পুরুষই মুক্তি পেতে চান, যদিও তার প্রেমিকার দিক হতে কোনোরূপ ভুলভ্রান্তি নেই। পুরুষরা জানান, যে সম্পর্ক ৮/৯ বছর ধরে বিদ্যমান সেই পুরনো সম্পর্ককে আরও কিছু দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। ভালোবাসার শুরুতে যে ধরনের অনুভুতি কাজ করতো তা এখন তারা অনুভব করতে পারেন না। এই ধরনের সম্পর্ক টেনে নিতে তারা আগ্রহী নন, অথচ সঙ্গিনীর কোন দোষও বের করতে পারছেন না। ফলশ্রুতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
আর্থিক কারণ
একটা বড় সংখ্যার পুরুষ আর্থিক কারণে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অনেক পুরুষই ধনী প্রেমিকা খোঁজেন। আর সেটা পাওয়ার জন্য বর্তমান প্রেমিকা/স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করতে একটুও দ্বিধা করেন না তারা। আবার দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ধনী সঙ্গিনীর সাথেও প্রতারণা করে থাকেন তারা। আর্থিক চাহিদা মিটে গেলেই অন্য চাহিদা পূরণের জন্য মনযোগী হন নানান দিকে।
দৈহিক সম্পর্কের জন্য
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটাই যে, পুরুষেরা দৈহিক সম্পর্কের জন্য প্রতারণার আশ্রয় নেন। বাড়তি শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য, সঙ্গিনীর শরীরের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেললে কিংবা যৌন জীবনে নিত্য নতুন আনন্দের স্বাদ পেতে নিজের সঙ্গিনীর সাথে প্রতারণা করেন। সঙ্গিনীর সাথে যখন দৈহিক সম্পর্ক পুরনো বা একঘেয়ে হয়ে যায়, তখনই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পুরুষেরা অন্য কারো শরণাপন্ন হন। মজার ব্যাপারটা হচ্ছে- অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুরুষটি তার সঙ্গিনীকে ভালোবাসেন, কিন্তু দৈহিক চাহিদার আগ্রহের জন্য প্রতারনা করেন।
এছাড়া অনেক পুরুষ এমনও আছে যারা বিভিন্ন নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহী থাকেন। তারা তাদের ভালোলাগা থেকেই এই কাজটি করেন। ভালোবাসার সম্পর্কে প্রতারনার ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক অনেক বড় ভূমিকা পালন করে পুরুষের ক্ষেত্রে।
প্রতিশোধ নেয়ার জন্য
মনোবিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ২০% পুরুষ পূর্ব সম্পর্কে প্রতারণা প্রতিশোধ হিসেবে বর্তমান প্রেমিকার সাথে প্রতারণা করেন। প্রতিশোধ প্রবন ছেলেরা প্রেমে ব্যর্থ হলে প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হন। দুর্বল সম্পর্কের এই আধুনিক যুগে প্রতারণার শিকার হওয়া নতুন কিছু নয়। যদি আগে কোন প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে তবে অনেকেই ব্যাপারটি মন থেকে মুছে ফেলতে পারেন না। তখন মেয়েদের প্রতি বিরূপ ধারনার সৃষ্টি হয়। প্রতিশোধ নেয়ার আত্মতৃপ্তি পাবার জন্য জেদের বসে সম্পর্কে জড়িয়ে সঙ্গিনীর সাথে প্রতারনা করতে দেখা যায় অনেককে, কারণ তাদের চোখে তখন সকল নারীই খারাপ।
পারিবারিক কারনে
শুনতে হাস্যকর মনে হলেও অনেক ছেলে পারিবারিক কারনে প্রতারণা করে থাকেন। অনেকে মনে করতে পারেন জেনেটিকাল ডিসঅর্ডার সম্পর্কে বলা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটি ঠিক জেনেটিক্সের পর্যায়ে পরে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে কিশোর বয়সে বাবা/মায়ের পরকীয়ার সাক্ষী হলে বর্তমান জীবনে সঙ্গিনীকে প্রতারণার হার বাড়ে। কেননা তাদের কাছে পরকীয়া বা প্রতারণাটা খুব সহজ আর স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যেসব দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তাদের সন্তানদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্কে প্রতারণার প্রবণতা অধিক।
0 comments:
Post a Comment