বিগত ৩ বছর একটি অফিসে কাজ করছেন সীমা(ছদ্মনাম)।
এখন সবাই যেনো তার খুব বেশি প্রিয়জন হয়ে উঠেছে। সবাই তার হয়ে উঠেছে যেনো আপনার জন। এই যেমন অফিস শেষে টুকটাক আড্ডা বা কোনো বিপদের সময় পাশে মেলে তাদেরকেই। আবার বাড়িতে কোনো উৎসব আয়োজনে ডাক পড়ে এসব সহকর্মীদের।
আবার অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায় আহাদ অফিসে কাজ শুরু করেছেন মাত্র কয়েক মাস। এর মধ্যেই বিরক্তির চূড়ান্ত সীমা ছুঁয়েছে অফিস। সবার সাথে কিছুতই মানিয়ে উঠতে পারছে না সে। কিন্তু অফিসের সময়টা কিছু বলতে পারে না বলে বাড়িতে ফিরেও মেজাজ থাকে খটোমটো। একটু সচেতন হলেই এসব সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়। নিজের একটু চেষ্টায় অচেনা অজানা লোকগুলোও হয়ে উঠবে অতীব আপন।
যাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করা হয় তাদেরই বলা হয় সহকর্মী। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের অনেকেরই কর্মক্ষেত্রেই কেটে যায় দিনের বেশির ভাগ সময়। পরিবারের সদস্যদের কাটানো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় সময়ের সঙ্গী হয়ে থাকেন সহকর্মীরা। কাজেই তাদের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সম্পর্ক ঠিক রাখতে হলে কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকাটা বেশি জরুরি।
*সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যবহারে এবং কাজের ক্ষেত্রে এক ধরনের ফর্মালিটি মেনে চলুন।
* কখনো কেউ সমস্যায় পড়তেই পারেন। আপনার বিপদে যেমন আপনি কাউকে পাশে চান। তেমন সহকর্মীর কোনো কাজে অসুবিধা হলে নিজে থেকে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান।
* একসাথে যেহেতু দীর্ঘসময় কাজ করতে হবে তাই যোগাযোগটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
* সহকর্মীর সাথে দেখা হলে একটা হাসি বদলে দিতে পারে সম্পর্কের মাত্রা। একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করুন। বিচ্ছিন্ন হয়ে না থেকে সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলুন। দেখবেন অফিসটা আরো ভালো লাগতে শুরু করেছে।
* শেয়ার করে কাজের অভ্যাস তৈরি করুন। দেখবেন সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়ে উঠবে।
* সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও একটু সচেতন থাকুন। গলার স্বর মার্জিত ও নমনীয় রাখুন।
* নিজের দায়িত্ব কখনোই অন্যের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। নিজের কাজ নিজেই করুন।
* কাজের স্বীকৃতি সবাই চাই। তাই কেউ ভালো কাজ করলে তাকে অভিনন্দন জানান।
* ভুল সবারই হতে পারে। আপনি নিশ্চয়ই সেসবের উর্দ্ধে নয়। তাই আপনার কাজে কোনো ভুল হলে অযথা তর্কে জড়াবেন না। বরং ক্ষমা চেয়ে নিন। দেখবেন সম্পর্ক আরো সুন্দর হয়ে উঠছে।
* অশালীন শব্দ আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্রে যথেষ্ট। তাই কখনোই অশালীন সম্পর্ক ব্যবহার করবেন না অফিসে। শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হোন।
* পরনিন্দা-পরচর্চার মতো বিষয় অফিসে খারাপ। তাই এসব এড়িয়ে চলাই ভালো।
* শুধু শুধু বিতর্কে জড়াবেন না। প্রয়োজনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করুন।
* কোনো সহকর্মীর সঙ্গে ঝগড়া না করে বরং ঠাণ্ডা মাথায় পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ঝামেলা মিটিয়ে
নিন।
* উত্তেজিত হয়ে কথা বলা ঠিক নয়। শান্ত মাথায় কথা বলুন সহকর্মীদের সাথে।
* পাশে বসা সহকর্মীটি কার সঙ্গে কথা বলছেন, কি এসএমএস করছেন অথবা কি কাজ করছেন, তা আড়ি পেতে দেখা বা শোনার চেষ্টা করবেন না কখনোই
* অফিসে বসে দীর্ঘ ফোনালাপ অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে একটু দুওে গিয়ে কথা বলুন বা আলোচনা সংক্ষিপ্ত করুন।
* একজনকে ধরে অনেকক্ষণ আড্ডা মারা বা কোনো সহকর্মীর কাজে বারবার বাধা দিয়ে গল্প করার প্রবণতা এড়িয়ে চলুন।
* কোনো সহকর্মীর প্রতি বিরূপ মনোভাব থাকলে অন্যদের সঙ্গে আলোচনার সময় সেকথা তুলে আনবেন না। এতে করে একসময় আপনাদের সম্পর্ক আরো নষ্ট হতে পারে।
* কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিপদে ফেলার চেষ্টা কিন্তু নিচু মানসিকতার প্রকাশ।
* অনেকেই যেকোনো সমস্যা হলেই বড় কর্তার কাছে গিয়ে নালিশ দেন। সেই প্রবণতা মোটেও ভালো নয়।
* কোনো সহকর্মীর ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ প্রকাশ করবেন না। নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করার সময়ও মাত্রা ছাড়াবেন না।
* নিজের ডেস্ক ও আশপাশ গোছালো রাখুন দেখবেন আপনার সম্পর্কে অন্যদের মনোভাব পাল্টে যাবে। অন্য কোনো সহকর্মীর সিটে বসলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে উঠে যাবেন না।
* অফিসে আজকাল অনেকেই সহকর্মীর অশালীন ব্যবহারের শিকার হন। সেক্ষেত্রে প্রথমে উপেক্ষা কওে তার সাথে একটু দুরত্ব তৈরী করুন। প্রয়োজনে আপনার বিশ্বস্ত কোনো সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনা কওে দেখতে পারেন। অথবা ওই ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে ভদ্রভাবে খোলাখুলি আলোচনা করুন। খুব বেশি অসুবিধা হলে অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।
* কর্মক্ষেত্রে বেতন এবং পদবীর পার্থক্য না করে সবাইকে মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করুন।
* দুপুরের ব্রেকে একা একা না খেয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে খান। দেখবেন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে।
* সহকর্মীদের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী নোট করে রাখুন, নির্দিষ্ট দিনে অভিনন্দন জানান। একটু সচেতনতা আপনাকে ভরিয়ে দেবে আরো ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্কে।
* একই অফিসে কাজ করতে গিয়ে সহকর্মীরা ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন। এই জাতীয় সম্পর্কে না জড়ানোই ক্যারিয়ারের জন্য ভালো। কেননা কোনো কারণে আপনাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে এক অফিসে দুজনের জন্যই কাজ সঠিক ভাবে চালিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।
অফিসের সহকর্মী জীবনে চলার পথে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। তাই তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠলে একটু একটু করে সুন্দর হয়ে উঠবে জীবন।
0 comments:
Post a Comment