গৌতম খাস্তগীর
এমনিতে খুব বেশি যে হয়, তা নয়। কিন্তু সমস্যা হল বেশ কিছুটা ছড়ানোর পর
হঠাৎ ধরা পড়ে ওভারিয়ান ক্যানসার। ফলে অনেক সময়ই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে
যায়। মেনোপজের পর এই ক্যানসার বেশি দেখা যায়। শুরুতে তেমন উপসর্গ দেখা যায়
না।
যাঁদের প্রথম দিকে ধরা পড়ে, তাঁদের বেশির ভাগেরই অন্য কোনও কারণে বা
তলপেটের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে গিয়ে ব্যাপারটা ধরা পড়ে। তখন হয়তো ওভারিতে
একটা লাম্প বা ডেলা দেখা গেল। এই ডেলাই বাড়তে বাড়তে তলপেটে ভারী লাগা,
বদহজমের সমস্যা তৈরি করে ফেলে। দেখা যায় কোষ্ঠবদ্ধতা। বার বার ইউরিনারি
ট্রাকে ইনফেকশন হয় (ইউটিআই)। যোনিদ্বার বা ভ্যাজাইনাতে ইনফ্লামেশন হতে
পারে।
ওভারিয়ান ক্যানসার প্রথমে তেমন ছড়ায় না। তার পর হঠাৎ করে তলপেটে জল জমতে
শুরু করে। ফুসফুস ও বুকে জল জমে হয় প্লুরাল ইফিউশন। ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা
দেয়। শরীরের ওজন কমে যায়। স্নায়ু বা হাড় পর্যন্ত ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে ব্যথা
শুরু হয়।
লাম্প মানেই ক্যানসার নয়
ডিম্বাশয়ে কোনও ডেলা দেখা দেওয়া মানেই তা ক্যানসার নয়। এদের বেশির ভাগই
বিনাইন হয়। আগে আমরা সিস্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। মেনোপজ হওয়ার পরও ওভারিতে
সিস্ট হতে পারে। তবে বয়ঃসন্ধির আগে যদি ডিম্বাশয়ে টিউমার দেখা যায়, তবে তা
বেশ উদ্বেগের। এ ক্ষেত্রে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে আগে ভাগেই দেখে নিতে হবে
ব্যাপারটা আসলে কী। এদের অনেকেই জার্ম সেল টিউমার হতে পারে।
ওভারিয়ান ক্যানসার খুব কম মহিলারই হয়। কিন্তু যেহেতু ওভারিয়ান ক্যানসার
অ্যাডভান্স স্টেজে গিয়ে ধরা পড়ে, তাই এতে মৃত্যুর হার খুব বেশি। আসলে যে
সময় ধরা পড়ে, তত ক্ষণে রোগ অনেকখানি ছড়িয়ে পড়ে। করার কিছু থাকে না। তাই
জেনে নিন কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
পরিবারে ওভারিয়ান ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আগেভাগেই সতর্ক হবেন।
অধিকাংশ স্তন ও ওভারিয়ান ক্যানসারের পেছনে রয়েছে বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২
জিন। যে কারণে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কিছু দিন আগে মাসটেকটমি করে স্তন বাদ দিয়ে
দিয়েছেন।
দেখা গেছে অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হলে বা অনেক বেশি বয়সে মেনোপজ হলে ওভারিয়ান ক্যানসারের প্রবণতা বেশি।
জীবনে কখনও গর্ভধারণ করেননি এমন মহিলাদেরও ঝুঁকি বেশি।
এন্ডোমেট্রোসিসেও ওভারিয়ান ক্যানসারের সম্ভাবনা বেশি।
কী করে বুঝবেন
ওভারিয়ান ক্যানসার ধরা পড়ার তিন মাস আগে চার ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
কিছু মহিলা পেটের ব্যথায় ভোগেন।
কিছু মহিলার পেট ফুলে যায়।
কারও অন্ত্রে সমস্যা হয়।
খুব কম সংখ্যক মহিলার তলপেট বা পেলভিসে যন্ত্রণা দেখা দেয়।
এ ছাড়াও মনে হতে পারে অল্প খেলেই পেট ভরে যাচ্ছে। বা খাওয়ার ইচ্ছেটা একেবারেই চলে যায়।
এ রকম সমস্যা মাসে অন্তত দিন দশেক থাকলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এ ছাড়াও মনে হতে পারে অল্প খেলেই পেট ভরে যাচ্ছে। বা খাওয়ার ইচ্ছেটা একেবারেই চলে যায়।
এ রকম সমস্যা মাসে অন্তত দিন দশেক থাকলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
কী ভাবে রোগ ধরা হয়
এখন ওভারিয়ান ক্যানসার নির্নয়ের জন্য ট্রান্স-ভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি
(টিভিএস) খুব কার্যকরী। ৯৬% ক্যানসার এতেই শনাক্ত করা যায়। কখনও বা ডপলার
স্টাডিও করতে হতে পারে।
আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করলে ওভারিতে ডেলার মতো কিছু দেখতে পাওয়া যেতে পারে।
আল্ট্রাসাউন্ড করে ডপলারের সাহায্যে যদি দেখা যায় ওভারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যাচ্ছে, তবে সতর্ক হতে হবে।
দেখা হয় রক্তের সি এ ১২৫-এর মাত্রা কত। ক্যানসার হলে এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকখানি বেশি হবে।
কী করা হয়
অল্প বয়সী মহিলার ডিম্বাশয়ে ক্যানসারের সম্ভাবনা দেখা দিলে তার ওভাম বা
ডিম্বাণুগুলো সংগ্রহ করে হিমায়িত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। পরে ক্যানসার
সামলে উঠলে সেই ডিম্বানু দিয়েই সন্তানের চেষ্টা করা হয়। এ রকম বহু বার
হয়েছে। অল্পবয়সী মেয়েদের ওভারিতে ক্যানসার হলে চেষ্টা করা হয় অন্য ওভারি বা
ইউটেরাসটি বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু এটা তখনই সম্ভব যদি ক্যানসার ওভারির
বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে। যাঁদের ফ্যামিলি কমপ্লিট হয়ে গেছে, বা বেশি বয়সীদের
ক্ষেত্রে ওভারি ও ইউটেরাস সবই বাদ দেওয়া হয়। এর সঙ্গে পেটের মধ্যের একটি
পর্দা যাকে ওমেন্টাম বলে, সেটিও বাদ দিতে হয়। অপারেশনের পর বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই কেমোথেরাপি এবং কখনও রেডিয়োথেরাপির প্রয়োজন হয়।
জেনে রাখুন
টিউবাল লাইগেশন হলে ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি কম।
বেশি দিন স্তন্য দান করলে ওভারিয়ান ক্যানসারের প্রবণতা কমে।
ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল নিলেও ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
প্রতিটি প্রেগন্যান্সিতে ১০% করে এর ঝুঁকি কমে। কিন্তু ৩ বারের বেশি প্রেগন্যান্সি হলে জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রবণতা বাড়বে।
0 comments:
Post a Comment