সুন্দর মুখশ্রী, সুন্দর ব্যক্তিত্ত্ব এসব কিছুই ছাপ ফেলে অন্যের মনে। সুগন্ধির ব্যবহার সেটাকে বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুন। কারণ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাঝে একটি যে আমাদের ঘ্রাণ শক্তি। তাই সুন্দর সৌরভের এত কদর করা হয়। সঠিক সুগন্ধির ব্যবহার যেমন আপনাকে দিতে পারে সঠিক "ইম্প্রেশন" সকলের সামনে, তেমনই আপনার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে পারে বহুগুণে। শুধু তাই নয়, আধুনিক জীবনযাত্রায় সুগন্ধির ব্যবহার এখন আর শুধু বিলাসিতা নয়, এর সঠিক ব্যবহার আমাদের দেহকে চাঙ্গা করে এবং মানসিক তৃপ্তি দেয়। সেই সাথে কাজেও আনে উদ্যামতা।
সুগন্ধি প্রাকৃতিক নানা ধরনের নির্যাস থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে। নানা ধরনের প্রাকৃতিক নির্যাস থেকে পাওয়া এসব সুগন্ধিরও আছে নানা প্রকারভেদ। সুগন্ধির মধ্যে আছে সজীব, ফুলেল, ওরিয়েন্টাল ও বিভিন্ন সুগন্ধযুক্ত কাঠ থেকে আহরণ করা সুগন্ধি। তার মাঝে সজীব এবং ফুলেল সৌরভ দিনের বেলা এবং গ্রীষ্ম ও বর্ষাস্নাত সময়ের জন্য একদম সঠিক। কাঠ এবং ওরিয়েন্টাল সুগন্ধিগুলো রাতের বেলার জন্য এবং শীতের সময়ে ব্যবহার করা উচিত। এসব সুগন্ধি সাধারণত সজীব এবং ফুলেল সুগন্ধযুক্ত সুগন্ধির থেকে কিছুটা কড়া হয়ে থাকে।
সুগন্ধি বা পারফিউমের ব্যবহারের চল পৃথিবীতে একদিনে তৈরি হয়নি। বহুকাল ধরে সুগন্ধির ব্যবহার চলে আসছে। সেই সুগন্ধির ধারা পরিবর্তিত হয়ে এখন চলছে বোতলজাত আধুনিক সুগন্ধিগুলো। পৃথিবীর বুকে প্রথম সুগন্ধির ব্যাবহার শুরু হয় প্রায় কয়েক হাজার বচর আগে। এই বিপুল সময় আগে থেকেই মানুষ সুগন্ধি ব্যবহার হয়ে আসছে। ধারণা করা হয় উনিশ শ’ শতকে আবির্ভাব ঘটে সুগন্ধির যদিও তখন সুগন্ধির ব্যবহার বনেদি পরিবারের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং সেই সুগন্ধিও ছিল ভিন্ন ধরনের। সেই সময় সিনথেটিক সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার হতো ফুলের নির্জাস থেকে প্রক্রিয়াজাত করে নিয়ে। এই সিনথেটিক সুগন্ধিকে পরে আরও প্রক্রিজাতয়াজাত করে আরও উন্নত করা হয়। বর্তমানে এই সিনথেটিক সুগন্ধি দ্বারা বডি স্প্রে তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এরাবিক দেশগুলোতে হাজার দেড় হাজার বছর আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা হত যার এক প্রকার এখনও আতর রূপে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। ভারতীয় উপমহাদেশে মূলত মোগল আমলে সুগন্ধির ব্যবহার ব্যাপক হারে শুরু হয়। সে সময় স্থানীয়ভাবে গোলাপ এবং সে জাতীয় ফুল থেকে প্রক্রিয়াজাত করে সুগন্ধি তৈরি শুরু করা হয়। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সুগন্ধির পরিবর্তন হয়েছে।
সুগন্ধির নানা রকমঃ
সুগন্ধি কত প্রকারে নির্ভর করছে তার মাত্রা ও বৈশিষ্ট্যের উপরে ভিত্তি করে। সুগন্ধির মাত্রা নির্ভর করে এর মূল উপাদান সুগন্ধি-তেলের পরিমাণের ওপর। এই সুগন্ধি-তেল সবচেয়ে কম থাকে আফটারশেভে আর সবচেয়ে বেশি থাকে খাঁটি সুগন্ধিতে। তবে সুগন্ধি বলতে আমরা যা বুঝি তাকে ভাগ করা জায় তিন ভাগে-
১. অ্যান্টি-পারস্পির্যান্ট :
এটি ঘাম প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেজন্যে এটি শুধু বগলেই ব্যবহার হয়ে থাকে।
২. ডিওডোরান্ট :
এই সুগন্ধিটি শারীরিক দুর্গন্ধকে দূর করতে সাহায্য করে। এটি সম্পূর্ণ দেহেই ব্যবহার করা যায়।
৩. কোলন :
এই সুগন্ধিটি গোসলের পর ব্যবহার করা হয়। এটি সারা শরীরে লাগাতে পারেন। এর কাজ হলো দেহের তাপ কমিয়ে দেহ ঠান্ডা রাখা। এটিকে পারফিউম হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়।
এছাড়াও আছে নারী পুরুষভদে নানা রকমের সুগন্ধির চল। আবার অনেন সুগন্ধি এমন আছে যা ব্যবহার করা যেতে পারে নারী পুরুষ নির্বিশেষে। যেমন-
১. নারীদের জন্য সুগন্ধিঃ
নারীরা সাধারণত ফুলেল ও সজীব সুগন্ধি ব্যাবহার করে থাকেন। তবে আজকাল আপেল, পীচ, চেরী ও কমলালেবুসহ অন্যান্য ফলের মিষ্টি সুবাসযুক্ত সজীব ও ফ্রুটি সুগন্ধিও মেয়েদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
২. পুরুষদের জন্য সুগন্ধিঃ
ছেলেদের জন্য উপযোগী হল কড়া ধরনের ফ্রেশ ও কাঠ-গন্ধী সুগন্ধি। দিনের বেলায়, কাজের সময় ব্যবহারের জন্য ফ্রেশ সুগন্ধিই ভাল হবে এবং রাতের জন্য বা বিশেষ কোন উপলক্ষ্যে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য কাঠ-গন্ধী সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন যে কোন ব্যাকটি।
সুগন্ধি, আতর, ঘ্রাণ, খুশবু, সেন্ট, পারফিউম- যে নামেই ডাকা হক না কেন আমাদের জীবনে এর ভূমিকা অতুলনীয়ও। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সুগন্ধি ব্যবহার করা এখন আর বিলাসিতা নয় প্রয়োজনের পর্যায়েই পড়ে।
0 comments:
Post a Comment