একটি এডাল্ট ওয়েব সাইটের শিরোনামে লেখা আছে
‘এ পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন লোক সাইটটি ভিজিট করেছে। এবং ৩০০ মিলিয়ন পিপল কান্ট
বি রং’। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অনেকেই এডাল্ট ওয়েব
সাইটকে ভুল বলছি, কিন্তু পৃথিবীব্যাপী মিলিয়ন মিলিয়ন লোক এগুলো ভিজিট করছে।
তাহলে কোন বাস্তবতাটার ভিত্তি বেশি শক্ত? আমি কিভাবে এতগুলো লোকের আগ্রহকে
ভুল বলব?
সবচেয়ে বড় কথা হল, যৌনতা একটি বাস্তবতা। এমন তো নয় যে যৌনতা মানব
সমাজে এক্সিস্ট করে না। শুধু যৌনতাই বা কেন, অশ্লীলতা বলছি যাকে সেটিও
সমাজে এক্সিস্ট করে। কারণ সেটি একটি রস। মানুষ নানা ধরনের রসে আগ্রহী, বীর
রস, করুন রস, হাস্য রস এবং এরকম অনেকগুলোর একটি হল আদি রস। মানুস সব রসই
কোন না কোনভাবে আস্বাদন করতে চায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ বিষয়টিকে
যত অবদমন করা যাবে তত সমাজের উদার সহনশীলতা ততই কমতে থাকবে। আপনি কতটা
উদার তা বোঝা যাবে কতটা জায়গা আপনি ছেড়ে দিতে পারছেন তার উপর।
ধরা যাক, আজকে সকল ধরনের অশ্লীলতা, পর্ণ ইত্যাদি বন্ধ করে দিলাম। তাহলে ঐ
হাজার হাজার আগ্রহী তরুণ তরুণী কোথায় যাবে? তারা কি তাদের আগ্রহ অবদমিত
করবে? আমি বলতে চাই, তারা দেখতে শিখুক। নগ্নতার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে
তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতে পারে। তারা সৌন্দর্য দেখতে
শিখবে। ফলে সে (পুরুষদের ক্ষেত্রে) নারী দেখা মাত্রই নির্বিচারে হামলে পড়বে
না, সকল নারীকে ‘শয়তানের আধার’ মনে করবে না। কোনো নারী তার শরীরের সুন্দর
অংশ দেখা যায় এমন পোষাক পড়লেই তাকে ধর্ষণ করা কর্তব্য জ্ঞান করবে না।
নারীকে নয়, নারীর দিকে ছুটে যেতে চাওয়া তার দূরন্ত চোখকেই সে অপরাধী ভাবতে
শিখবে।
একটু অন্যভাবে বলি, ইওরোপে বা পশ্চিমে একটি ছেলের আর একটি মেয়ের হাত
ধরাধরি করে হাঁটার দৃশ্যই সবচেয়ে স্বাভাবিক দৃশ্য, এমনকি কোনো কোনো দেশে
প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার দৃশ্যও অত্যন্ত স্বাভাবিক ও মনোরম। বরং একটি মেয়ে
আরেকটি মেয়ের অথবা একটি ছেলে আরেকটি ছেলের হাত ধরে বা গলাগলি ধরে হাঁটার
দৃশ্য অস্বাভাবিক এবং ভিন্ন অর্থ প্রকাশক। অথচ আমাদের দেশে একটি মেয়ে
আরেকটি মেয়ের এবং একটি ছেলে আরেকটি ছেলের হাত ধরতে শেখে, কারণ একটি মেয়ের
আরেকটি ছেলের সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাত ধরা আমাদের সমাজের চোখে খারাপ।
অথচ নারী-পুরুষ সম্পর্ক সহজ ও স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্য নিয়েই আজ থেকে
অনেক বছর আগে আমাদের সমাজেই রচিত হয়েছিল কামসূত্র। যা ইওরোপীয় বা পশ্চিমারা
এখান থেকে আমদানী করে নিয়ে গেছে সাদরে। আর আমরা সেটা দূর দূর করে
তাড়িয়েছি। ‘অশ্লীল’ বলেছি, ‘কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য’ আখ্যা দিয়ে
নিষিদ্ধ করে রেখেছি। ফলে সমাজে অবদমন সৃষ্টি হয়েছে, ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি
হয়েছে। এগুলো আমরা নিষিদ্ধ করেছি বলেই একটি ছেলে আর একটি মেয়ে পরষ্পরকে
ভালবেসে চোরের মতো আচরণ করতে থাকে। বাবা-মার কাছে লুকানোর নিরন্তর চেষ্টা
করতে থাকে। পালিয়ে বিয়ে করে। ধরা পড়লে ছেলেটির শাস্তি যাই হোক মেয়েটির
মাথায় কলঙ্কের আকাশ ভেঙে পড়ে, তার আর কোথাও গ্রহণযোগ্যতা থাকে না, মেয়ের
পরিবার একঘরে হয়ে পড়ে।
অশ্লীলতার সাথে নারী-পুরুষ সম্পর্ক টেনে আনছি, কারণ একটির সাথে আরেকটি
সম্পর্ক রয়েছে। প্রেম কেবলই প্রেম নয়, প্রেমের সাথে কাম অত্যন্ত
সঙ্গতিপূর্ণ। আর কাম সৌন্দর্যের উপাসক। অবশ্যই দৈহিক সৌন্দর্য। যাকে আমরা
প্রায়শই ‘অশ্লীল’, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ ইত্যাদি নানা আখ্যা দিয়ে থাকি।
প্রকৃতপক্ষে অশ্লীলতার কোন সংজ্ঞা নেই। এটি অত্যন্ত আপেক্ষিক বিষয়। যে
ছবি এক স্থানে অত্যন্ত মনোরম, সেই ছবিটিই অন্যস্থানে অত্যন্ত অশ্লীল হতে
পারে। কাজেই অশ্লীল বলে কোন অ্যাবসল্যুট ধারণা নেই। অনেকেই সংজ্ঞা দিতে
গিয়ে বলেছেন, ‘যা মনকে কলুষিত করে তাই অশ্লীল’। আপনিই বলুন কোনটি আপনার
মনকে কলুষিত করে।
আমরা প্রায়ই যৌনতাকে অশ্লীলতার সাথে গুলিয়ে ফেলি। আমাদের ভেতরে সাধারণ
অর্থে ‘যৌনতা নিষিদ্ধ’ এমন একটি চেতনা গভীর-প্রোথিত। এ কারণেই দশম
শ্রেণীর বিজ্ঞান বইতেও মানুষের প্রজননতন্ত্র বোঝাতে গিয়ে গরু দিয়ে বোঝানোর
চেষ্টা করা হয়েছে (অবশ্য এটি এখনও সেভাবেই আছে কি না আমার জানা নেই)।
কামসূত্রে কামের ৬৪টি কলা বা আসনের বিবরণ আছে। কিন্তু অনেকেই আমাকে
বলেছে সেগুলো নাকি বিকৃত যৌনাচার। আমার কাছে মনে হয়েছে রীতিমতো শিল্প।
যাদের কাছে বিকৃত মনে হয়েছে তারা যৌনতা মানেই মনে করেন কেবলই নারীর উপর
পুরুষের উপগত হওয়া। যৌনতার আরো ধরন, কামের নানা প্রকাশ যে রয়েছে তা তারা
জানেনই না।
স্বাধীনবাংলা24 ডট কম/০৩.১২.২০১৩ /হিমু নীল
0 comments:
Post a Comment