নারী...
কখনো জননী, কখনো জায়া, কখনো কন্যা, কখনো ভগ্নী! জীবনটা যদি হয় রঙ্গমঞ্চ, একজন নারীকে অভিনয় করতে হয় নানান ধরনের চরিত্রে। প্রতিটি চরিত্রেই নারী তার ভূমিকা পালন করে থাকে সুনিপুণভাবে। কটু শোনালেও এটাই সত্য যে- আমরা, তার আশেপাশের মানুষরাই অনবরত বাধা দিতে থাকি তাকে, যাতে সে তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করতে পারে, এগিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু আমাদের একটুখানি সহযোগিতা, সহনশীলতা একজন নারীকে করে তুলতে পারে আত্মপ্রত্যয়ী।
আপনার মা, আপনার সমস্ত বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখেন। আপনার চাওয়া, দাবী-দাওয়া, আবদার সবই থাকে তাঁর কাছে। আপনার সব চাহিদা পূরণ করতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যান। কিন্তু কখনো কি জানতে চেয়েছেন, তিনি কী চান আপনার কাছ থেকে? কিছুই না, চান শুধু আপনার মঙ্গল। হয়তো আপনি খুব ব্যস্ত তবুও মা'র জন্য আলাদা করে সময় বের করুন। দিনের কিছুটা সময় মা'র সাথে কাটান, ছোট ছোট কাজে তাকে সাহায্য করুন। দেখবেন, সে তাতেই খুশী! সম্ভব হলে মা'র বিশেষ দিনগুলোতে তাকে শুভেচ্ছা জানান, ছোটখাট উপহার দিন। সন্তানের সামান্য মনোযোগই মাকে দিতে পারে আত্মতৃপ্তি। যে মানুষটি আপনাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে এত কষ্ট করেছেন, তার জন্য তো আপনি এতটুকু করতেই পারেন, তাই না?
একজন নারী তার আজন্ম পরিতিচ জগত ছেড়ে চলে আসে একজন পুরুষের কাছে স্ত্রী হিসেবে। সমাজের নিয়মে মা, বাবা, ভাই, বোনকে ছেড়ে গড়তে হয় নতুন জগত। আপনার স্ত্রীকে আপনি সহধর্মিনী হিসেবে মূল্যায়ন করেন হয়তো, কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, সেও কারো কন্যা, কারো বোন। সেসব সম্পর্কের প্রতিও তার কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। তাকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বাধা না দিয়ে বরং তাকে সহযোগিতা করুন। দেখবেন, তার ভালবাসার পাশাপাশি আপনি পাবেন তার শ্রদ্ধা। অনেকেই ভাবেন, স্ত্রীর সাথে তো দিনের অনেকটা সময়ই কাটাই, আলাদা করে সময় বের করার কী দরকার! এই আলাদা করে বের করা সময় আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার স্ত্রীর আরো কাছাকাছি। তাকে সময় দিন, আপনার প্রতি তার আস্থা বাড়বে। বিশেষ দিনগুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন। তাকে এই অনুভূতি অনুভব করান যে, আপনি তার সবচেয়ে কাছের মানুষ। কারণ, একজন নারী তখনই 'নারী' হয়ে ওঠে যখন সে তার পুরুষসঙ্গীর সহযোগিতা পায়।
পরিবারে কন্যাশিশু জন্মানো মাত্র মা-বাবার মনে প্রথমে যে কথাটি আসে তা হলো, মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। তখন থেকেই শুরু হয় মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি। সবই করা হয় মেয়ের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। কিন্তু মেয়ে তো নিরাপত্তার পাশাপাশি আরেকটা জিনিস চায়, সেটা হলো ভরসা! জীবনে সে এগিয়ে যেতে পারবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, একজন সুযোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে - এই আস্থা তার ওপর তার মা-বাবা এটা সব মেয়েই চায়। কিন্তু আমাদের সমাজে মেয়েকে এখনো বোঝা হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই তাদের প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে খুব কম অভিভাবকই মনোযোগ দেন। আপনার মেয়েকে বোঝার চেষ্টা করুন। তার জীবনের লক্ষ্য কী জানার চেষ্টা করুন। তাকে সহযোগিতা করুন, এগিয়ে যেতে সাহায্য করুন। সে ভুল করলে ধৈর্য ধরে তাকে বোঝান, তার প্রতি সহনশীল হোন। দেখবেন, এই মেয়েই একদিন আপনার মুখ উজ্জ্বল করবে।
বোন হচ্ছে এমন একজন মানুষ যে আপনার বন্ধুর অভাব পূরণ করে। বড় বোন যেমন স্নেহের আধার, তেমনি ছোট বোন খেলার সাথী। বড় বোন অনেক ক্ষেত্রেই মায়ের ভূমিকা পালন করে। যেই বোনেরা আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে, তাদের আমরা বিয়ের পর দূরে ঠেলে দেই। বোনের খোঁজখবর করুন নিয়মিত। তার শূন্যতা অনুভব করেন - এটা জানান তাকে। দেখবেন, বোন কত খুশী হয়! ছোট বোনের খেয়াল রাখুন। আগলে রাখার পাশাপাশি তাকে বোঝার চেষ্টা করুন, জানার চেষ্টা করুন সে কী করতে চায় জীবনে। তার পড়ালেখা, ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করুন। এতে আপনাদের সম্পর্ক হবে আরো দৃঢ়, আরো মজবুত।
নারীদের থেকেই নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। তাই নারীকে অসম্মান করলে নিজের অস্তিত্বকেই অসম্মান করা হয়। একজন নারী, তিনি যে সম্পর্কেই যুক্ত থাকুন না কেন আপনার সাথে, তাকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দিন।
0 comments:
Post a Comment