ইন্টারনেট আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজধানীতে দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। ওয়েবসাইট খুলে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। মাদক বিক্রি ও প্রতারণারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেহ ব্যবসা চালাতে ইন্টারনেটে খোলা হয়েছে একাধিক ওয়েবসাইট। সেখানে দেহ পসারিনীদের নগ্ন ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য ও ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। এসব ওয়েবসাইটের ব্যাপক প্রচারণার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাঙালি মেয়েদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে।
তবে দেহব্যবসা ছাড়াও এই চক্রটি ইয়াবা, মদ, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন নেশা সামগ্রীও সরবরাহ করে থাকে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। হাতের নাগালে থাকলেও এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। মাদক, বিশেষ করে ইয়াবার টাকা সংগ্রহ করতেই সমাজের অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরাও এতে জড়িয়ে পড়ছে। সাময়িক আনন্দলাভের জন্য উশৃঙ্খল কিছু মেয়েও এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও, সেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা বাণিজ্যও চালিয়ে যাচ্ছে এসব ওয়েবসাইট নির্মানকারী কুচক্রী মহল। সমাজের শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত মেয়েরাও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে সূত্র।
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহারের সুবিধা নিতে একাধিক ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে রেখেছে দেহব্যবসায়ী চক্রটি। এসব ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ যৌন-উদ্দীপক ভিডিও ক্লিপ্সও ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। এসব ভিডিওগুলো (এস্কর্ট-১, এস্কর্ট -২, এস্কর্ট-৩, এইচডি, বংপড়ৎঃ-১ ঐউ এমন) সিরিয়ালে ১০ থেকে ১২ পর্যন্ত দেওয়া রয়েছে। তবে এস্কর্ট শব্দের আর্থিক প্রতিশব্দ ‘সহচর’ বা 'সশস্ত্র সঙ্গী’ হলেও এসব সহচর হচ্ছে মূলত দেহব্যবসায়ী। তবে 'সহচর' দেওয়ার নাম করে চলছে ব্যাপক প্রতারণা। এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু লজ্জায় কেউ মুখও খুলতে পারছেন না।
এদিকে, রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় “মেঘলা গ্রুপ” নামে একটি চক্র দেহ ব্যবসা, মাদক বিক্রি, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোবাইল ফোনেই চলছে তাদের কার্যক্রম। এছাড়াও, রাজধানীর ফার্মগেট এলার্কা “দুই জেনারেশন গার্লস্” নামে একটি দেহ ব্যাবসায়ীদের সংগঠনও চালিয়ে যাচ্ছে গণপ্রতারণা। ফার্মগেটের অল্প-শিক্ষিত এই শ্রেণীর দেহপসারিনীদেরও কার্যক্রম চলছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই।
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, যেসব ওয়েবলিংকের মাধ্যমে এই অপরাধী চক্র অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব ছাড়াও রয়েছে আরো একাধিক ওয়েবসাইট। এসব ওয়েবসাইটে যোগাযোগের বিভিন্ন ফোন নম্বর, নগ্ন নারীর ছবি এবং নগ্ন ভিডিওসহ প্রতিজনের সময় হিসেবে দর-দামও উল্লেখ রয়েছে। এসব ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরে পাঁচ থেকে সাত জন মেয়ের একটি গ্রুপ মেঘলার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এই সংঘবদ্ধ গ্রুপটি প্রতারণা, অর্থ-আত্মসাৎ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা 'মালদার পার্টি' দেখে ফোনে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা চালিয়ে যায়। সম্পর্ক গভীর হলে শারীরিক সম্পর্কসহ অন্যান্য প্রলোভন বিয়ে ও বাসায় নিয়ে আটকে রাথাসহ বিভিন্নভাবে তাদের ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে। তাদের নেপথ্যে একটি শক্তিধর হাত জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। ফার্মগেট এলাকাতেও চলছে একই রকম ঘটনা। প্রতিরাতেই ছিনতাই হচ্ছে পথচারীদের টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সাংবাদিক, সময় টেলিভিশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও গবেষক ফেরদৌস আরেফিন বলেন, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটে যৌথভাবে কাজগুলো হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশি হচ্ছে প্রতারণা। ওয়েব এড্রেস এবং তাতে মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া থাকলেও প্রশাসন কোন অ্যাকশন নিচ্ছে না। আমাদের দেশের পুলিশ বা ডিবি স্ব-প্রনোদিত হয়ে কিছু করতে পারে না। তাদের অভিযোগ দিতে হয়। অনেকে প্রতারিত হয়ে লজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও নারাজ বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এন্টিসাইবার ক্রাইম টিমের সহকারী কমিশনার (সিনিয়র এসি) আসাদুজ্জামান বলেন, আগে বিষয়টি অনেক সীমিত পরিসরে ছিল। এখন তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সাইবার ক্রাইম বিশ্বব্যাপী একটি বিষয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, দেশের বাইরে বা আমেরিকায় বসে আমাদের দেশের ছবি বা ভিডিও তারা অপলোড করছে। সেক্ষেত্রে কিছু করার নেই। তবে আমাদের সাইবার ক্রাইম টিম কাজ করছে। এ ধরনের আরো বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। আমরা খুঁজে খুঁজে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সূত্র: ওয়েবসাইট
Monir
ReplyDeleteMonir
ReplyDelete