কোনো দম্পতিকে দেখে যদি মনে হয় তারা ‘মেড ফর ইচ আদার’, তবে বুঝতে হবে বিয়ে বা প্রেমের ক্ষেত্রে দুটি আবশ্যিক চাহিদা পূরণে তারা পুরোপুরি সক্ষম হয়েছেন। সে জন্যই সবার চোখে তারা হয়ে উঠতে পেরেছেন আদর্শ দম্পতি। সম্পর্কটি টিকেও গেছে ওই একই কারণে। দুজনের মধ্যে মনের মিল খুঁজে পাওয়া ইত্যাদি তথ্য খোঁজা শুধু গাঁজাখুরি! বহু গবেষণার পর এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছে ‘জার্নাল অব পার্সোন্যালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকোলজি।’
গবেষকদের দাবি, আদর্শ দম্পতি হতে গেলে দুটি বিষয় অবশ্য লক্ষণীয়। পুরুষদের চোখে সঙ্গিনীর দৈহিক সৌন্দর্য আবশ্যিক চাহিদা। তা তিনি যত বড় গুণের অধিকারিণীই হন না কেন। অতি বড় বিদূষীর ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য। উলটো দিকে, মহিলারা সঙ্গীটির দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে তেমন চিন্তিন নন। তাদের দেখার বিষয় হলো, পুরুষটি কতখানি অর্থ উপার্জনে সক্ষম, তার স্টেটাস সিম্বল বা সামাজিক অবস্থান কী- ইত্যাদি।
প্রথম শুনলে মনে হতে পারে, এ আর এমন কী? এ তো সবাই জানে! কিন্তু এই প্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে, নারীর ঝোঁক অর্থ আর প্রতিপত্তির দিকে, পুরুষ যেখানে সৌন্দর্যের পূজারি। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এই চিরাচরিত তথ্য খারিজ করে দিয়ে বলা হতো, কোনো প্রেম বা বৈবাহিক সম্পর্কে সাফল্যের ভিত্তি দুজনের মধ্যে সমীকরণের মিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই তথ্য একেবারেই ঠিক নয়।
এ বিষয়ে সাম্প্রতিক গবেষণাটি চালিয়েছেন সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক নর্ম্যান লি এবং অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক অলিভার স্ন্যাগ। এ জন্য তারা সাহায্য নিয়েছেন বিভিন্ন অনলাইন চ্যাটিং সাইট ও স্পিড-ডেটিংয়ের। পরীক্ষার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই বেছে নেওয়া হয়েছিল এমন সব মেয়েদের, যাদের চেহারা অত্যন্ত সাধারণ। যে সব পুরুষকে বাছা হয়েছিল, তাদেরও সামাজিক অবস্থান তত সুদৃঢ় নয় বা প্রতিপত্তি নেই সে অর্থে। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায়, পুরুষরা সঙ্গিনীদের চেহারা প্রত্যক্ষ করার পরই সম্পর্কে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। নারীরাও, অপর দিকে, একইভাবে সে সব পুরুষকে প্রত্যাখ্যান করেছেন যাদের সামাজিক অবস্থান তত সুদৃঢ় নয়।
অধ্যাপক লি জানিয়েছেন, এই গবেষণায় সাফল্য এসেছে খুব সহজেই, কারণ এ সব পুরুষ ও নারী তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে ফেলেছেন চ্যাটরুমের ওয়ালেই। কাজেই কার কোন দিকে ঝোঁক বেশি, তা সহজেই ধরা সম্ভব হয়েছে। লি জানিয়েছেন, মহিলাদের দেখা গেছে সমাজে খুব উচ্চস্তরের বাসিন্দা না হলেও, মাঝামাঝি স্টেটাস সিম্বল যারা ধরে রাখতে সক্ষম, সে সব পুরুষকেই মহিলারা বেশি পছন্দ করছেন। অপরদিকে, পুরুষদের ঝোঁক সুন্দরী সঙ্গিনীর দিকে। অপরূপা না হলেও, অন্তত মাঝামাঝি চেহারার!
তবে লি যাই বলুন, লিঙ্গবৈষম্যমুক্ত পৃথিবীর জন্য মোটেই আদর্শ নয় এই গবেষণা। কলেজ অব লিবারাল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের অধ্যাপক কেনরিক দাবি করেছেন, এই গবেষণা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক হলেও, বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে তা কোনো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারবে না, বরং লিঙ্গের ভেদাভেদ আরও বাড়িয়ে তুলবে। কেনরিকের মতে, পুরুষ ও নারী আসলে নিজেদের মনের মতো সঙ্গী বা সঙ্গিনী চান। কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের ঝোঁক কোনো বিশেষ দিকেই বেশি, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই।
0 comments:
Post a Comment