সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো ঘুম সবারই দরকার
আর এটা আমরা সবাই জানি বটে, কিন্তু ভালো ঘুম সবার কপালে জোটে না। কারণ যাই
হোক, দেখা যায় রাতের পর রাত দু-চোখের পাতা এক করতে পারেন না অনেকেই।
প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকার পরেও ঘুমের খোঁজ পাওয়া যায় না। অনেকের ঘুম হয় ছাড়া
ছাড়া, রাতভর ঘুমালেও শরীরে অবসাদ থেকেই যায়। শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়ে
প্রশান্তি এলে তবেই মানুষের ভালো ঘুম হয়। দেখে নিন শান্তির ঘুম হবার জন্য
এক গুচ্ছ কৌশল।
১) ঘুমাতে যাবার জন্য অ্যালার্ম সেট করুন,
ঘুম থেকে ওঠার জন্য নয়। নিয়মিত ঠিক সময় না ঘুমানোর জন্যই পরে ঘুমের সমস্যা
হয়। অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন আর সেই অ্যালার্ম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ে
ঘুমাতে যান প্রতিদিন। নির্দিষ্ট সময়ে উঠুন, ছুটির দিনেও এই নিয়মের
ব্যতিক্রম করবেন না।
২) অ্যালার্মের স্নুজ বাটন বারবার চেপে
ধরবেন না। অনেকেই এই স্নুজ বাটন চেপে ধরে আরও ১০ মিনিট বেশি ঘুমানোর চেষ্টা
করেন। এতে যেমন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় তেমনি শরীরটাও ম্যাজম্যাজ করে। কারণ
এমন ছাড়া ছাড়া ৫-১০ মিনিটের ঘুম শরীরের কাজে লাগে না, বরং মাথাব্যাথা তৈরি
হবার আশঙ্কা থাকে। ভোরে অ্যালার্ম দিয়ে বারবার স্নুজ চাপার চাইতে একটু
দেরিতেই অ্যালার্ম সেট করুন। ঘুম ভালো হবে।
৩) বেডরুম রাখুন অন্ধকার। বেডরুমে একটা ডিজিটাল ঘড়ি বা অন্য কোনো আলোর উৎস থাকলে তা ঘুমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত করে।
৪) বেডরুম রাখুন ঠাণ্ডা। তাই বলে খুব বেশি ঠাণ্ডা না কিন্তু। ৬০-৬৭ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মধ্যে থাকাটাই ঘুমের জন্য ভালো।
৫) ঘুমের এক ঘণ্টা আগে সব ইলেকট্রনিক
ডিভাইস বন্ধ করে দিন। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, টিভি এ জাতীয় সবকিছু। চেষ্টা
করুন এসব ডিভাইস বেডরুমের বাইরে রাখতে। এগুলো আমাদের ঘুমের প্রক্রিয়া
বিলম্বিত করে।
৬) বিকালের পর চা-কফি জাতীয় পানীয় খাবেন না। এগুলো অনেকক্ষণ আমাদের রক্তে থেকে আমাদের ঘুম তাড়িয়ে দিতে থাকে।
৭) নিয়মিত ব্যায়াম করুন। বেশি না, দিনে
মাত্র কয়েক মিনিট ব্যায়াম করলেই দেখবেন আপনার কতো ভালো ঘুম হচ্ছে। তবে
ঘুমানোর ঠিক আগে ব্যায়াম করবেন না। চেষ্টা করুন ঘুমাতে যাবার কয়েক ঘণ্টা
আগেই সব ব্যায়াম সেরে ফেলতে।
৮) রাত বেশি হয়ে গেলে ভারী খাবার খাবেন
না। বিকালের পর থেকে আমাদের হজমের ক্ষমতা কমতে থাকে। এ কারণে ঘুমানোর আগে
ভারী খাবার খেলে শরীর ঘুমাতে চায় না। বিশেষ করে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি রাত
করে খাওয়া উচিৎ নয়। কিছু যদি খেতেই হয় তবে হালকা খাবার খান।
৯) বেডরুমের রঙ রাখুন হালকা, এমন রঙ যা
চোখকে শান্তি দেয়। কটকটে উজ্জ্বল, চকচকে এবং গাড় রঙের দেয়ালের ঘরে ঘুমাতে
আপনার সমস্যা হতেই পারে।
১০) বিছানায় এমন কাজ করবেন না যা অন্য
কোথাও করা যায়। অফিসের কাজ, পড়াশোনা, গল্পের বই পড়া, খাওয়া এসব কাজ বিছানায়
করলে সহজে ঘুম আসতে চাইবে না।
১১) বেডরুম রাখুন নিরিবিলি। সেই ঘরে কোনো
ঘড়ির টিকটিক শব্দ যদি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় তবে তা ঘরের বাইরে রেখে আসুন। রাতে
ফোন বাজলে ঘুম ভেঙে যাবে, তাই তাকেও বাইরে রেখে আসতে পারেন। তবে একেবারে
নীরব ঘরে ঘুম নাও হতে পারে। তাই ফ্যান চালিয়ে রাখতে পারে। এর একঘেয়ে শব্দে
ঘুম ভালো হবে।
১২) পোষা প্রাণী নিয়ে ঘুমাবেন না। অনেকে
বেড়াল, কুকুর, খরগোশ এসব পোষেন এবং এদের কোলে নিয়ে ঘুমাতে ভালোবাসেন।
কিন্তু এরা নড়াচড়া করলে বা শব্দ করলে আপনার ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
শুধু তাই নয়, এদের থেকে হতে পারে অ্যালার্জি।
১৩) বিছানার দিকে লক্ষ্য করুন। বিশ্বাস
করুন আর নাই করুন, আপনি কিসের অপর ঘুমাচ্ছেন তার ওপরে ঘুম অনেকটাই নির্ভর
করে। বিছানার তোষক যথেষ্ট নরম না, অথবা বেশি নরম, উচুনিচু- এসব কারণে আপনার
ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে। প্রতি ৫-১০ বছর পর পর তোষক পরিবর্তন করুন। নিজের
বালিশটাকেও যত্নে রাখুন, এর মাঝে এক ধরণের অতিক্ষুদ্র পোকা হয় যার কারণে
আপনার ঘুমে সমস্যা হতে পারে। বালিশ পরিষ্কার রাখুন, নিয়মিত রৌদ্রে দিন এবং
বেশি পুরনো বালিশ পাল্টে ফেলুন।
১৪) দিনের বেলায় কম ঘুমান। ঘুমালেও সেই ঘুম যেন আধা ঘণ্টার বেশি না হয়। বিকেলের আগেই এই ঘুম সেরে ফেলুন।
১৫) শয্যাসঙ্গী থাকলে আলাদা কম্বল/কাঁথা ব্যবহার করুন। আপনার সঙ্গী রাতের বেলায় কাঁথা নিয়ে টানাটানি করলে আপনার ঘুম উবে যাবে।
১৬) শরীর এবং মন শান্ত করুন করুন ঘুমানোর আগে। এর জন্য অনেক উপায় আছে, যেমন-
- যোগব্যায়াম
- হালকা গরম পানিতে গোসল
- প্রার্থনা
- অ্যারোমাথেরাপি
- জার্নাল লেখা
- যোগব্যায়াম
- হালকা গরম পানিতে গোসল
- প্রার্থনা
- অ্যারোমাথেরাপি
- জার্নাল লেখা
১৭) ধূমপান ছেড়ে দিন। ধূমপান হলো ক্যাফেইনের মতো, শরীর উত্তেজিত করে রাখে এবং ঘুম আসতে দেয় না।
১৮) ঘুম যদি না আসে তবে বিছানায় শুয়ে না থেকে উঠে পড়ুন। অন্য কোনো কাজ করুন যতক্ষণ না ঘুম আসে।
১৯) সকালে সূর্যের আলো শরীরে লাগতে দিন। এটা আপনার মস্তিষ্ককে সতেজ করে তুলবে এবং আপনার দেহঘড়িকে ঠিক রাখবে। ফলে ঘুম হবে নিয়মিত।
২০) এতো কিছুর পরেও যদি ঘুমে সমস্যা হতে
থাকে, তবে শারীরিক কোনো জটিলতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। ঘুম
না হওয়ার মাত্রা যদি গুরুতর হয় তবে পেশাদার থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে হতে
পারে আপনার।
0 comments:
Post a Comment