পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে, তুমি সেলফি নিয়েই থাকো ।


২০১৫ সাল পর্যন্ত ৭৬ টির বেশি প্রজাতির প্রাণী এবং কয়েকশ প্রজাতির গাছপালা আমাদের পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর বিনিময়ে আমাদের অথনৈতিক উন্নতি হয়েছে। আর এই উন্নতির এর পরিনামে বাতাসে প্রতিবছর ২০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিবছর ৬০ হেক্ট্রর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে বালুকাকীর্ণ হয়ে পড়ছে ৪ হেক্ট্রর উর্বর ভূমি। আর এই জন্যই স্টিফেন হকিংস বলেছেন, “প্রযুক্তির উন্নয়েনের কারণেই এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তুমি এখনও মুখে রং মেখে সেলফিই তুলে যাচ্ছো?

বিশ্বাস করো, বিশ্বের সর্বাধিক বায়ু দূষিত ১৫টি শহরের ১৩টি হলো এশিয়ায়। এই দূষণ এশিয়ায় বছরে ১০ লাখ লোকের মৃত্যুর কারণ। অথচ আমরা সর্বদাই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবদ্ধির জন্য নিবেদিত। কিন্তু উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু পরিবেশকে পাশ কাটিয়ে পরিবেশের উপর একছত্রভাবে জুলুম করে পক্ষান্তরে উন্নয়নের চাকাটির চলার পথই রুদ্ধ করছি। এ ভুলের মাসুল একদিন এই পৃথিবীর মানুষগুলোকে দিতে হবে ।

পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির পিছনে বহুলাংশে দায়ী কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ প্রাক্-শিল্পযুগ সময়ের (১৭৫০ সাল) থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ১০০ ppmv (parts per million by volume) বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে বিগত ৩০-৪০ বছরেই প্রায় ৫০ppmv বৃদ্ধি পেয়েছে। সভ্যতা বিকাশের জন্য আমরা বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর, যা প্রচুর পরিমাণেকার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। আবার দ্রুতহারে বন-ধ্বংস ও ভূমিবিন্যাসের পরিবর্তন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, কারণ উদ্ভিদ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঞ্চয় ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বন ধ্বংসের ফলে সেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমন্ডলে মুক্ত অবস্থায় থাকে। তাই আপনার সন্তানকে একটা নির্মল সুন্দর আগামী উপহার দিতে, গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই ।

বিজ্ঞান বলে, একটি দেশে ২৫% বনভূমি থাকা দরকার । কিন্তু সেখানে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৬%। তাই এখনই সময়, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আরো কিছু গাছ লাগান । কিংবা হোক সেটা ভাড়া বাসা, সুযোগ থাকলে বাসার ছাদে, বেলকুনীতে গাছ লাগান, যা আপনাকে নির্মল বাতাস, মন খারাপের সঙ্গী এবং আপনার সঙ্গীর সাথে কাটানো সময়গুলোতে বাড়তি রোমান্টিকতা জোগাবে ।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক মনে করছে, “ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ১০০ বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধান উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে । বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে ফল ও ফুলের রেণু, মাছের ডিম ও পোনা নষ্ট হচ্ছে। এতে শস্য ও ফল আগের চেয়ে অনেক কম হচ্ছে। অনেক ফলবতী বৃক্ষ পুরোপুরি বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে বাড়ছে বাড়ছে বড় বড় রোগের ভয়ংকর জীবনাগুলো ।

ভাবলে শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে, শুধু আমাদের দেশেই গত ২৮ বছরে শনাক্ত হয়েছে এই ভয়াবহ সাতটি রোগ- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, এইচআইভি/এইডস, নিপাহ, বার্ড ফ্লু ও সোয়াইন ফ্লু। যদিও বহুকাল আগ থেকেই এসব রোগ ছিল, তবে কখনোই মানুষের মধ্যে ছিল না । অত্যাধিক পরিবেশ দুষন আর এডিস মশার বংশ বিস্তারের কারণে এসব রোগ দ্রুতই মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে । আর আপনি আছেন, এবছর কত ইনক্রিমেন্ট হবে তাই নিয়ে?

যে শিশু আগুনের ভয়াবহতা জানেনা, তাকেও যেমন আগুন ক্ষমা করেনা, তেমনি তুমি যদি মুচকি হেসে বলো, আমি এসব বুঝিনা, তবুও এই বিপর্যয় আমাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দিবেনা । যদিও এটা কোন বিশেষ জাতি কিংবা কোন দেশের একার নয়। তাই আমাদের সবারই এব্যপারে ভাবা উচিত, এগিয়ে আসা উচিত, এবং যাদের কাজ করার সুযোগ আছে, তাদের অনুপ্রানীত করা উচিত ।

আজ তাসনিয়া আপুর কথাটা খুব মনে পড়ছে , “শোন ভাই! আমাদের পরের প্রজন্মের জন্যে খুব খারাপ লাগে, চিন্তা হয় | পরিবেশ একেবারেই আর বাসযোগ্য নয় | পলিথিন আর ময়লা দিয়ে আমরা পৃথিবাটাকে নষ্ট করে ফেলছি | বিশুদ্ধ বাতাসের বড়ই অভাব | ওজোন স্তর ভেঙে পড়ছে | আর আমরা আছি , পেয়াঁজ দিয়ে তরকারি খেতে পারছিনা এই শোকে |” সত্যিই আপু দারুন বলেছো ।

সবকিছু আইন করে হয়না, তাই আসুন আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে এই পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি, আর এটা আপনার দায়িত্ব (বিশ্বাস না হলে, চ্যালেঞ্চ করতে চাইলে আমাকে ফোন দিন, কিংবা আসুন একবার কোন চায়ের দোকানে বসি) । আপনি কি আপনার সন্তানের জন্য অর্থ জমাচ্ছেন না? তাহলে কি তার জন্য সুন্দর একটা পৃথিবী, একটা বিশুদ্ধ বায়ুমন্ডল দরকার নেই? নাকি টাকা চিবিয়ে চিবিয়েই বেঁচে থাকতে পারবে? আসুন বন্ধুদের নিয়ে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে পার্টি না দিয়ে, গাছ লাগানোর পার্টি দেই, নিজেদের জায়গা না থাকলে সরকারী রাস্তায় গাছ লাগাই? কারণ আমাদেরতো গাছের মালিকানা দরকরা নেই, নির্মল একটা বায়ুমন্ডল দরকার ।

আসুন দশজন মিলে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটা গ্রামের সবাইকে সচেতন করি, তারা যেনো আরো বেশী বেশী গাছ লাগায়, তারা যেনো তাদের ব্যবহ্রত ময়লা বাইরে যত্রতত্র না ফেলেন, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবেন, রান্নার পরে যেন চুলা বন্ধ রাখেন । কিংবা বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে গাছের চাড়া বিতরন করি, বিভিন্ন স্কুলের জমিতে ফ্রি’তে গাছের চাড়া রোপন করে দেই । আসুন চুলে রং করা আর জেল লাগানো বাদ দিয়ে, আমাদের সন্তানদের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী তৈরি করি ।

[বিশেষ ধন্যবাদঃ আমি পরিবেশ সম্পর্কে ভাল বুঝিনা, আমার এটার সার্টিফিকেট নেই । তাই এই পোষ্টটি লিখতে যেসব মাধ্যম থেকে আমি রেফারেন্স কিংবা সাহায্য নিয়েছি, তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ । অনেকের হয়ত নামও জানা নেই, তবে কোনদিন যদি আমার এই লেখাটি তোমার নজরে পড়ে, সেদিন ভেবে নিও, আমি কৃতজ্ঞতা ভরে তোমাকে স্মরণ করেছি। এই লেখাটি পড়ার পর যদি কেউ একটা গাছও এই পৃথিবীতে রোপন করে, কিংবা একটা ময়লাও কম ফেলে, এই পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করতে কেউ একটুও অবদান রাখে, তাতে তোমার অংশও থাকবে ।]

Related Posts:

  • বিশ্বাস মাঝে মাঝে আমার নিজেকে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়, অন্যকে তো দুরের কথা ! বিশ্বাসটা আসলে কাউকে করা যায়না, কিংবা বানানো যায়না। বিশ্বাসটা এমনি এমনিই জন্ম নেয়… Read More
  • পরকীয়া ........! আমাদের অনেকের কাছে বিষয়টি খুবই পরিষ্কার যে, নিজের বাসার মাংস থেকে পাশার বাসার ভাবীর কচু তরকারীও মজা । কারণ মানুষের একটা জন্মগত সভাব হচ্ছে অজানাকে জা… Read More
  • ভালবাসা দিবস আজ ভালবাসা দিবস আমার সকল বন্ধু-বান্ধবীরা / আত্নীয়-স্বজন / এই ব্লগের সকল ভিজিটরগন ! ভালবাসার কি কোন দিন বা সময় আছে ? প্রতিদিন কিংবা প্রতি ম… Read More
  • ভালবাসা আমার মনে হয় ভালবাসা বলে কিছু নেই। এটা একটা জাল বা ফাদ। আমরা এই জালে বা ফাদে আটক করে মানুষকে বন্ধী করে রাখি । আমরা এক একজন এই জালকে একেকভাবে ব্যবহার … Read More
  • Orientation Program with BKMEA. National Tuberculosis Control Program (Orientation Program) with BKMEA members on Feberuary 15, 2015  — at নারায়নগঞ্জ প্রেস ক্লাব Narayan… Read More

1 comments:

  1. গতানুগতিক সমাজ নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট।
    Dhaka times

    ReplyDelete

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!