মিথ্যা


কথায় বলে, গল্পের গরু গাছে চড়ে! আর লাগামছাড়া মিথ্যেয় ভরপুর গল্পের বাইরেও যখন গরুরা গাছে অনবরত চড়ে, তখন নিখাদ চলতি ভাষায় ‘চাপা’ বলি সেটিকে আমরা। কিন্তু সেই চাপা যখন, ‘মাঝে-সাঝে’ থেকে 'প্রায়শই' আর 'প্রায়শই' থেকে 'সব সময়' হয়ে যায়, তখন ভ্রু-যুগল কুঁচকে ভেবে ফেলতে হয়- ব্যাপারটি আর মজা নেই। জটিল, জন্ডিস কেস আছে এমন মিথ্যাচারণের পিছনে!


এখন প্রশ্ন হল, কে বলে আপনার চারপাশে সব সময় এমন ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে? হতে পারে সে ছোটবেলার বন্ধু, হতে পারে সদ্য আলাপ হওয়া বান্ধবী কিম্বা আপনার নিত্যদিনের দেখা পাওয়া কোনো চোখের বালি অথবা আপনার আড্ডাজোনের কোনো একটি বন্ধুর মাঝেই অনেকসময় লুকিয়ে থাকে সেই মিথ্যাভাষীটি! কখনও অজান্তে, কখনও বা জেনেই! ভেবে দেখেছেন কি, সেই ব্যক্তিটির এমন মিথ্যা বলার প্রয়োজন পড়ে কেন?


মনোবিদরা জানাচ্ছেন, 'মিথ্যা বলার অভ্যেসটা গড়ে ওঠে ছোটবেলা থেকেই। ছোট বাচ্চারা অনেক সময়ই দুষ্টুমি লুকানোর জন্যে মিথ্যা কথা বলে। কিন্তু সে যদি ছোটবেলাতেই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারে, তাহলে সে বড় হয়ে এমন পার্সোন্যালিটির মানুষ হয়ে ওঠে যার মিথ্যা বলতে কোনো সঙ্কোচ হয় না। যদিও মিথ্যাচারণ সব মানুষই কম বেশি করে থাকেন প্রয়োজনে, কিন্তু উঠতে-বসতে যখন মিথ্যা বেরোয়, তখন বুঝে ফেলতে হবে সেটি সামান্য মিথ্যা নয়, এক অবসেশনের পর্যায়ে চলে গেছে সেটা'। কী করে বুঝবেন যে মিথ্যে বলছেন আপনার চারপাশের কোনো এক মানুষ? জানতে চাইতেই এক এক করে বলে গেলেন মনোবিদ।


১. যার সঙ্গে কথা বলছেন তার চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করুন। তিনি যদি চোখ সরিয়ে নেন বা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে বুঝবেন তিনি মিথ্যে বলছেন। এটা একটা মিথ্যা বলার লক্ষণ।


২. যার সঙ্গে কথা বলছেন তার কথা বলার ধরনের দিকে খেয়াল করুন। যদি তিনি সাধারণভাবে কথা বলে যান কোনও বিরতি ছাড়া এবং মাঝে মাঝে 'আম, উম' এই ধরনের শব্দ করেন, তাহলে সেটাও একটা মিথ্যা বলার লক্ষণ।


৩. মিথ্যা বলার সময় মানুষ হাত গুটাতে পারে অথবা পায়ে ঘষা দিয়ে হাঁটতে পারে অথবা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে। এটার কারণ সে নার্ভাস এবং তার সাধারন আচার-ব্যবহার পরিবর্তন করতে চাইছে।


৪. মুখের ভাবের পরিবর্তন মিথ্যা বলার আরেকটি লক্ষণ। লক্ষ্য করুন, মিথ্যা বলার সময়ে ব্যক্তিটির চোখের ভুরু উপরের দিকে উঠছে কিনা! স্বাভাবিকভাবেই তার ভুরু নড়াচড়া করবে বেশি অথবা তিনি হাসবেন এমন একটা সময়ে যখন হাসার কোনও কারণ নেই।


৫. একইভাবে মিথ্যা বলার সময় মানুষের শারীরিক নড়াচড়া বেড়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যাওয়া মিথ্যা বলার লক্ষণ। এই ছোটখাটো কয়েকটা ব্যাপার খুঁটিয়ে দেখে এটা না-হয় বোঝা গেল যে, কে মিথ্যা বলছেন আর কে নয়! তারপর? বন্ধুটি যদি আপনার প্রিয় হয়, তবে তাকে একটু সাহায্য করুন অভ্যেস পাল্টাতে। কাজটা এমন কিছু শক্ত নয়। আপনি শুধু একটু সমস্যাটার গভীরে যান। 'মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারটা অনেকটাই মানসিক। আর যে কোনও মানসিক সমস্যা দূর করতে হলে আগে অন্য মানুষটির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হয়', বলছেন অভিরুচি। সেই সঙ্গে বলছেন, মিথ্যা ছাড়ানোর কয়েকটি পদ্ধতি কেমন হতে পারে!


বন্ধুটির মিথ্যা বলার প্রবণতাটিকে, অন্য কোনো গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরুন তার সামনে। দেখুন সে নিজের প্রবলেমটি বুঝতে পারছে কি না! এমন ইম্পালসিভ লায়ার-রা অনেক সময়ই না-বুঝেই বলে থাকে মিথ্যে কথা।


দ্বিতীয়ত, কথায় কথায় জেনে নিন, এমন কোনও ঘটনার কথা যা তার জীবনে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলেছে, সম্ভবত তার অজান্তে মিথ্যা বলার পেছনেও! গহন সেই ক্ষতকে সারানোর চেষ্টা করুন। এরই পাশাপাশি, বন্ধুকে বোঝান যে মিথ্যা বলে কীভাবে অন্যদের কাছে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে তিনি! এসবেও যদি কাজ না-হয়, হয় সরে আসতে পারেন আপনি, নয় তো বন্ধুকে নিয়ে যেতে পারেন মনোবিদের চেম্বারে। শুধু মিথ্যাটাকে প্রশ্রয় না-দিলেই হলো! সূত্র: ওয়েবসাইট।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!