ফোনটা রেখে দেবো কিন্তু !

ফোনটা রেখো দেবো কিন্তু !



মাঝে মাঝে যখন মানব দেহ, সেক্স, বিবাহ, বাসর এসব বিষয় কথা বলতাম, তখন হাসি দিয়ে নীলা বলত সত্যি সত্যি এবার ফোন রেখে দেব কিন্তু ! হয়ত রাখতনা । তখন আমি না দেখলেও বেশ অনুভব করতে পারছি, তখন ওর মুখের উপর মাঠের পলাশের লাল আভাটা ছুটে এসে লুটিয়ে পড়ত । 

আমি যে খারাপ কথা বলিতাম না তা নয় । মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে মজা করে বলতাম । আবার কখনো কখনো অফিসের মেয়ে কলিগদের সাথে মজা করে হিরো সাজার জন্য বলতাম । কিন্তু নীলার সাথে শেষ এক বছরের আগে কখনো বলিনী । ওর সাথে সব সময় হিসাব করে কথা বলতাম । কারন ও একটু অন্য রকম ছিল । আর শেষ একবছর ওর সাথে কোন ব্যবধান রাখিনী । মুখে যা আসত হাসতে হাসতে তা বলে ফেলতাম । এমনকি ফিজিক্যাল রিলেশনটাকে বলতাম  চাইনিজ, ঠোটদুটেকে বলতাম ললিপপ । 

মাঝে মাঝে ভাবতাম, আবস্থা সেই ট্রেন যাত্রীর মতো । যে পানির পিপাশা নিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে দাড়িয়ে থাকে । পানির কাছে ছুটেও যায় । কিন্তু বেশী দুর এগিয়ে যাবার সৌভাগ্য হয়না । তেষ্টার বেদনা বুকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে ফিরে আসে, নইলে ট্রেন ছেড়ে যাবে । 

আজ আমার মনটা নিজেই বুঝতে পারিনা, চেষ্টা করছি ও আর্শ্চয্যও হচ্ছি । আজ তোমার উপর একটুও রাগ করতে পারছেনা কেন মোনটা, যার কথা আর অপমানে বিরক্ত হয়ে গত তিনটা দিনের প্রতিটি মুহুর্ত বিশ্রীভাবে কেটেছিল । তারই কাছে আজ ভালবাসা ভিক্ষা চাইতে ইচ্ছে করছে । তাকে খাটাতে ইচ্ছে করছে । পড়ন্ত বিকেলে শাড়ী পড়ে এক কাপ কফি দিক, সকালে ঘুম ঘুম চোখে অফিসে চলে যাবার সময় পিছন থেকে টেনে ঘারের উপর একটা কামড় দিক । কিংবা প্রতিদিন রাতে আমাকে জোর করে ঘুম থেকে টেনে তুলে মোরের চায়ের দোকানটাতে নিয়ে গিয়ে একই কাপে চা খেতে বাধ্য করুক । 

ভালবেসে কাউকে পেলে স্বার্থকতা থাকেনা । ভালবাসার গভীরতা টান উপলব্ধি করা যায়না । একথাটা আমার এক বন্ধুর মুখেই শুনেছি । 

আমার এক বন্ধু মানুষের উপকার করত,  কেউ ডাকলেই ছুটে যেত । খুব সহজ সরল । একদিন ওকে বললাম, তুইতো সবার উপকার করিস এর কারণটা কি ? বন্ধু বলল, যদি  কেউ ডাকে আর আমার সাধ্য থাকে তবে একটু সাহায্য করি, এই আরকি । আমি হেসে বললাম,  কেউ তো তোর উপকারের উপযুক্ত মুল্য দেয়না ? বন্ধু বলল, মুল্যই যদি পেলাম, তবে উপকার করা হলো কোথায় ? আর আমি যে বিনামুল্যে উপকার করে বেড়াই এটা আমার বোকামী নয়, এটা আমার একটা ভায়নক অহঙ্কার । আমি নিজেকে অনেক সময় ছোট করে ফেলি । তাই দেখে মনে মনে মজা করার জন্য অকারনে অন্যের উপকার করে বেড়াই । অনেকেই হয়ত সেটা বুঝতে পারেনা, আবার কেউ কেউ বুঝতেও চায়না । 


আমি শুনে বোকার মত দাড়িয়ে থাকলাম । সেদিন ও আমাকে বলেছিল কাউকে সত্যিকারের ভালবাসলে, তাকে কখনো নিজের করে পাওয়ার চেষ্টা করনা । তাহলে সে তোমার ভালবাসা বুঝতে পারবেনা্ । আর তোমার ভালবাসাও আর বেচে থাকবেনা। তখন তোমার ভালবাসা মরে গিয়ে সে মাটিতে জন্ম নেবে অধিকার আর দায়িত্ববোধের একটা শক্ত গাছ । যে গাছ ধীরে ধীরে ডালাপালা বিস্তার করে তোমার মাথার উপর ভর করে বেচে থাকবে। চাইলেও তুমি আর স্বাধীনভাবে কিছুই করতে পারবেনা। হয়ত একদিন সেই গাছের চাপে নিজের প্রানটাই চলে যাবে, চলে যায় । 


সেই প্রান চলে যাবার ভেয়ে জীবনকে কারো সাথে জড়াবোনা । এটা কি এমন মহতের মতো কথা । এই যে ছন্নছাড়া ঝীবন, কি মুল্য আছে এর ? দিন যায়, রাত যায়, কেউ খবর রাখেনা । যদি হাতে একগুচ্ছ কাচের চুড়ি নিয়ে, মাথার কাপড়টা একটু সড়িয়ে নিয়ে, কুড়ি বছর বয়সের ঢলঢল মুখটি তুলে কোন একটাও যদি প্রশ্ন না করে-কি গো এতরাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে, তুমি কি জানোনা আমি একা থাকতে পারিনা । তুমি কি মনে করেছ তোমার কেউ নেই ? তবে জীবনের মুল্য কোথায় ? জীবনের স্বার্থকতা কোথায় ?  

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!