আপনার পছন্দসই হোক বা না হোক- জীবনের বেশ কয়েকটি ধ্রুবসত্য আছে। যেমন: সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে, সবার জীবনেই মৃত্যু আসবে ইত্যাদি। একইভাবে একটি ধ্রুবসত্য সব ছেলের জীবনে আছে। সেটি হলো, অন্তত একবার হলেও আপনি প্রেমিকার সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন।
নারীর সঙ্গে এ ধরনের ঝগড়ার সময় অথবা ঠাট্টাচ্ছলে এমন সব কথা বলা হয়ে থাকে যা থেকে ব্যক্তিগত জীবনে তো বটেই, সমাজ কাঠামোতেও একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আপনার প্রেমিকার সঙ্গে হয়তো এক মিনিটের জন্য বিতর্কে জড়িয়েছেন- সেটা নেতিবাচক হতে পারে তখনই, যখন কোনো নির্দিষ্ট একটি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করছেন কেবলমাত্র তাকে ঘায়েল করার জন্য।
অথবা হতে পারে আপনি আদৌ তাকে ঘায়েল করতে চান না। স্রেফ মজা করার জন্যই কথাটি আপনি বলেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার অলক্ষ্যে ওই কথাটি তার জন্য কতটা ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিয়েছে? আর কখনও তা সুন্দর ও মধুর আবহাওয়া পাল্টে দেওয়ার জন্যও যথেষ্ট হতে পারে। মুহূর্তেই এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যেখান থেকে আর ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।
তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে কিছু বিষয়ে মনোযোগী হওয়া। অর্থাৎ আপনাকে জানতে হবে কোন কোন কথা আপনার মেয়ে বন্ধু বা স্ত্রীকে কখনও বলা উচিৎ নয়। জেনে নিন এরকম ১০টি কথা যা কখনও বলবেন নাঃ
১. তুমি বড্ড ভোজনরসিক:
আপনার প্রেমিকা হয়তো পালকের মতো হালকা এবং নৃত্যপটিয়সীর মতো চটপটে। সব ক্ষেত্রেই সে অকপট। বলেই ফেলে এখন এটা খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটাকে অন্যভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং এটা নিয়ে কোন খোটা দেওয়া বা ঠাট্টা করা একদমই উচিৎ নয়। তা ছাড়া আপনি নিজে যখন খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান তখন কিন্তু সে কিছুই বলে না, বরং উৎসাহ দেখায়। তাই পারলে খাবারের প্রসঙ্গে কিছু মন্তব্য এড়িয়ে চলুন। খাবার সামনে রেখে কখনো বলবেন না, ‘সবটাই খেয়ে নেবে?’
২. অবমাননাকর গালিঃ
মনে রাখবেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আর জগতে সব জীব-অণুজীবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু প্রেমিকা নয় যে কোনো মানুষকে অন্য কোনো প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা, উদাহরণ দেওয়া কিংবা কোনো প্রাণীর নাম উল্লেখ করে গালি দেওয়া- সেটা অত্যন্ত অবমাননাকর। এমনকি আপনি যদি সত্যিকারভাবে কখনও তার দ্বারা নিপীড়িত হন- তবু এ ধরনের কোনো শব্দ প্রয়োগ করবেন না। এটি করা মানেই কিন্তু তাকে আপনি শুধু বিদ্রুপ করলেন না- তাকে ছোট করলেন এবং প্রকারান্তরে এতে আপনি নিজেই ছোট হলেন।
৩. আমার সাবেক প্রেমিকা বলতো যে…
জগতে সব মানুষেরই নিজস্বতা রয়েছে। সবার রয়েছে একটি নিজস্ব সত্ত্বা। হতে পারে, আপনার বর্তমানের চেয়ে আগের প্রেমিকাই ভালো ছিল। কিন্তু এটি বর্তমান প্রেমিকাকে বলার দরকারটা কি? আপনি আপনার নিজের ভেতর রাখুন না বিষয়টি। তাছাড়া, এর দ্বারা কেবল আপনি আপনার প্রেমিকাকে আগের প্রেমিকার সাথে তুলনা করে তাকে ছোট করতে চাচ্ছেন। সুতরাং, এই প্রবণতা দূর করে ফেলুন।
৪. তুমি সবসময় এটা করঃ
একটি চরমতম শক্তিপরীক্ষার ভেতর দিয়ে অনর্থক কলহ তীব্র করার জন্য একটি পথ হলো- ‘কখনও না’ কিংবা ‘সবসময়’র মতো শব্দ ব্যবহার করা। আপনি আসলে সত্যবাদী হতে ভয় পান বলেই এমন আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। এ ধরনের আচরণে আপনার প্রেমিকা কেবল হতাশই হন না বরং আপনি আপনার প্রেমিকাকে এটাই ভাবতে সুযোগ দেন যে আপনি বরাবরই ভুল করেন এবং এটি আপনার একটি বড় দোষ। এটি তর্কে অতীতের অনেক উপাদানকে টেনে আনার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়। এবং শেষ পর্যন্ত আপনি আসলে কলহ থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। এতে সম্পর্কের প্রশ্নে আপনার খারাপ দিকই উন্মোচিত হতে থাকে।
৫. তুমি ঠিক তোমার মায়ের মতোইঃ
শুধু বাঙালি নয়, সব সমাজে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই একটি খারাপ দিক যে খুব ঠুনকো ব্যাপারে স্ত্রী বা মেয়ে বন্ধুর মা কিংবা পরিবারের অন্য কাউকে টেনে আনা হয়। যাই ঘটুক না কেন, কখনোই তার মা-বোনের সঙ্গে কিংবা তার পরিবারের অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করবেন না। কেননা কেউই চায় না তার সূত্র ধরে কেউ তার পরিবারের কাউকে ছোট করুক। এটি অত্যন্ত মর্মাহত করে। তা ছাড়া তার পরিবারের সদস্যদের যতটা আপনি জানেন তার চেয়ে বেশি সে জানে। আর যদি তার পরিবারের কেউ সত্যিই খারাপ থেকেই থাকে তবু প্রত্যেকে চায় তা মেনে নিয়েই নিজস্ব পরিচয়ে জীবন ধারণ করতে।
৬. তুমি মোটেও সুন্দর নওঃ
কখনও কখনও সে কিছু নিষ্পাপ প্রশ্ন করে আপনাকে প্রলুব্ধ করে যেমন: তুমি কি মনে করো ওই মেয়েটি সুন্দর? সে ক্ষেত্রে আপনি এমনভাবে কাঁধ ঝাঁকাবেন যেন এ আর এমন কি। সব নারীই চায় তার প্রেমিক বা স্বামীর কাছ থেকে প্রশংসা শুনতে। তাই আপনি তার প্রশংসা না করেন অন্তত এমন কিছু বলবেন বা আচরণে এমন কিছু প্রকাশ করবেন না যাতে সে মনে করে আপনার চোখে সে সুন্দর নয়।
৭. তোমার চুল এমন কেন?
সঙ্গীনি হয়তো চুলে এমন একটি রং লাগিয়েছে যেটা আপনার পছন্দ নয় এবং আপনাকে জানায়নি আগে। আপনার যাই মনে হোক, চেপে যান। মনে রাখবেন মেয়েদের চুল শুধু চুল নয়। অনেক যত্নে সে একে লালন করে। সুতরাং তাকে উৎসাহ দিন। তার চুলের প্রশংসা করুন।
৮. আহ! শান্তিঃ
শান্তি জিনিসটি এমন যে প্রত্যেকে এর প্রত্যাশা করে। হয়তো আপনি ও আপনার স্ত্রী একসঙ্গে বাইরে গেলেন। এরপর যখন বাসায় ফিরলেন তখন আপনি আয়েশ করতে লাগলেন বিছানায় আর আপনার স্ত্রী গেলেন রান্নাঘরে। কিন্তু কখনও যদি এমন হয় যে আপনার স্ত্রী একটু শান্তি চান, তবে স্বাভাবিকভাবে বিষয়টিকে নেয়া উচিত নয় কি? মনে রাখবেন পৃথিবীতে কেউই পরিবারে নির্দিষ্ট কোনো কাজ নিয়ে জন্মায় না। সংসারে সব কাজই সবার। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বিশেষ মুহূর্তে নারীর প্রতি অন্য দৃষ্টিভঙ্গী নাটকীয়ভাবে তার স্বস্তির সুযোগগুলি নষ্ট করে দেয়। আর এমনটি ঘটলে তা আপনার পরিবারের ওপরই ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
৯. এটা কি তোমার মাসের সেই বিশেষ সময়?
প্রকৃতির কিছু নিজস্ব নিয়ম আছে। মানুষ তো প্রকৃতিরই অংশ। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের প্রাকৃতিক নিয়মগুলো সবার জানা। কেননা সমাজ এখনও পুরুষ শাসিত। কিন্তু মেয়েদের নিজস্বতার প্রতি অনেকেরই সম্মানবোধ নেই। নেতিবাচক অনেক মনোভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন ত্বরান্বিত করতে আপনারও ভূমিকা থাকতে পারে। ধরুন, আপনার স্ত্রী বা মেয়ে বন্ধুর এখন ঋতুকালীন সময়। এ ক্ষেত্রে আপনি কি অন্যদের মতো অন্য দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করবেন, না স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে সহযোগিতা-প্রবণ হবেন- এটি আপনার ওপরই ছেড়ে দেওয়া হলো।
১০. আমি তোমাকে ভালোবাসি
চমকে গেলেন? চমকানোই উচিৎ। জেনে রাখুন, এ শব্দগুচ্ছের যথেচ্ছ ব্যবহার করবেন না। কেননা এটি এমন এক শিহরণজাগা অনুভূতি সৃষ্টিকারী যা ভেতর থেকে উৎসারিত হয়। আপনি মুখে উচ্চারণ করুন আর না করুন সঙ্গীনি ঠিকই বুঝে নেয়। বার বার শুনলে এক ধরনের সন্দেহ তৈরি হতে পারে। বলতে পারে, আপনি আসলেই এটা বুঝাচ্ছেন কিনা। সুতরাং এ ধরনের শব্দ বা বাক্য ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন। বরং নিজের ভেতর থেকে এর সত্যিকার রূপ বের করে আনুন।
0 comments:
Post a Comment