ওজন বেড়ে যাওয়া:
সম্পর্কের সুদিন ফুরিয়ে গেলে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়া শুরু করতে পারে।
একটি সুখী দম্পতি একে অন্যের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য উৎসাহ দিতে পারে।
তারা একসাথে শরীরচর্চা করতে পারে। তারা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে।
কিন্তু সম্পর্কে অসন্তুষ্টি পরোক্ষভাবে মানুষকে আগ্রাসী করে তোলে,
খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওজন বাড়ে|
মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়া:
নিয়মিত দৈহিক সম্পর্ক বা অন্তরঙ্গ আচরণ মানসিক চাপ কমিয়ে দিতে পারে।
এটা দুজনের জন্যই ভাল। ২০০৯ সালে প্রকাশিত “জার্নাল অব সেক্স মেডিসিন” এর
একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত সুস্থ যৌন জীবন-যাপন করে, তাদের
মানসিক স্বাস্থ্য অধিকতর ভাল থাকে এবং তারা তাদের সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট
থাকে। কিন্তু সুখবিহীন সম্পর্কে গর্ভধারণ নিয়ে বিতর্ক, টাকা নিয়ে
মতবিরোধ, এমনকি ছোটখাট বিষয় যেমন গৃহস্থালি কাজ কে কোনটা করবে- এসব নিয়ে
প্রশ্নও মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।
সুখানুভূতি উধাও:
ডোপামিনকে বলা হয় সুখের হরমোন। প্রেমিক বা প্রেমিকার সহচার্য শরীরে
ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। ডোপামিন ছাড়াও আরো কয়েকটি সুখের হরমোন
আছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে অক্সিটোসিন। ২০০৪ সালে ৩৮ টি দম্পতির উপর একটি
গবেষণায় নর্থ ক্যারোলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখতে পান যে, আলিঙ্গনের
পর পুরুষ ও নারীর উভয়েরই রক্তে অক্সিটোসিনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
অক্সিটোসিন চাপ কমায়, বিষণ্ণতা দূর করে ও মেজাজ ঠিক রাখে। আলিঙ্গনের পর
মহিলাদের রক্তচাপ ও মানসিক চাপ কমে যায়।
কিন্তু সম্পর্ক যদি সুখের না হয়, নানান সমস্যা লেগেই থাকে তাহলে শরীরে স্বাভাবিক হরমোন ক্ষরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে, সুখানুভূতি উধাও হয়ে যায়।
কিন্তু সম্পর্ক যদি সুখের না হয়, নানান সমস্যা লেগেই থাকে তাহলে শরীরে স্বাভাবিক হরমোন ক্ষরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে, সুখানুভূতি উধাও হয়ে যায়।
ঘুমের সমস্যা:
প্রিয়জনের প্রতি ভালবাসা ও বিশ্বাস নিরুদ্বেগ হতে সাহায্য করে ও
স্বস্তির ঘুম নিয়ে আসে। কিন্তু সম্পর্কটি সুখের না হলে স্বস্তির ঘুম উধাও
হয়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, সম্পর্কের অনিশ্চয়তা ও দ্বন্দ্ব
থাকলে ঘুমের পরিমাণ কমে যায়। পরবর্তিতে ঘুমের সমস্যা সম্পর্ককে আরো খারাপ
করে দিতে পারে। এবং এই চক্র চলতেই থাকে। উদ্বেগ সম্পর্কের জটিলতা মানুষকে
তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক
উদ্বেগকে একেবারেই দূর করে দিতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বৈবাহিক
সমস্যা ও মানসিক-সামাজিক
উদ্বেগের মধ্যে সম্পর্ক/সংযোগ আছে। এই সংযোগ খুঁজে পাওয়া কিছুটা কঠিন,
যেহেতু মনেই করা হয় উদ্বেগ সম্পর্কের সমস্যা বাড়ায়, উল্টোটা নয়। কিছু
গবেষণায় বলা হয়েছে বিয়ে উদ্বেগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ২০১০ সালে
১৫টি দেশের ৩৫ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একটি
জরিপে দেখা যায়, যারা বিবাহিত কিন্তু সুখী না, তারা উদ্বেগ, মানসিক
অশান্তি কম দূর করতে পারে। বিষাদগ্রস্ততা বা হতাশা ও উদ্বেগ আসলে একই সাথে
হয়।
হতাশা:
যাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, বিশেষ করে বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে তারা
হতাশার লক্ষণগুলোকে সহজে কাটিয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, সম্পর্কের বোঝা
ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা
যায়, প্রায় ক্ষেত্রেই মহিলারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে হতাশায় ভোগে।
কিন্তু তাদের হতাশা বা অবসাদগ্রস্ত হওয়া ছয়গুণ বেড়ে যায় শুধুমাত্র
স্বামী অবিশ্বাসী হওয়া কিংবা বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে।
মদ্যপান:
মানুষের মদ্যপানের অভ্যাসে তার জীবনসঙ্গীর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।
ছয় শত দম্পতির বিয়ের প্রথম ৪ বছরে অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা
যায়, মদ্যপানের অভ্যাসটা দম্পতিদের একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে খুব দ্রুত
ছড়িয়ে পড়ে। যদি কারো সঙ্গী খুব বেশী মদ্যপান করে, তাহলে অন্যজনও সম্ভবত
খুব বেশি মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার এটাও সত্য যে সম্পর্কে
দ্বন্দ্ব ও আন্তরিকতার অভাব মদ্যপানের দিকে ঠেলে দেয়। গবেষণায় বলা হয়,
পুরুষ ও নারী উভয়েই সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময় মদ্যপান করে। এবং
অতিরিক্ত মদ্যপান অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
রক্তচাপ:
একজন মানুষের খাদ্যাভাস, ব্যায়ামের অভ্যাস, মানসিক অবস্থা সবই
রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলে। কাজেই এটা খুবই স্বাভাবিক যে, প্রেমে
সফলতা-ব্যর্থতা আপনার শরীরে রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলবে। ২০০৮ সালের একটি
গবেষণায় ব্রিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেন, যেসব দম্পতি সুখী,
তাদের রক্তচাপ অবিবাহিতদের তুলনায় কম থাকে। আবার যারা বিয়ের পর অসুখী
জীবন-যাপন করে, তাদের রক্তচাপ অবিবাহিতদের তুলনায় বেশী। অস্বাস্থ্যকর
সম্পর্ক শরীরের স্ট্রেস হরমোন এবং হার্টবিট বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে
স্বাভাবিকের তুলনায় রক্তচাপ বেড়ে যায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমান:
কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, সফল ও প্রশান্তির বৈবাহিক সম্পর্ক
প্রোস্টেট গ্রন্থি, ফুসফুস ও অন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের বেঁচে
থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ২০০৯ সালে ৩.৮ মিলিয়ন ক্যান্সার রোগীদের
ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ৫৮% বিবাহিত ক্যান্সার আক্রান্ত
রোগী ক্যান্সার ধরা পড়ার পর ১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। কিন্তু
অবিবাহিতদের মধ্যে ৫২%, ডিভোর্সীদের মধ্যে ৪৬%, বিধবা ও বিপত্নীকদের মধ্যে
৪১% মানুষ ক্যান্সার ধরা পড়ার পর দশ বছর বাঁচতে পারে। যারা তাদের
জীবনসঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের মধ্যে ১০ বছর বাঁচে মাত্র ৩৭ ভাগ।
বিচ্ছিন্ন বা আলাদা অবস্থায় একাকীত্ব বা অপ্রত্যাশিত চাপ শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা:
মাঝে মাঝে সঙ্গী বা সঙ্গীনীর স্বাস্থ্যের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি
আদিখ্যেতাও মনে হতে পারে কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষা করা ওষুধ ঠিকমত খাওয়া
হয়েছে কিনা- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকে উৎসাহিত করে এবং স্বাস্থ্য সমস্যার
দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য করে বলে মনে করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে একটি
কানাডিয়ান গবেষণায় দেখা যায়, বিবাহিত লোকেরা বেশি বুকে ব্যাথা অনুভব
করে এবং এর ফলে তাদেরকে অবিবাহিতদের চেয়ে বেশি হাসপাতালে যেতে হয় যদিও
তাদের স্ত্রীরা ঠিক সময়েই ঘরে ফেরে। ট্রয়ানি বলেন, “স্বাস্থ্যকর
সম্পর্কে একে অন্যের আসলেই যত্ন নেয়। এবং তারা নিজেদের যত্ন নেয়ার
বাধ্যতা ও অনুভব করে।”
হার্ট এ্যাটাক:
বর্তমান সম্পর্ক সুখের হলেও অনেকের জীবনেই প্রেম নিয়ে কষ্টের অতীত থেকে
যায়। কষ্টের ওই অতীত আপনার মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর কারণ হতে পারে।
বিশেষ করে যাদের সম্পর্ক শেষ হয়েছে প্রত্যাখ্যান বা চরম আঘাতের অনুভূতি
দিয়ে। ২০১১ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেন, পুরনো
প্রেমের ফেলে আসা স্মৃতি আওড়াতে থাকলে শরীরে ব্যাথার মত মস্তিষ্কেও একই
ধরনের প্রভাব ফেলে। এমন ও হতে পারে যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে
ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম, অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক অবসাদের কারণে
হৃদপিন্ডের সাময়িক বিস্তৃতি(হার্ট এ্যাটাকের মতই) দেখা দিতে পারে।সূত্র:
ইন্টারনেট
0 comments:
Post a Comment