আমাদের সমাজে এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার যে স্ত্রীর তুলনায় স্বামীর বয়স বেশী হতেই হবে। শুধু বেশী নয়, অনেকটাই বেশী। বিশেষ করে পারিবারিক ভাবে আয়োজিত বিয়ে গুলোতে বয়সের এই পার্থক্য বেশী পরিলক্ষিত হয়। ১০ বছর, ১২ বছর, ১৫ বছরের বয়স পার্থক্য যেন কোনো ব্যাপারই না। স্ত্রীর চাইতে স্বামী বছর বিশেকের বড়, এমন উদাহরণও মিলবে ভুরি ভুরি। আবার অনেক তরুণীই প্রেম করে বিয়ে করেন নিজের চাইতে বয়সে অনেকটা বড় কোনো পুরুষকে। সবমিলিয়ে বিয়ের নেপথ্যের কারণ যাই হোক না কেন, সমস্যা গুলো কিন্তু মোটামুটি এক রকমই থাকে।
তরুণ বয়সে হয়তো খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু যত স্বামীর বয়স বাড়তে থাকে, ততই তৈরি হতে থাকে নতুন নতুন সব সমস্যার। আজকে তুলে ধরা হলো প্রধান তিনটি সমস্যা।
যৌন জীবনে অনাগ্রহ-
কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক, সুখী দাম্পত্য গড়ার পেছনে সুখী ও স্বাস্থ্যকর যৌন জীবনের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এটাও খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার যে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মানুষের যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে আসে। স্বামী- স্ত্রীর মাঝে বয়স পার্থক্যটা বেশী হলে বিপত্তি ঘটে সেখানেই। দেখা যায় বাড়তি বয়সের কারণে স্বামী হয়তো যৌন জীবনে আগ্রহী নন, কিংবা শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। ফলশ্রুতিতে তিনি হীনমন্যতায় ভোগেন আর নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন। স্ত্রী হয়তো ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না, কিংবা মেনে নিতে পারেন না। শুরু হয় মতবিরোধ।
এমন ক্ষেত্রে স্ত্রীকেই কিন্তু বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত। কেবল যৌনতার মাঝেই যে তাঁদের দাম্পত্য সীমাবদ্ধ নয়, সেই ব্যাপারটি স্বামীকে বোঝাতে হবে। এবং স্ত্রী হিসাবে আপনি যে সারাজীবন তাঁকে ভালবাসবেন, সেই ভরসা তাঁকে জোগাতে হবে।
আগ্রহের বিষয়ের পরিবর্তন-
এটাও খুব স্বাভাবিক যে বয়সের সাথে সাথে মানুষের আগ্রহের জায়গা গুলো বদলে যায়। ৩০ বছর বয়সে যা ভালো লাগে, নিশ্চিত রূপেই ৬০ বছরে সেটা আর ভালো লাগবে না। দাম্পত্যে বয়সের পার্থক্যটা বেশী হলে এই ব্যাপার গুলো নিয়ে মন কষাকষি খুব স্বাভাবিক। এক কালের খুব “থ্রিল” প্রিয় স্বামী পুরুষটিই হয়তো বয়সের কারণে হয়ে পড়েছেন অনেকটাই শান্ত আর গৃহী স্বভাবের। এখন হয়তো বেড়াবার চাইতে টিভি দেখতেই তাঁর বেশী ভালো লাগে, হয়তো ধর্ম কর্মে বেশী মনযোগী হয়ে পড়েছেন, উদ্দামতা আর উচ্ছলতার চাইতে হয়তো শান্ত ভাবে সময় কাটাতেই বেশী ভালবাসেন।
এমন সময়ে স্বামীকে ভুল বুঝবেন না। বরং তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করুন। একটা যিনি ভুলে যাবেন না যে স্বামী এখনও আপনাকে ভালবাসেন, কেবল প্রকাশ ভঙ্গিতে সেই উচ্ছ্বাসটা নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক, বয়সের সাথে অনেক কিছুই বদলে যায় আমাদের জীবনে। বয়সের সাথে সাথে সম্পর্কেও পরিবর্তন আসবে। এটাকে মেনে নিয়ে দুজনে নতুন করে শুরু করুন। নিজেদের মাঝে কিছু “কমন” আগ্রহের বিষয় খুঁজে নিন। দেখবেন মতবিরোধের নাম নিশানাও নেই।
সন্দেহ প্রবণতা-
বয়সের পার্থক্য বেশী হলে অনেক স্বামী হয়ে থাকেন ভীষণ সন্দেহ পরায়ণ। তাঁরা সর্বদা ভাবেন যে স্ত্রী বুঝি তাঁর চাইতে তরুণ কারো দিকে মনযোগী হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে স্বামীর যখন বয়স ক্রমশ বাড়তে থাকে, কিংবা কোনো কারণে তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন- এমন সময়ে সন্দেহ প্রবণতা হয়ে ওঠে আকাশচুম্বী। ফলে যা হবার তাই হয়, কলহ ও মতবিরোধ।
এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হবে পুরুষের নিজেকেই। তাঁকে বুঝতে হবে যে সন্দেহ করে কারো মন পাওয়া যায়না। স্ত্রী যদি তাঁকে ভালবেসে থাকেন তো যে কোনো মূল্যে পাশেই থাকবেন। আর যদি ভালবেসে না থাকেন, তাহলে সন্দেহ করে তাঁকে নিজের কাছে আটকে রাখার অর্থ নেই। স্ত্রীর যদি তরুণ কাউকে ভালো লেগেই যায়, তাহলে আর ভালোবাসা রইলো কোথায়?
তরুণ সাজবার চেষ্টা-
বুড়িয়ে যেতে শুরু করলে অনেক পুরুষকেই দেখা যায় নিজেকে তরুণ সাজাবার একটা ব্যর্থ চেষ্টা শুরু করেন। বিশেষ করে যাদের স্ত্রীর বয়স কম, তাঁরা। ঝলমলে কাপড় পরার চেষ্টা করেন, চুলে কলপ লাগান, এক রকমের তারুণ্য সুলভ চপলতা জোর করে আনার চেষ্টা করে থাকেন আচরণে। আর এই সবই করা হয়ে থাকে স্ত্রীর পাশে নিজেকে মানানসই প্রমাণের এক রকম সূক্ষ্ম প্রয়াস থেকে।
একটা জিনিশ মনে রাখবেন, এতে ব্যক্তিত্বহানী হয় আপনারই। স্ত্রীর ভালোবাসা পাবার জন্য তরুণ সাজার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিটি বয়সের একটি ভিন্ন রকম সৌন্দর্য আছে। নিজের সেই সৌন্দর্যকে উপভোগ করুন আর ফুটিয়ে তুলুন ব্যক্তিত্বের মাঝে।
মানুষ হয়ে জন্ম নিলে বয়স বাড়বেই, আর বদলে যাওয়া বয়সের সাথে সাথে বদলে যাবে জীবনের অনেক কিছুই। এই পরিবর্তনের প্রতি হতে হবে উদার, তাকাতে হবে মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। পরিবর্তনকে ঠেকাবার চাইতে মেনে নিলেই বরং সুখে থাকা যায় বেশী।
0 comments:
Post a Comment