আর একটু পরেই গাড়িটা পৌঁছে যাবে সৈকতের গ্রামের বাড়ির গেটে। কিমির খুব ভয় করছে। শ্বশুরবাড়ীতে এটাই তার প্রথম ঈদ। একদিকে খুব মন খারাপ লাগছে মা বাবার জন্য অন্যদিকে নার্ভাস লাগছে, নতুন পরিবেশে ও মানিয়ে নিতে পারবে তো!
কিমির মত শ্বশুরবাড়ীতে এটাই কি আপনার প্রথম ঈদ? ভাবছেন কিভাবে নতুন পরিবেশে নতুন সব মানুষের সাথে এতো বড় একটা উৎসব পালন করবেন, সবার মন জয় করতে পারবেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। তাছাড়া ঈদের আনন্দ তো কেবল একদিন জুড়ে নয়, ঈদের পরও বেশ ২/১ দিন যাবত দাওয়াত, বেড়ানো আর অতিথি আপ্যায়ন চলেই। নতুন পরিবেশে নতুন মানুষের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াটা আসলেই বেশ কঠিন। তাহলে জেনে নিন চটজলদি কিছু টিপসঃ
সবাইকে কিছু না কিছু উপহার দিনঃ
চেষ্টা করুন সাধ্যের ভেতরেই সবার জন্যে কিছু না কিছু কেনার। খুব দামী কিছুই যে কিনতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। পরিবারের বয়স্ক সদস্যটির জন্য আরামদায়ক পাঞ্জাবী বা শাড়ী, আদুরে কিশোরী ননদের জন্য কিনতে পারেন মেকআপ করার সরঞ্জাম, মেকআপ বক্স দিতে পারেন আবার আলাদা করে লিপস্টিক, আইলাইনার, কাজল কিনে খুব সুন্দর করে একটা বক্সে র্যাবপিং করেও দিতে পারেন, কলেজ/ ভার্সিটি পড়ুয়া দেবরটির জন্যে দিতে পারেন ব্রেসলেট, ওয়ালেট অথবা ট্রেন্ডি কোন টিশার্ট। ছোট বাচ্চা থাকলে সহজেই দিতে পারেন রঙ পেন্সিল বা খেলনা। আর সদ্যজাত শিশু থাকলে তাকে যে সোনার আংটিই দিতে হবে এমনটা মোটেই নয়। বাজারে বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনীয় লোশন, বেবী কেয়ার কসমেটিক্সের বক্স পাওয়া যায়। পেয়ে যাবেন ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার ভেতরেই। এছাড়া যদি থেকে থাকে ভাসুর বা জা, তবেই জা কে দিতে পারেন ফ্যাশনেবল পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগ, অথবা ছোট্ট এক জোড়া রূপার কানের দুল, ভাসুর কে দিন ফর্মাল শার্ট বা ঘড়ি। আর এসব কিছুর পাশাপাশি দিতে পারেন সেরা উপহার, বই। তবে হ্যাঁ, মাথায় রাখবেন যাকে যা দিচ্ছেন তিনি সেটা পছন্দ করবেন কিনা। উপহার কেনার আগে লিস্ট করে নিন, বাজেট করে নিন আর অবশ্যি আপনার সঙ্গীর সাথে আলোচনা করুন। তিনিই আপনাকে এ ব্যাপারে সব চেয়ে বেশী সহায়তা করতে পারবেন।
পোষাকের ব্যাপারে সচেতন থাকুনঃ
পোষাকের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। আপনি হয়তো ক্যাজুয়াল পোষাক পরেই অভ্যস্ত। কিন্তু শ্বশুরবাড়ীর মুরুব্বীরা হয়তো সেটিকে ভালোভাবে নাও নিতে পারেন। এটি তাদের বা আপনার দোষ নয়। জেনারেশন গ্যাপের কারণেই এটি হয়। তাই ঈদের দিন পরার জন্য খুব ভালো হয় শাড়ী বা সালোয়ার কামিজ নির্বাচন করলে। একটা দিন একটু কম্প্রোমাইজ করুন না! সেই সাথে পোষাকটি পরার সময় শালীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজন হলে শ্বশুরবাড়ির সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে জিজ্ঞেস করুন, আপনাকে দেখতে ভালো লাগছে কিনা! এতে তিনিও খুশী হবেন আর সেই সাথে আপনিও তাদের সাথে মিশে যেতে পারবেন।
সাজসজ্জার ব্যাপারে সচেতন থাকুনঃ
সাজসজ্জার ব্যাপারে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। খেয়াল করবেন আপনাকে যাতে উগ্র না দেখায়। হাল্কা মেক আপ নিন ও চেষ্টা করুন যাতে মেক আপে ন্যাচারাল লুক ফুটে ওঠে ও আপনাকে স্নিগ্ধ দেখায়। সারাদিন আপনাকে অতিথি আপ্যায়ন ও আরো নানা কাজে ছোটাছুটি করতে হতে পারে। তাই ভারী মেকআপ নিলে তা ঘামে ভিজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওয়াটার প্রুফ মেকআপ ব্যবহার করুন। খুব তীব্র ঘ্রানযুক্ত সুগন্ধীর বদলে বেছে নিন হাল্কা ঘ্রানের পারফিউম এবং অবশ্যই ঘামের গন্ধ রোধে ভালো কোম্পানীর ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন।
অলংকার ও অন্যান্যঃ
নতুন বউ যেহেতু, অলংকার পড়লে ভালো দেখাবে আর শ্বশুরবাড়ীর লোকজনও পছন্দ করবেন ব্যাপারটা। কিন্তু খুব বেশী অলংকার পরার বদলে হাল্কা কিন্তু সুন্দর কিছু অলংকার পরতে পারেন। নূপুর পরলে ভালো দেখাবে কিন্তু খেয়াল রাখবেন তাতে যেনো খুব বেশী শব্দ না হয়, এতে ভালো লাগার বদলে বিষয়টা অন্যদের কাছে বিরক্তিতে পরিণত হবে।
বিনয়ী আচরন করুনঃ
চেষ্টা করুন সবার সাথে বিনয়ী আচরণ করতে। অনেক সময় অনেকের আচরন আপনার ভালো নাই লাগতে পারে। কিংবা কেউ কেউ আপনাকে হয়ত অনিচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু চেষ্টা করবে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া না দেখাবার। দরকার হলে পরে সময় বুঝে সেই মানুষটিকে বুঝিয়ে বলুন যে, আপনি তার আচরনে কষ্ট পেয়েছিলেন।
কিছু একটা রান্না করুনঃ
এতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুশী হবেন। তবে এক্সপেরিমেন্টাল কিছু করার দরকার নেই। এতে কোন কারণে খেতে ভালো না হলে সমস্যায় পড়ে যাবেন। যে রেসিপিটা আপনি ভালো করে পারেন এবং খেতে ভালো হয় সেটাই রান্না করুন। আর সব কিছু রান্না করতে চাইলে আগে আপনার শাশুড়ীর সাথে পরামর্শ করে নিন। কেননা হয়তো তার পরিকল্পনা থাকতে পারে স্পেশাল কিছু পরিবারের সবার জন্য রান্না করার। সেক্ষেত্রে দুজন মিলেই করুন। তাতে একসাথে কাজ করতে গিয়ে দুজনের বোঝাপড়াটাও জমে উঠবে চমৎকার।
ঘরের কাজে হাত লাগানঃ
চেষ্টা করুন, ঈদের আগে একটু সময় নিয়ে শ্বশুরবাড়ী যাবার। আগে আগে গিয়ে চেষ্টা করুন ঈদের প্রস্তুতিতে পরিবারের অন্যদের সাথে হাত লাগাতে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, ফোনে জে্নে নিন কি অবস্থা। কিছু কাজ আপনার জন্য রেখে দিতে বলুন। যাতে আপনি গিয়ে তাদের সাথে সহযোগিতা করতে পারেন।
আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকবেন নাঃ
নিজের পরিবার, বাবা-মা কে ছেড়ে নতুন পরিবেশে নতুন নতুন মানুষদের সাথে প্রথম ঈদ। আপানার মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে মন খারাপ করে বসে থাকবেন না। তাতে করে আপনার পাশাপাশি আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরও মন খারাপ হয়ে যাবে। তাই চেষ্টা করুন সবার সাথে মিলে মিশে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে। কাজে ব্যস্ত থাকুন। সময় কেটে যাবে। নিজের জন্যে না হোক, সবার জন্যে মন খারাপ ভাবটাকে একটু লুকিয়ে রাখুন।
খাবার সময় সচেতন থাকুনঃ
খাবার সময় সচেতন থাকুন। এমন কিছু করবেন না যা দৃষ্টিকটু দেখায়। মুখ বন্ধ করে খাবার চিবান, বেশী শব্দ করে বা একগাদা খাবার প্লেটে নিয়ে খেতে বসবেন না। খাবার সময় খুব বেশী কথা বলবেন না। অনেক বেশী সময় নিয়ে খাবেন না। এমন যাতে না হয় যে, সবাই খাইয়া শেষ করে উঠে গিয়েছে আর আপনি তখনো খাবার নিয়ে বসে আছেন।
হাসিমুখে থাকুনঃ
হাসিমুখে থাকুন। নতুন বউ এর মুখে হাসি দেখতে সবারই ভালো লাগবে। হাসিমুখের বিনিময়ে হাসিই উপহার পাবেন, এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন তা যেন উচ্চৈঃস্বরে বা অতিরিক্ত না হয়।
অতিথিদের সবাইকে কিছুটা হলেও সময় দিনঃ
অতিথিদের সবাইকে কিছুটা হলেও সময় দিন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করুন। কোন একজনের সাথে বেশীক্ষণ গল্প করার বদলে সবার সাথেই একটু একটু করে কথা বলুন। এতে সবার সম্পর্কে আপনার যেমন ধারনা হবে তেমনি আপনার সম্পর্কেও সবার একটি ভাল ধারনা হবে।
উপহার পেলে ধন্যবাদ জানানঃ
ঈদে শ্বশুরবাড়ী থেকে যদি কোন উপহার পান, তবে যিনি দিচ্ছেন তাকে ধন্যবাদ জানান, আপনার যে উপহারটি খুব পছন্দ হয়েছে তাও জানান। যদি আপনার উপহারটি পছন্দ নাও হয়, তবুও দেখান যে, আপনার পছন্দ হয়েছে, এতে উপহারদাতা খুশী হবেন। উপহারটি যদি হয় অলংকার বা পোষাক, তবে একদিন তার উপস্থিতিতে তা পরুন। তিনি খুশী হবেন।
উপরের টিপসগুলো অনুসরন করুন আর হয়ে উঠুন ঈদে আপনার শ্বশুরবাড়ীর মধ্যমনি আদরের বৌমা। মনে রাখবেন শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের মন জয় করাটা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এই ছোট্ট কাজটা করেই দেখুন না, আপনার জীবনসঙ্গী আপনাকে নিয়ে কতটা গর্ব বোধ করেন। আর কারো জন্য না হোক, স্বামীপ্রবরটির খুশির জন্যে এতোটুকু তো আপনি করতেই পারেন! শুভ হোক শ্বশুরবাড়িতে আপনার প্রথম ঈদ!
0 comments:
Post a Comment