বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যা আত্মার সাথে আত্মিক বন্ধন দ্বারা যুক্ত। বাবার শাসন, মা'র আদর, ভাই বোনের ভালবাসার পাশপাশি এই একটি মাত্র সম্পর্ক আছে যেটা কিনা সব চাইতে ভরসার। মনের সকল কথা যে মানুষটির কাছে রাখঢাক ছাড়াই বলা যায় নির্দ্বিধায়, চোখ বুজে ভরসা করা যায় যার ওপরে, সেই তো হচ্ছে বন্ধু। সারাদিন যে বন্ধুটির সাথে ঘুরে বেড়ান, জীবনের বড় একটি অংশ পার করেন যার হাত ধরে, সেই বন্ধুটির ভালমন্দের খবর রাখছেন আপনি? আপনার কাছের বন্ধুটির মনের খবর জানেন তো? অনেক সময়েই কিন্তু বন্ধুত্বে আমরা কেবল আশাই করি, প্রতিদান দিতে ভুলে যাই। কিংবা হুট করে পরিচয় দিয়ে ফেলি ভীষণ স্বার্থপরতার। অনেক সময়েই ভুলে যাই নিজের সুখ দুঃখের আপনজনের মনের খোঁজ নিতে। কাছের বন্ধুর সামনে কেমন বন্ধু হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন, আসুন আজ দেখে নেই জীবনের সেই অধ্যায়টা।
-আপনার কোন কাজে আপনার সহযোগিতা দরকার, কিন্তু কোন কারণে বন্ধু সাহায্য করতে পারলো না। হয় না এমন? হয়। বন্ধু সাহায্য করতে পারলো না, আর সাথে সাথে রেগে গেলেন আপনি। হয়তোবা কথা বলাও বন্ধ করে দেবেন। কিংবা আপনার পছন্দ অনুযায়ী কোন জায়গায় যাওয়া সম্ভব হল না, আর সাথে সাথেই তাকে আপনাকে খারাপ বন্ধু বলে অবহিত করে ফেললেন আপনি। যদি এভাবে বন্ধুকে নিয়মিত দোষ দিতে থাকেন এবং নিয়মিত চাপে রাখেন তাকে তবে কি নিজেকে একজন ভাল বন্ধু মনে হচ্ছে? চিন্তা করে দেখুনতো এমনটি সে আপনার সাথে করলে কেমন লাগত আপনার?
যদি এমন করে থাকেন আপনি তবে বুঝতে হবে বন্ধুত্তের সীমারেখা লঙ্ঘন করে চলেছেন আপনি। আপনার কারনে সে হয়ত সব সময় অপরাধবোধে ভুগছে সে। এভাবে চললে সে আপনার সাথে তার সম্পর্ক উপভগ করতে পারবে না। এক সময় তার দিক থেকেও একি ব্যবহার পাবেন আপনি। তখন আপনার জন্যও এমন সম্পর্ক হয়ে যাবে গলায় আটকে যাওয়া কাঁটার মত হয়ে যাবে। তাই সময় থাকতেই সব ঠিক করে নিন। বুঝতে হবে সে কেন আপনাকে সঙ্গ দিতে পারছে না। তার কোন কাজ থাকতেই পারে। একবার আপনাকে সময় দিতে না পারলে সে কোনওভাবেই খারাপ বন্ধু হয়ে যাবেনা। নিজের কথা ভাবুন, আপনিও কি সব সময় তার পাশে থাকতে পারেন? আপনার দিক যদি সে বিবেচনা করে তবে আপনারও উচিত হবে তার দিক বিবেচনা করা।
-জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন কারো না কারো সাহায্যের দরকার হয়ে পড়ে। তখন যার কথা সবার আগে মনে পড়ে সে হল বন্ধু। কিন্তু অনেকেই আছে যারা বিনা কারণেই সবসময় অন্যান্য বন্ধুদের মনোযোগের কেন্দ্রতে থাকার জন্য ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাহায্য চাযন। সাহায্য চাওয়া দোষের কিছু নয় কিন্তু অবস্থা বুঝে তা করা উচিৎ। এমনও হতে পারে যে বন্ধুর কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছেন তিনি হয়ত আপনার থেকেও বড় কোন ঝামেলায় পরেছেন ও সেই মুহূর্তে আপনাকেই তার বেশি দরকার। তাই কথায় কথায় বন্ধুদের সাহায্য চাইতে যাবেন না। আগে নিজে চেষ্টা করুন সমাধান করতে। না পারলে তখন বন্ধুরা তো আছেনই।
-বন্ধুদের সাথে নিজের কথাটি তো শেয়ার করবেই সবাই। আপনিও কেন ব্যতিক্রম হবেন? তবে শেয়ার করার আগে খেয়াল করুন তো শুধু কি আপনি নিজেই সব কথা বলে যাচ্ছেন সব সময়? বন্ধুদের কথা শুনছেন কি? তার ভাল মন্দ, নতুন কি করছে এসব কিছু জানতে চেয়েছেন কি? উত্তর যদি না হয় তবে নিজেকে বদলানোর সময় হয়ে গেছে কিন্তু। বন্ধুকে যেমন আপনার মনের খবর জানাচ্ছেন তেমন বন্ধুর মনে খবরও জানতে চান। তার উপদেশের যেমন আপনার দরকার তেমনই তার দরকারে সে যেন আপনার কাছে আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তার অসময়ে তার পাশে দাঁড়ান, ভরসা দিন। আত্মমগ্ন হয়ে থাকবেন না।
-বন্ধু আপনাকে সময় দেবে, আপনার সাথে কথা বলবে এটা স্বাভাবিক। তারমানে এই নয় যে আপনার বাইরে তার অন্য কোনও বন্ধু থাকবে না। হতে পারে আপনার অনেক কাছের বন্ধু তিনি, কিন্তু অন্য বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবেনা বা সময় কাটাবেনা তা কি হয়? আপনার কি সে ছাড়া অন্য কোন বন্ধু নেই যার সাথে আপনি সময় কাটান? মনে রাখবেন বন্ধুর নিজের আলাদা একটা জীবন আছে যেখানে তার অন্যান্য আরও বন্ধু আছে যারা আপনার মতই তার কাছে সময় আশা করে। অফিসের বন্ধু, স্কুলের বন্ধু বা কলেজের বন্ধু যেই হোক না কেন তার সাথে বন্ধুটিকে সময় কাটাতে দেখলে কষ্ট পাবেন না। একজন ভাল বন্ধু সব সময় চাইবে যে তার বন্ধুটি ভাল থাকবে সব সময়।
বন্ধুত্ব করার জন্য যেমন কোন নিয়মের দরকার নেই তেমনই বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্যও আসলে কোন নিয়ম নেই। শুধু দরকার একটু বিবেচনার। অন্যান্য সম্পর্ককে সময় দিতে দিতে অনেক সময় আমরা ভুলেই যাই আমাদের আত্মার এই পরম আত্মীয়কে তাদের প্রাপ্য স্থানটুকু দেবার কথা। আসুন পরম বন্ধুটিকে তার প্রাপ্য সম্মান ও ভালবাসা দিয়ে জানিয়ে দেই যে সে আমাদের কত আপন।
0 comments:
Post a Comment