স্তনে ব্যথা কিংবা চাকার অনুভূতিঃ কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?

স্তনে ব্যথা কিংবা শক্ত কোন পিন্ড অনুভব করার সমস্যাটির মুখোমুখি যে কোন মেয়েই জীবনের কোনো না কোনো সময় হয়েছে। সদ্য কৈশোর পার করা মেয়েটি তার স্তনের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন দেখে রীতিমত অবাক হয়, সেই সাথে স্তনে চাকা বা ব্যথার অনুভূতি তাকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার শংকায় শংকিত করে তোলে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ব্যথার বিষয়টি ডাক্তাররা বেশ ইতিবাচকভাবেই দেখেন, কারণ স্তনের কোন পিন্ড যদি প্রাথমিক পর্যায়েই ব্যথা করে তার মানে সেটি ক্যান্সার বা টিউমারে রূপ নেবার সম্ভাবনা খুব কম। স্তন ক্যান্সারে শুরুর দিকে একেবারেই ব্যথাহীন থাকে। তাছাড়াও যাদের বয়স তুলনামূলকভাবে কম (৩০ এর নিচে) তাদেরও ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কম থাকে। 

যেহেতু আমাদের দেশে নারীরা তাদের স্তনে কোনো সমস্যা হলে সেটি প্রকাশ করতে লজ্জা পান, তাই ঠিক কখন বা কি ধরণের সমস্যায় ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সেই ব্যাপারটি জানা থাকা অত্যন্ত জরুরী। ফলে কাজটি যেমন সহজ হয়ে যায়, তেমনি আপনার অকারণ ভয় আর ঝুঁকির হারও কমে যায়।

স্তনে অস্বাভাবিকতা দেখার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার স্তনের স্বাভাবিক অবস্থা বা ঝুঁকিহীন সমস্যাগুলো কী কী হতে পারে-

  • -প্রথমত বয়ঃসন্ধির পর থেকেই মেয়েদের স্তন একটি ছোট ও অপরটি বড় থাকতে পারে। আকারের খুব বেশি অসামঞ্জস্য বা দৃষ্টিকটু পার্থক্য না থাকলে এ নিয়ে ভাবিত হবার কিছু নেই। তবে লক্ষ্য করুন দুই স্তনের একই জায়গাগুলোতে ঘনত্ব সমান কী না! হাত দিয়ে অনুভব করলে দেখবেন আপনার স্তনের উপরের ও বাইরের দিকের অংশ একটু শক্ত ও দড়ি পাকানো বলে মনে হয়; কারণ এই এলাকা থেকেই স্তনগ্রন্থির শুরু। এর থেকে যত নিচের দিকে নামতে থাকবেন চর্বির কারণে তত নরম অনুভূত হবে।
  • -এছাড়াও প্রতি মাসে মাসিকের ঠিক আগে আগে বা মাসিকের সময় স্তনে ব্যথা বা পিন্ড অনুভূত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু লক্ষ্য রাখুন ব্যথা বা পিন্ডটি সেই মাসের মাসিকের পর বা পরবর্তি মাসিক পর্যন্ত থাকে কী না। যদি না থাকে তবে সেটা নিয়েও চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই।

তাহলে কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?

  • -প্রথমেই দেখবেন স্তনে অনুভূত হওয়া চাকাটি কি একেবারেই নতুন কী না, এর আগের কোনো মাসিকের সময় এর অস্তিত্ব টের পাননি এমন হয়েছিল কী না।
  • -নতুন অনুভূত অস্বাভাবিক-অস্বস্তিকর পিন্ডটি যদি পরবর্তী মাসিক পর্যন্ত থেকে যায় বা তুলনামূলকভাবে বড় হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।
  • -স্তনের শক্ত পিন্ডটির বৃদ্ধির হার লক্ষ্য করুন; যদি কয়েকদিনের মধ্যে খুব দ্রুত বড় হতে থাকে এবং ব্যথা না থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
  • -যদি দেখেন পিন্ডটি নড়ছে অর্থাৎ অনুভব করার সময় হাত থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে এবং তার নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বেশ দূরে চলে যাচ্ছে, তবে সেটা আপনার স্তনগ্রন্থির পরিবর্তন নির্দেশ করে, এমন পরিবর্তনে অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।  
  • -স্তনের ত্বকে কোন ধরণের পরিবর্তন হলে, যেমনঃ ত্বক বেশি লাল হয়ে গেলে, কোঁচকানো বা বলিরেখার মত দাগ সৃষ্টি হলে, ত্বকে টোল খেয়ে গেলে কিংবা পাউরুটির শক্ত অংশের মত শক্ত হলে দেরি না করেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
  • -স্তনের বোঁটার বেশ কিছু পরিবর্তনেও সচেতন হতে হবে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- স্তনের বোঁটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভেতরে ঢুকে গেলে কিংবা বোঁটা থেকে কোন ক্ষরণ নিঃসৃত হতে পারে। স্তন থেকে ক্ষরিত রস পানির মতো বা হলুদ, বাদামী, লালচে বিভিন্ন রঙেরও হতে পারে। এছাড়াও স্তনে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমনে হঠাৎ করে প্রচন্ড ব্যথা ও পুঁজ হতে পারে, এই সময়ে ডাক্তারের ছুরির নিচে গিয়ে পুঁজের বিনাশ ঘটানোটা হবে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।
বর্তমান সময়ে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এই হার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। নারীরা একটু সচেতন হলেই এই ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা অসম্ভব কিছু নয়।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!