সন্তান থাকে মা-বাবার অস্তিত্ব জুড়ে। সন্তানকে ঘিরেই গড়ে ওঠে তাঁদের পৃথিবী। আর সন্তান যদি হয় একমাত্র, তাহলে তো কথাই নেই! সমস্ত চিন্তা-চেতনা জুড়ে থাকে সে। সমস্যা তখনই হয় যখন পরিবারে দ্বিতীয় শিশুর আগমন ঘটে। পরিবারে নতুন শিশু এলে আলোচনা, চিন্তাভাবনা চলতে থাকে তাকে ঘিরেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা অসুবিধাতেই পড়ে যায় বড় সন্তান। এতদিন ধরে একা দখল করে থাকা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুটিতে ভাগ বসায় দ্বিতীয়জন। অনেক সময় বড় সন্তানের এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। এমনকি সে ঈর্ষাপরায়ণও হয়ে উঠতে পারে! বিশেষ করে মায়ের সময়ে একটু টান পড়াতে মনমরা হয়ে যায় শিশু। উদাসীন হয়ে পড়ে তার কাজকর্মের প্রতি। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় সন্তানকে ধাপে ধাপে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা উচিত।
গর্ভাবস্থার সময় :
- সন্তানকে নতুন ভাইবোনের আগমন সম্পর্কে জানান। যত তাড়াতাড়ি জানাবেন তত তাড়াতাড়ি ওর পক্ষে মানিয়ে নেয়া সহজ হবে।
- ওর সাথে এ ব্যাপারে এমনভাবে কথা বলুন যাতে ও সহজেই বুঝতে পারে।
- বড় সন্তানের বয়স যদি ৩-৪ হয় তাহলে ওকে নতুন শিশুর আগমনের সম্ভাব্য সময় মাস দিয়ে না বুঝিয়ে ঋতু দিয়ে বোঝান। যেমন ওকে বলতে পারেন, গরমকালে যখন খুব গরম পড়বে, তখন তোমার জন্য ছোট্ট একটা ভাই বা বোন নিয়ে আসব।
- সন্তানকে বলুন ওর সাথে খেলা করার জন্যই ভাই বা বোনকে নিয়ে এসেছেন।
- ছোট বাচ্চা সম্পর্কে উত্সাহ বাড়ানোর জন্য ওকে ওর ছোটবেলার ছবি দেখাতে পারেন। যেসব আত্মীয়ের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে, তাদের বাসায় ওকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন। বড় সন্তানকে সাথে নিয়ে হবু সন্তানের নাম ভাবতে পারেন।
- হাসপাতালে যাওয়ার সময় ব্যাগ গোছানোতে বড় সন্তানের সাহায্য নিন।
- আপনি হাসপাতালে থাকার সময় ওর যেন কোনো অনাদর না হয় বা দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত না ঘটে সবাইকে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলুন।
নতুন শিশুকে বাড়িতে আনার পর :
- বড় সন্তান যদি তার নতুন ভাই অথবা বোন সম্পর্কে কোনো আগ্রহ না দেখায় তাহলে অবাক হবেন না বা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন। এটা সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।
- বড় জন ছোট জনের কাজ নিজে থেকে করতে চাইলে বারবার ওকে বাধা দেবেন না। বরং ওকে কাজের সঠিক পদ্ধতিটি শিখিয়ে দিন।
- বাবা মা পালা করে বড় সন্তানের খেয়াল রাখুন। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, বড়জনকে আলাদা করে সময় দিন। এই সময় ওর সাথে ছবি আঁকুন, খেলুন বা গল্পের বই পড়ে শোনান।
- ওর সাথে গল্প করুন। বন্ধু এবং পড়াশোনার খোঁজখবর গল্প করতে করতেই নিন।
- বাচ্চা কথা না শুনতে চাইলে বুঝবেন যে ওর মনে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে। এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এবং প্রতিকার করুন।
- জেদ বা বায়না করলে মারধর করবেন না। ওকে বুঝিয়ে বলুন।
- নতুন শিশুর জন্য কিছু কিনে আনলে বড়জনের জন্যও তার পছন্দের জিনিস কিনুন।
- শিশুর প্রতিদিনের কাজে যেন কোনো পরিবর্তন না আসে। এতে সে নিজেকে অবহেলিত মনে করবে।
নতুন শিশুকে নিয়ে বড়জনের যে সমস্যাই থাকুক না কেন, তা সাময়িক। তাকে ঠিকঠাক মতো বোঝাতে থাকলে কিছুদিন পর আপনা থেকেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
0 comments:
Post a Comment