ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা। আজকাল বিয়ে হতে না হতেই অনেক দম্পতির ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে, অনেক দিনের পুরনো সংসারও ভেঙ্গে যাচ্ছে চোখের পলকে। এমনকি অনেক বছরের চেনা জানা থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসার সম্পর্কে ফাটল ধরছে। হুট করে ডিভোর্সের সিধান্ত না নিয়ে অনেক বার ভেবে চিন্তে নেয়া উচিত, কেননা ডিভোর্সের কারণে উভয় পক্ষেরই মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি হয়। ডিভোর্সের উপর করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কিছু বিষয় মেনে চললে ডিভোর্সের হার কিছুটা কমানো সম্ভব। আসুন জেনে নেই এমন ৫টি বিষয়।
১) টাকা নয়, সময় দিন নিজেদেরকে-
১৭৩৪ জনের উপর করা সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মিতব্যয়ী দম্পতিদের মধ্যে ডিভোর্সের প্রবণতা অন্যদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম। যেসব দম্পতি সারাদিন টাকার পেছনে সময় ব্যয় করেন ও ম্যাটেরিয়ালিস্টিক চাহিদা যাদের বেশি, তাদের মধ্যে ডিভোর্সের আশংকা বেশি থাকে। প্রফেসর জেসন ক্যারলের মতে ম্যাটেরিয়ালিস্টিক দম্পতিদের মধ্যে মানসিক যোগাযোগ কম থাকে এবং একজন আরেকজনের প্রতি কম অনুভূতিশীল থাকেন।
২) স্ত্রীকে কাজে উৎসাহী করুন-
শুনতে অদ্ভুত শোনালেও ফেমিনিসম দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য সুফল বয়ে আনে। স্ত্রী কর্মজীবি হলে সেটা দাম্পত্যের জন্য ভালো। ফ্যামিলি স্টাডিজের স্কলার স্টেফানি কুন্টজ এর গবেষনা মতে ইউনাইটেড স্টেটস এর যেসব শহরে ৭০% এর উপর নারীরা কর্মজীবি সে সব শহরের ডিভোর্সের রেট লক্ষ্যনীয় ভাবে অনেক কমে গেছে। কুন্টজ এর মতে নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করা দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য ভালো।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে কর্মজীবী নারীর সংসারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ঘরে বাইরে সমান কাজ করেন। যার ফলে তাদের মধ্যে ভালোবাসা ও শেয়ারিং এর মনোভাব সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়।
৩) একটুখানি দূরত্ব থাকতেই হবে-
অনেকেই ভাবেন সুখী দম্পতি মানেই সারাক্ষণ একসাথে থাকতে হবে ও সব কাজ এক সাথে করতে হবে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। নিজের কিছু প্রাইভেসি থাকা উচিত। নিজের জন্য আলাদা ভাবে সময় রাখা উচিত দুজনেরই। নিজের শখ পূরণ করুন, একা একা নিজের কাজ করার অভ্যাস করুন অথবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসুন। আপনার সঙ্গীকেও কিছুক্ষণ একা থাকতে দিন। সবসময় এক সাথে সব জায়গায় যেতে জোর করবেন না। দুজনেরই ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকলে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি কম হয়।
৪) স্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক-
যৌন সম্পর্ক বিহীন কোনো দাম্পত্যই সফল হয়না। গবেষণায় দেখা গেছে যে যে সব দম্পতি বিভিন্ন দাম্পত্য সমস্যায় ভুগে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের প্রায় সবারই সাধারণ সমস্যা ছিল যৌন জীবনে অশান্তি। দীর্ঘ মেয়াদী সুখী দাম্পত্য জীবন পেতে চাইলে সঙ্গীর শারীরিক চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
৫) সুন্দর মুহূর্ত গড়ে তুলুন-
প্রতিদিন অন্তত একবারের জন্য হলেও রোমান্টিক হয়ে যান। হাসি দিয়ে কথা বলা, ছোট উপহার দেয়া, একটা ফুল অথবা আর কিছু না হলে একটা ধন্যবাদ হলেও দিন আপনার সঙ্গীকে। দুজনে মিলে দাম্পত্যের প্রথম দিকের সুন্দর সময়গুলো মনে করুন। যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিলো মাঝে মাঝে সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পুরনো চিঠি, ছবির অ্যালবাম বা কার্ডগুলো একসঙ্গে বসে দেখে স্মৃতিরোমন্থন করতে পারেন। তাহলে দাম্পত্যে চির ধরার সম্ভাবনা অনেক খানি কমে যাবে।
0 comments:
Post a Comment