দীর্ঘদিন একসাথে থাকার পর জীবনসায়াহ্নে এসে অনেককেই দেখা যায় জীবনসাথীর সাথে ঝগড়া করতে! হয়তো তাঁরা আগে কখনোই ঝগড়া করেননি, শেষ বয়সে এসে করছেন। আবার এমনও হতে পারে আগে তাঁদের মধ্যে খুব বেশি ঝামেলা হতো না, এখন প্রায়শই হচ্ছে! আসলে দীর্ঘদিন একত্রে সংসার করলেই যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সব বিষয়ে এক মত, সামঞ্জস্য বা সমঝোতা থাকবে, তা কিন্তু নয়! বরং এমনও হতে পারে দীর্ঘসময় একসাথে কাটানোর ফলেই তাঁরা একে অপরের সাথে অমিলগুলো চূড়ান্তভাবে টের পান। এর ফলে ঝগড়া হওয়াটা স্বাভাবিক। এই ঝগড়াটা নিজেদের মধ্যে থাকলে কোনো সমস্যা হয় না।
তবে ঝগড়া যখন গড়িয়ে গড়িয়ে পৌঁছে যায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে, তখন তা বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বেশির ভাগ ভোগান্তি পোহাতে হয় বউমা অর্থাত্ পুত্রবধুকে। কারণ মেয়েরা বিয়ে করে চলে যায় শ্বশুরবাড়িতে আর ছেলেরা থাকে সারাদিন ঘরের বাইরে, কাজে। ফলে শ্বশুর-শাশুড়ির ঝগড়া মেটাতে বা মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসতে হয় পুত্রবধুকেই! এতেও আবার রয়েছে অন্যরকম ঝামেলা। এ সময় একজনের পক্ষে কথা বলতে গেলে অন্যজনের মুখ হয়ে যায় ভার। আবার, তাঁরা বয়সে বড় বলে কড়া কথা বলে শাসনও করা যায় না। ফলে শ্বশুর-শাশুড়ির ঝগড়া পুত্রবধুর জন্য হয়ে ওঠে অশান্তিকর। বাড়ির এবং নিজের হাজারো কাজ সামাল দিয়ে নিত্যদিনের এই ঝগড়া মীমাংসা করা পুত্রবধুর পক্ষে সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু সমস্যা সমাধানের চেষ্টা তো করতেই হয়!
পুত্রবধুর প্রতি :
*নিজে থেকে এগিয়ে যাবেন না বা মতামত দেবেন না। তাঁদের সমস্যাটা প্রাথমিকভাবে তাঁদেরই সামলে উঠতে দিন।
*যখন পরিস্থিতি ভালো থাকে তখন কথা প্রসঙ্গে জেনে নিন যে আসলে তাঁদের মধ্যে ঠিক কী সমস্যা হচ্ছে।
*দুজনকে আলাদা আলাদা ভাবে বোঝান। কখনোই একজনের কাছে অন্যজনের দোষ দিয়ে বা সমালোচনা করে কথা বলবেন না। এতে পরিণতি উলটো হতে পারে।
*শ্বশুর-শাশুড়িকে বুঝিয়ে বলুন যে তাঁদের চিত্কার চেঁচামেচির আওয়াজ বাড়ির বাইরে গেলে প্রতিবেশীরা এ নিয়ে ভালো-মন্দ কথা বলতে পারে। এবং এতে তাঁদের সম্মানহানি হবে।
*বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সাথে আলোচনা করুন। তাঁরা তো আপনার স্বামীরই বাবা-মা, তাই কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিলে ভালো হয়, এ ব্যাপারে স্বামীর পরামর্শ নিন।
*মাথা গরম করবেন বা দিশেহারা হবেন না। মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বিচার করুন এবং সেই অনুযায়ী সামাল দিন।
*আপনার শ্বশুর-শাশুড়ির বয়স, স্বভাব, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বুঝে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, সব মানুষ এক রকম হন না, তাই সবার ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা কাজ নাও করতে পারে।
*এই সমস্যা নিয়ে আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা করবেন না। এতে আপনার পরিবারই অন্যের কাছে হাসির খোরাক হয়ে উঠবে। যদি কেউ নির্ভরযোগ্য থাকে পরিচিতদের মধ্যে তবেই আলোচনা করুন।
*শ্বশুরের ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলুন। তাঁরা বোঝালে হয়তো কাজ হতে পারে। শাশুড়ির সাথে নিজেই কথা বলুন।
*একটা বয়সের পর কোনো মানুষকেই পুরোপুরি বদলে ফেলা যায় না, এটা নিজে মনে রাখুন এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে বোঝান। আপাতত পরিস্থিতি সামলে উঠে তবেই তাঁদের স্বভাব ও কর্মকাণ্ড বদলে ফেলার কথা ভাবুন।
0 comments:
Post a Comment