অভিভাবক-সন্তানের সম্পর্ক

পৃথিবীতে একটি শিশুর সব থেকে বড় আপনজন এবং প্রথম বন্ধু হয় তার বাবা মা। বিশেষ করে মায়ের সাথে জন্মের আগেই গড়ে উঠে নিবিড় মমতা আর নির্ভরতার একটা গভীর সম্পর্ক। আর মা বাবার জন্য নিজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে তার সন্তান। পরম আরাধ্যের সেই সন্তানের সাথে কিভাবে আচরন করতে হবে তা কি আমরা কখনও ভেবে দেখি?

বাবা মা যেহেতু সন্তানের সব থেকে কাছের মানুষ তাই সন্তান সব সময় তাদের দিকেই সব বিষয়ের জন্য তাকিয়ে থাকে। বাচ্চারা যেহেতু অনুকরণ প্রিয় তাই সবার আগে তারা নিজের বাবা মা কেই অনুকরণ করতে শিখবে এইটাই স্বাভাবিক। তাই প্রত্যেক অভিভাবককেই সাবধানী ও কৌশলী হতে হবে নিজের সন্তানের সাথে কি রকম আচরণ করবেন সেই ব্যাপারটি নিয়ে। মনে রাখবেন আপনারাই কিন্তু তার জীবনের প্রথম শিক্ষক। আপনি তাকে যেভাবে গড়ে তুলবেন, সে সেভাবেই গড়ে উঠবে।
  • যেহেতু আপনি তার জীবনের প্রথম আপনজন তাই আপনার আচরন তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ রাখার চেষ্টা করবেন। এই জন্য তার সাথে শেয়ার করার মানসিকতা তৈরি করুন। বাসার কোন কাজে সিদ্ধান্ত নিতে হলে তার মতামতটাও নিয়ে নিবেন। শুধু দরকারে নয়, হাসি ঠাট্টার ছলে এমনি যেকোনো বিষয় শেয়ার করতে পারেন। এতে আপনার সন্তানের মধ্যে সুস্থ মানসিকতার বিকাশ ঘটাবে। শুধু যে আপনি শেয়ার করবেন তা নয়। তাকেও শেয়ার করতে শেখাবেন। তার কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তার মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। এতে তার মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা গড়ে উঠবে, সেই সাথে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।
  • বাচ্চা মানুষ, ভুল তো করতেই পারে। তাই বলে বেশি বকা-ঝকা করতে যাবেন না। আর মারবেন না অবশ্যই। কোন দোষ করে ফেললে তাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলুন। তার ভুলের কারণে কি কি খারাপ হয়েছে বা হতে পারে তা বুঝানোর চেষ্টা করবেন। ভবিষ্যতে যেন এমন ভুল আর না করে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলুন।
  • পরিবারে যদি একাধিক সন্তান থাকে সে ক্ষেত্রে দেখা যায় বড় বা ছোট সন্তানটি বেশি আদর পেয়ে থাকে। একজনকে বেশি স্নেহ ও আদর পেতে দেখলে অপর জন কষ্ট পেতে পারে। বাবা মার কখনই উচিত নয় এমনটা করা। সবাইকে সমান চোখে দেখার অভ্যাস করুন। দুজনেই আপনার সন্তান।
  • সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। অবসরে একসঙ্গে টিভি দেখুন, কম্পিউটারে গেমস খেলুন। পরিবারের সবাই মিলে বাইরে থেকে ঘুরে আসুন।
  • আপনি কোন কাজ করতে শুরু করলে তাকেও সাহায্য করতে ডেকে নিন। তাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলুন। যেন নিজের ছোটখাটো কাজ সে নিজেই করে নিতে পারে।
  • তার উপরে বিশ্বাস রাখুন। আপনাকে না জানিয়ে সে কোন ভুল করে ফেলতে পারে এই ধারনার বশবর্তী হয়ে তাকে সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ মনভব আপনাকে আপনার সন্তানের থেকে দূরে ঠেলে দিবে। আপনি তার উপরে বিশ্বাস রাখছেন এটা সে জানলে আপনার উপরেও সে একই ভাবে বিশ্বাস রাখতে শিখবে সেই সাথে আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করার মতন কোন কাজ করবেনা।
  • সব থেকে জরুরি হল তাকে শ্রদ্ধা করতে শেখান। মনে রাখবেন কারো শ্রদ্ধা পেতে হলে তাকে শ্রদ্ধা করতে হয়। তাই তাকে তার প্রাপ্য শ্রদ্ধা দিন। সেও আপনাকে শ্রদ্ধা করবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে বিশ্বাস, বন্ধুত্ব এসব কোন কিছুই থাকবে না।
সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে সুন্দর মানুষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রত্যেকটি অভিভাবকের থাকবেই, তাই বলে ভুলে যাবেন না যে সে একটি ছোট শিশুই কিন্তু। তাই জোর করে কোন কিছুই করতে যাবেন না। তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন, ধীরে ধীরে সব কিছু শিখিয়ে তাকে ভালো মানুষ হিসাবে তৈরি করুন।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!