সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাবার মত শান্তি আর কিসে আছে ! ঘুম শরীরকে সতেজ রাখে, প্রাণচাঞ্চল্য এনে দেয় দেহ ও মনে। তাই স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্যে ঘুমের জন্য্ বরাদ্দ থাকা চাই পর্যাপ্ত সময়। ঘুম নিয়ে করা সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো অবশ্য ঘুমকে শুধু সজীবতার টনিক হিসেবে দেখছেনা; বরং শরীর ও মনের ভারসাম্য বজায় রেখে সুস্থ জীবন যাপন করতে ঘুমের অশেষ প্রয়োজনীয়তাগুলো তুলে আনছে চোখের সামনে।
ঘুম আমাদের দৈনন্দিন কাজের ফলে মস্তিষ্কে জমা হওয়া বিষাক্ত পদার্থগুলোকে মস্তিষ্ক থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। স্বাভাবিক কাজের সময় মস্তিষ্ক এ কাজ করতে পারেনা। তাই তার দরকার হয় কিছু অবসর সময়ের। ব্যাপারটা অনেকটা আপনার ঘরে পার্টি আয়োজনের মত যখন আপনি হয় মেহমান আপ্যায়ন করবেন অথবা ঘর গোছাবেন। কিন্তু দু’টো কাজ কি একসাথে করতে পারবেন? না । মস্তিষ্কের বেলায়ও ব্যাপারটি তেমন কারণ একই সাথে দু’টি কাজ করার মত যথেষ্ট শক্তি মস্তিষ্কের দখলে একই সময়ে থাকেনা ।
মস্তিষ্কে খুঁজে পাওয়া গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম এর উপর ভিত্তি করেই এ তথ্যগুলো জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা যার কাজ হচ্ছে ঘরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার মত মস্তিষ্ক থেকে বিষাক্ত আবর্জনাগুলোকে বের করে দেয়া। ইঁদুরের উপর করা এ গুবেষণায় দেখা গেছে যে ঘুমন্ত ইঁদুরে এই গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম জেগে থাকা ইঁদুরের চেয়ে ১০গুন বেশি সক্রিয় থাকে।
মস্তিষ্কের গ্লিয়াল কোষ যা সম্ভবত স্নায়ু কোষগুলোকে সজীব রাখে তা ঘুমানোর সময় সংকুচিত হয়ে যায় । ফলে কোষগুলোর মধ্যকার ফাঁকাস্থান এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অধিক পরিমাণ তরল মস্তিষ্কের ভেতরে প্রবেশ করে সকল ক্ষতিকর আবর্জনাকে মস্তিষ্ক থেকে বের করে দেয়। বেঁচে থাকার জন্যে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া কিন্তু জেগে থাকার সময় এই কাজ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন এই গবেষণার জড়িত বলেন ড নেডারগার্ড।
এই গবেষণার আরেকটি ভাল দিক হচ্ছে এটা ঘুম কিভাবে মস্তিষ্কের কোষের কার্যকারিতা ফিরিয়ে দিতে পারে এবং অনেক সুরক্ষাকারী ভূমিকা পালন করে তা প্রমাণ করতে পারে। আলঝেইমার বা পার্কিন্সন্স এর মত মস্তিষ্কের অনেক জটিলতাই মস্তিষ্কে জমা হওয়া অকার্যকর প্রোটিন থেকে হতে পারে। গবেষকেরা মনে করেন এসব প্রোটিন মস্তিষ্ক থেকে কার্যকর ভাবে নিষ্কাশনের অভাবই ঘটাতে পারে এমন রোগ। তবে আরো গবেষণা করে তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চান।
0 comments:
Post a Comment