অনেক দম্পত্তি ভালোবেসে কিংবা পারিবারিকভাবে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন কিন্তু সব সংসার কি সুখের হয়, হয়না ? কেন সুখের হয়না তা বিয়ের আগে কোনো ছেলে-মেয়েই জানেনা । যখন জানে তখন আর তাদের কিছুই করার থাকেনা । না পারে সংসার ভেঙ্গে দিয়ে আগের অবস্তানে ফিরে যেতে, না পারে সুখের মুখ দেখতে, বাধ্য হয়ে কষ্টের নীল্ সাগর পাড়ি দিতে হয় । আর মাঝে মাঝে পুরাতন প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে নির্জনে শেয়ার করতে হয়, আর মেনে নিতে হয় যে 'আবার যদি ফিরে আসি, জীবনে আর কোনদিন বিয়ে করবনা'। কিন্তু কেউ ভেবে দেখেনা কেন এমন হয়, কেন আমরা সুখের মুখ দেখতে পারিনা, কেন আমাদের মুহুর্তগুলো রঙিন হয়না, কেন আমরা ভালবাসা আর প্রেমের মুহুর্তগুলো সারা জীবন লালন করতে পারিনা।
অপরিপক্কতা : একদিন গভীর রাত পর্যন্ত কম্পিউটারে কাজ করছি, কারণ পরের দিন ছুটির দিন, হটাত পাশের ফ্লাটের একটা মেয়ের চিত্কার শুনতে পেলাম, ভাবলাম এত রাতে আবার কি হলো, একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে পেলাম কোনো একটা অন্তরঙ্গ বিষয় নিয়ে স্বামী স্ত্রী ঝগড়া হচ্ছে, যেটা আমার রুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে । তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ঝগরাটা একেবারে কম নয়। আমি অনেক সময় ধরে বিষয়টা নিয়ে ভাবছি, যে ছেলেটা ও মেয়েটা দুজনেই বয়স বিশ এর কাছাকাছি, দেখতেও সুন্ধর, পারিবারিক অবস্তাও খুব খারাপনা । তাহলে কেন এই মাঝ রাতে ঝগড়া, তার একটাই কারণ যে তারা কেহই পরিবার, সংসার, ভালবাসা এগুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন নয় । তারা জানেনা, একটা সংসার কিভাবে সুন্ধর করে সাজাতে হয়, কিভাবে দুজনের ত্যগ ও সহমর্মিতা দিয়ে একটা সংসার টিকিয়ে রাখতে হয়, কিভাবে সঙ্গিনীর প্রতি ভালবাসার হাতগুলো প্রসারিত করতে হয়, কিভাবে কাজের মাঝে দুজনের প্রতি সেক্রিফাইস করতে হ, এমন কি কিভাবে মাঝ রাতে বেলকুনিতে বসে তারা দেখতে হয়, কিভাবে পূর্নিমার জলে স্নান করতে হয় । তাই এসব সংসারে প্রতি মুহূর্ত কলহ লেগেই থাকে, তার পর ধীরে ধীরে এক সময় দুজন আলাদা জগতের বাসিন্ধা হয়ে যায় ।
অর্থনৈতিক : আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে অনেক কম বয়সে ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করে, হয়ত অনেক সময় আর্থিকভাবে সচ্ছল না হয়েই। এর কারণ : কোনো কোনো পরিবারে দাদা-দাদী বৃদ্ধ মানুষ নাত বউ দেখতে চান তাই মা-বাবা ছেলেকে তারাতারি বিয়ে করান, আবার কেউ কেউ আর্থিকভাবে সচ্ছল না আসার আগেই মা-বাবাকে না জানিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন । আবার কেউ কেউ খুব অল্প বয়সে লেখা পড়া বাদ দিয়ে চাকুরী নিয়াছে কিংবা বাবার ব্যবসা দেখছে, ছেলে কাউকে পছন্ধ করেছে মা-বাবা বাধ্য হয়ে বিয়ে করান, এসব সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে । কারণ বিয়ের পর ছেলে সংসারের সব খরচ মিটিয়ে আধুনিক মেয়েদের ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়াগুলো পরিপুনভাবে মেটাতে পারেনা, তাই এসব সংসারে সুখ না থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অর্থই সুখের পথে বাধা হয়ে দাড়ায় ।
বিলাসিতা : অনেক ছেলে প্রেমের শুরুতে প্রেমিকাকে খুশি করা, প্রেম টিকিয়ে রাখার জন্য সাধ্যের বাইরে গিয়ে প্রেমিকার জন্য অনেক কিছু করে, কিন্তু এদের যখন বিয়ে হয়, তখন ওই ছেলে আগের মতো বিলসী জীবন যাপন করতে পারেনা, কিংবা করার ইচ্ছাও করেনা, এটাও সত্যি একজন প্রেমিকার জন্য যা করা হয় স্ত্রীর জন্য তা করার কোনো যুক্তি নেই । আর করেনা বিধায় বিয়ার পর সংসারে অশান্তি চলে আসে । সংসার সুখের হয়না ।
অজানা : প্রেমের বিয়েতে সাধারণত এই সমসাটা বেশী হয়, যখন প্রেম করে তখন দুজন দুজনকে সম্পূর্ণভাবে জানেনা, জানতে পারেনা কিংবা জানার সময়ও পায়না, আবার কারো কারো জানার ইচ্ছাও হয়না । আর এই অজানা ও অনিচ্ছাই সংসার জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় । যেমন, একটা মেয়ে বা ছেলে যখন প্রেম করে, কাছাকাছি আসে তখন তারা সারাদিনে হয়ত এক ঘন্টার জন্য দুজন দুজনের কাছে আসে, অনেক ব্যক্তিগত বিষয় (যেমন, তার সেক্স, ঘুম, শরীলের ঘন্ধ, খাবার, রাজনৈতিক দল) সম্পর্কে জানা হয়না ।
(ক) সেক্স : অনেক ছেলে ও মেয়ে আছে যাদের সেক্ষুয়াল চাহিদাটা একটু কম থাকে, এ বিষয়গুলো তেমন ভালো লাগেনা, তখন সঙ্গিনীর কাছে জীবনটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, যার জন্য প্রতি রাতে অশান্তি লেগেই থাকে । (তাই বলে বিয়ের আগে সেক্স করার কথা বলছিনা, হয়ত বিয়ের আগে এ আলাপ আলোচনা করে দেখা যেতে পারে )
(খ) ঘুম : অনেক ছেলে ও মেয়ে আছে যারা ঘুমালে মুখ থেকে লালা পরে, বালিশ ভিজে যায় খুব খারাপ একটা অভ্যাস যা সঙ্গিনীর কাছে বিরক্তিকর ।
(গ) শরীরের ঘন্ধ : প্রতিটি মেয়ের শরীর থেকে একটা আলাধা ঘন্ধ আসে, কারো কারোটা ভালোলাগার, কারোটা বিচ্ছিরি খারাপ, কিন্তু আপনি যখন প্রেম করেছেন তখন হয়ত মেয়েটি এক ঘন্টার জন্য আপনার কাছে এসেছে, সেন্ট মেরে এসেছিল, আপনি বুঝতে পারেননি । কিন্তু বিয়ের পর প্রতিটি রাতেতো সেন্ট মেরে ঘুমাতে পারবেনা, তখন ওই বিচ্ছিরি খারাপ ঘন্ধটা আপনার সংসার জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে ।
(ঘ) খাবার : দেখা গেলো আপনি অনেক খাবার খুব বেশি পছন্ধ করেন, আপনার সঙ্গিনী সেটার উল্টা, তাহলে সারা জীবন আপনাকে এই জামেলায় পোহাতে হবে, এটার জন্য সংসারে ঝামেলা হয়।
(ঙ) রাজনৈতিক দল : এই কারনটা অনেক সময় সংসার জীবনে শান্তি -অশান্তির বড় কারণ হয়ে দাড়ায় । আমি এই কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে যেতে দেখেছি। তাই বিয়ের আগে রাজনৈতিক আলাপটা সেরে নিলে ভালো হয়, যাতে সংসার জীবনে আর প্রভাব না পরে ।
চরিত্রহীনতা : উপরের কারণগুলোর সাথে এই কারণটাও জড়িত, কারণ উপরের বিষয়গুলো যখন বিপরীত হয়ে দেখা যায়, তখন চরিত্রহীনতার বা পরকিয়ার বিষয়গুলো চলে আসে । আবার অনেক সময় মা-বাবা না জেনে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে করান, চরিত্রের এই বিষয়গুলো নজর রাখেন না । যা পরবর্তী জীবনে অশান্তির কারণ হয় দাড়ায়। আবার কেউ কেউ হয়ত আছেন, চরিত্রের বিসয়্গুলো দেখেন না, চেহারা সুন্ধর হলেই হলো । সেই জোকটার মতো, 'ভালো জিনিস সবাই মিলে ভাগ করে খেলেও শান্তি'।
পুরাতন প্রেম : অনেক সময় বিয়ের আগে ছেলে-মেয়েদের বেসামাল প্রেম থাকার কারণে মা-বাবা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয় । সেই সংসারে একটু মনোমালিন্য হলেই তখন সেই পুরাতন মানুষটাকে আমরা সবাই মিস করতে থাকি । আমরা মনে করি হয়ত আজ ও (পুরাতন প্রেম) হলে আমাকে এভাবে অপমান করতনা, ঝগড়া করতনা, ইত্যাদি । আবার কোনো কোনো সময় কেউ কেউ অকারণেই সেই পুরাতন প্রেমের কাছে ফিরে যায়, আবার কেউ কেউ মা-বাবার দেয়া বিয়ের সংসারে ইচ্ছা করেই অশান্তি সৃষ্টি করে, সেটা এমনকি বিবাহ ভাঙ্গা পর্যন্ত পৌছে যায় ।
অসামঞ্জস্যতা : অনেক সময় ছেলে-মেয়ের মাঝে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা এবং রূপের অসামঞ্জস্যতার কারণে সংসারে অশান্তি বিরাজ করে । যেমন ছেলের বাবা কিংবা মেয়ের বাবা যদি একজন আরেকজনের চেয়ে গরিব হয়, ছেলে বা মেয়ে একজন আরেকজনের চেয়ে বেশি অসুন্ধর হয়, একজন আরেকজনের চেয়ে সামাজিক মর্যাদা কম হয় তাহলে সংসারে অশান্তি হতে পারে । তাই বিবাহের আগে এই বিষয়গুলো নজরে রাখা দরকার ।
আনরোমান্টিক : এই একটা বিষয় উল্লেখ না করে পারা যায়না । অনেক সংসারে এই একটা বিষয়ের জন্য মনোমালিন্য, অশান্তি, কলহ লেগেই থাকে । উপরের সব বিষয়গুলো পরিপূর্ণ থাকলেও এই একটা জিনিসের কমতি জীবনের অনেক কিছুই কমিয়ে দেয় । আজকাল টিভি চ্যানেলগুলো যেভাবে রোমান্টিক আর প্রেমের নাটক, সিনেমা দেখায় তাতে সব ছেলে-মেয়েদের মনেই চায় তার সঙ্গী এভাবেই তার সাথে কথা বলুক, তাকে ভালোবাসুক, আদর করুক, তাকে নিয়ে বেড়াতে যাক ।
(ক) ছেলে : সব ছেলেরাই চায় তার বউকে সুন্ধর লাগুক । এভাবে চুল কাটুক, পার্লারে গিয়ে ভুরু প্লাগ করুক, সারাদিন সুন্দর করে সেজেগুজে থাকুক । বউকে নিয়ে ছুটির দিনের শেষ বিকেলটাতে সুন্দর একটা শাড়ি পরে কোনো কফি সপে সময় কাটাতে, কিংবা অফিস থেকে এসে যেন দেখে, তার বউ শাড়ি পরে হাতে কফি নিয়ে দাড়িয়ে থাকবে, তার গলাটা জড়িয়ে ধরে বলবে 'আজ সারাদিন কি ব্যস্ত ছিলে, আজ খুব কষ্ট হয়েছে না ?' এসবের বাইরে হলেই মন খারাপ, (বেশি টাকা থাকলে) বারে গিয়ে বসে থাকা, অধিক রাত করে বাসায় ফেরা, সংসারে শান্তি নেই বলে কলিকদের সাথে শেয়ার করা ।
(খ) মেয়ে : সব মেয়েরাই চায় তার স্বামীকে পাসের ভাইয়ের চেয়ে একটু বেশী স্মার্ট, একটু বেশী ভালো লাগুক। তার স্বামী অফিস থেকে ফিরে সন্ধা বেলা একটু বের হোক, পারার মাথার দোকানটায় নিয়ে দুজনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুসকা আর চটপটি খেতে। ছুটির দিনে তাকে নিয়ে কথাও ঘুরে আসুক। মাস পছন্দের ড্রেসটা কিনে অনুক, তার বাধ্যগত থাকুক। একটু বেশি রোমান্টিক হোক, তবে বোকা নয়। বাংলা স্রিয়ালের পাখির নায়কের মত। এই চাওয়া -পাওয়ার বাইরে হলেই সংসারে অশান্তি।
কেউ কেউ বলে সুখ শান্তি এগুলো নাকি ভাগ্যের ব্যাপার, আবার কেউ বলে ভাগ্য বলে কিছু নেই । তবে হটাথ করে কাউকে না জেনে এক দুদিনের পরিচয়ে কাউকে বিয়ে করে ঘরে আনা উচিত নয় । বিয়ের আগে অন্তত ছয়টা মাস তাকে চিনে জেনে উপরের বিষয়গুলো পরখ করে বিয়ে করবেন / করা উচিত । কারণ বিয়েটা একদিনের জন্য নয় আর সমাজে যদি আপনার একটু পরিচিতি থাকে তবে আপনি চাইলেও বার বার বউ পাল্টাতে পারবেন কি ? আর একটা কথা মনে রাখবেন টিভির মডেলদের মত কখনই আপনার বউ হবেনা । সিনেমা, নাটক এগুলো নির্দিষ্ট একটা সময়ের, এখানে বিরতি, কাট আছে, কিন্তু আমাদের জীবনে কোনো বিরতি নেই, কোনো নির্দিষ্ট সময়ও নেই ।
ফেইসবুক
0 comments:
Post a Comment