ভালবাসা-ভাল কিছু নয় ।


বন্ধুত্ব প্রায় সময়ই ভালবাসায় রুপান্তরিত হয়, কিন্তু সে ভালবাসা একবার ভেঙ্গে গেলে আর বন্ধুত্বে ফিরে আসা যায়না । যেমন; একদিন দুজন মানুষ জুকারবার্গের দুনিয়ায় শুধু একে অপরের বন্ধু ছিল । তারপর দুজন দুজনের দিকে চোখ পড়ল । সবার স্টাটাস এড়িয়ে শুধু তার স্টাটাস পড়তে শুরু করল। তারপর শুরু হলো চ্যাটিং । দেখা হওয়ার প্রত্যাশা । একদিন দেখা হলো-ফোন নম্বর আদান-প্রদান হলো । তারপর তারা বন্ধু হলো এবং সবার থেকে আলাদা করে ভাবতে শুরু করলো । দুজনের প্রতি অধিকার জন্মাতে শুরু হলো, অতিরিক্ত কেয়ারিং, আলাদা করে দেখা করা, তারপর একদিন ভালবাসা । ধীরে ধীরে অধিকারের মাত্রা আরো বেড়ে গেল, ছোট্ট ছোট্ট অপরাধ বড় আকারে ধরা দিতে লাগল । তারপর একদিন সে ভালবাসা ভেঙ্গে গিয়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ ।

কখনো কখনো ভালবাসা মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে । মানুষকে নিজের করে নিতে ভাবতে শেখায়, আমার শব্দটির উপরে গুরুত্ব অনুদাবন করায় । যেমন ধরুন; একঝাক তুরন-তরুনী আর হাসিখুসি জীবন । এর মাঝে একটা ছেলে আলাদা করে একটা মেয়েকে নিয়ে ভাবতে শুরু করল, স্বপ্ন দেখতে শুরু করল, তার ভাললাগাগুলি জানতে চেষ্টা করল, কেয়ার করতে লাগল, দুঃখ শুনতে লাগল, শান্তনা দিতে থাকলো, সাহায্য করতে লাগল, পাশে দাড়াল, সচেতন করল, সময় দিতে লাগলো, বুঝাতে লাগলো এটা করিসনা এটা ভুল-এটা খারাপ, এটা করা তোর উচিত হয়নি, কিংবা এই জামাটায় তোকে বেশ লাগে, একিদন আমার জন্য শাড়ি পরতে পারনা, কিংবা এই মানুষ একিদন তোর জীবনে ক্ষতির কারণ হতে পারে, এই লোকটা সুবিধার নয় ওকে এড়িয়ে চল.....এসব কারণেই মেয়েটি দু সপ্তাহের মধ্যে ছেলেটিকে কলিজার মধ্যে বসিয়ে ফেলে । এবার ছেলেটির পালা.....এই বন্ধু ভালনা, ওর চরিত্রে সমস্যা আছে, ঐ আমাকে খারাপ নজরে দেখে, আজ বন্ধুদের সাথে আড্ডা বাতিল করো-আমরা অন্য কোথাও বসি, মেয়েদের সাথে এত হাসিঠাট্টা কিসের হিরো সাজতে চাও, ঐ মেয়েটার হাত ধরলে কেন কিংবা ওর পাশে বসলে কেন, মেয়েটার প্রতি এত দায়িত্ববান হওয়ার কি দরকার ছিলো?, ঐ ছেলে বন্ধুটা বাদ দাও.......এসব অত্যাচারে ছেলেটি একদিন বাধ্য হয়ে স্বার্থপর হয় । মেয়েটার জন্য একা হয়ে যায়, আর কিছুদিন পর মেয়েটা চলে গিয়ে ছেলেটাকে একা করে দেয় । কিংবা দলের অন্যকারো সাথে আবার নতুন করে অধ্যায় রচনা করতে শুরু করে ।

সবাই ভালবাসার মানুষটিকে অবিশ্বাস করবে এটা একটা কমন ব্যাপার । কারণ যাকে সত্যিকারে ভালবাসা যায়, তাকে হারানোর ভয় সব সময় মনে তারা করে বেড়ায় । আর সবাই চায় বাকীদের কাছ থেকে তাকে আলাদা করে শুধু নিজের জন্য নিয়ে নিতে । এখানে দোষের কিছু নয় । তবে যদি এমন ভাবা হয়, ওর চরিত্রগত সমস্যা আছে, ওকে বাকীদের সাথে মিশতে দেওয়া যাবেনা, এই ধারণা নিয়ে যদি অবিশ্বাস করে সে ভালবাসায় একদিন ফাটল ধরবেই । তাই অনেক সময় দেখা মেয়ে বন্ধুটি ইচ্ছাকরে মানুষের কাছে ছেলেটির দোষ বলে বেড়াচ্ছে, যাতে ওর সাথে কেউ না মিশে, ওকে খারাপ ভেবে সবাই এড়িয়ে চলে, তাহলে ও একমাত্র আমারই থাকবে । হয়ত এই পলিশি কিছুদিন কাজে আসে, তবে যেদিন এই মেয়েবন্ধুটি তার জীবন থেকে চলে যায়-তারপর দেখা যায় ছেলেটি বাকীটা জীবনও ঐ মিথ্যা অপবাদের ভোজা বইতে থাকে-অনেক সময় বাকীটা জীবন একাই রয়ে যায় ।

ভালবাসা মানে স্বাধীন পৃথিবী থেকে কেউ যেন স্বেচ্ছায় আপনাকে ধরে নিয়ে তার নিজেস্ব খাচায় বন্ধী করে রেখে দিল, এখন ইচ্ছামতো মনস্তাত্তিক অত্যাচার করে চলছে, না পারা যায় তাকে ছেড়ে যেতে, না পারা যায় সহ্য করতে । যেমন ধরুন; বন থেকে একটা হরিন হাটতে হাটতে এসে কোন একজনের খাঁচায় ডুকে পড়ল, আর অমনি খাচার মালিক দড়জা বন্ধ করে দিল । এখন খাঁচার মালিক গুরুত্বহীন অবস্থায়. তাকে ফেলে রেখে ইচ্ছামতো আচরন করছে । অতিষ্ট হয়ে হরিনটি একদিন মালিকের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে, মালিক বলল “কেন? আমিতো তোমাকেই ভালবাসি, আমার চোখে কি তোমাকে ছাড়া অন্য কিছু কখনো দেখেছো? আমার পুরো পৃথিবীটাই কি তুমিময় নয়?”

যেকোন সম্পর্কে একদিন না একদিন ফাটল ধরবেই, আমাদের উচিত দুজন নিভৃত্তে বসে আলোচনা করে ভুলবোঝাবুঝিগুলো সমাধান করা । যদি একান্তই সমাধান করা সম্ভব না হয়, তাহলে উচিত সম্পর্কটা শেষ করে দেওয়া । কিন্তু আমরা কখনো কখনো সম্পর্কটাকে শেষ না করে মানুষটাকেই শেষ করে দেই । 

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!