পারস্পরিক সম্পর্কে মনে রাখুন...


আমাদের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনাগুলো আমাদেরকেই উপস্থাপন করে। আমাদের কথাবার্তা আর অন্যের সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে তাই অবশ্যই চিন্তা করা উচিত তা কতোটা অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য বা আমাদের জন্যই তা খারাপ কিনা।

সৃষ্টিকর্তা নারী এবং পুরুষ বানিয়েছেন পৃথিবীতে সহবস্থানের জন্য। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে পার্থক্য থাকবেই আর এই পার্থক্যটা মোটেই খারাপ কিছু নয়। কিন্তু দেখা যায় মানুষ হিশাবে এই পার্থক্যটা নিয়েই আমাদের সমস্যা হয় সবচাইতে বেশী। যতই পৃথিবী সামনের দিকে যাক না কেন, কিছু লিঙ্গ ভিত্তিক সংঘর্ষ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারছিনা, কিংবা অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলছি নিজেকে খুঁটিয়ে না দেখেই।


পুরুষের ক্ষেত্রে-

ছেলেদের মধ্যে একটা ব্যাপার আছে যা হল মেয়েদেরকে আলাদা একটা কিছু হিসেবে দেখা এবং পরিচালনা করার চেষ্টা করা। কিন্তু মেয়েদেরকে একটা উপাদান হিসেবে না ভেবে একটা মানুষ হিসেবেই চিন্তা করা উচিত এবং যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া উচিত। এবং এই সম্মানটা যেন সব ক্ষেত্রেই দেয়া হয়।

কোন সম্পর্কে জড়ানোর পর অনেকে ছেলেই তার মেয়েবন্ধুটিকে বাইরে কাজ করতে দিতে চায় না। এই ব্যাপারটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও দেখা যায়। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কখনও মেয়েদের কাজকে ছোট করে দেখা উচিত না। তাদের এটা বিশ্বাস রাখা উচিত যে মেয়েরা কেউ কম দক্ষ না এবং কোন কোন বিষয়ে মেয়েদের দক্ষতা ছেলেদের চাইতেও বেশি। আর এটা নিয়ে নিজের মধ্যে কোনরকম কমপ্লেক্সও আসতে দেয়া উচিত না বরং উৎসাহ দেয়া উচিত।

কথা বলার সময়ও পুরুষদের মাথায় রাখতে হবে তাদের সীমানাটা কতদুর পর্যন্ত। হোক সেটা তার স্ত্রী বা মেয়বন্ধু, সে অপমানিতবোধ করে বা তাদের খারাপ লাগে এমন কোন কথা বলা উচিত না।

মেয়েদের পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারগুলোতেও একটা ছেলের শ্রদ্ধা রাখা উচিত । অনেক ছেলেকেই দেখা গেছে তার স্ত্রী বা মেয়েবন্ধুটি কি পরে বের হবে, কোথায় যেতে যায়, কখন যেতে চায়, কি করতে চায় এই সবকিছুতে তার ইচ্ছা জাহির করতে চায়। এইসব ব্যাপারে ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা পচ্ছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলোতে ছেলেবন্ধু বা স্বামীর বাধ সাধা উচিত না। এতে করে সম্পর্কে বিতৃষ্ণা জন্মাবে।

অনেক ছেলেই ছোটখাট ঘটনা নিয়ে রেগে যায়, খারাপ ব্যবহার করে, অহমটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এটা খুব নেতিবাচক একটা মনোভাব। এতে করে আপনার সঙ্গিনীর আপনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে যাবে ও দুরত্ব বাড়বে। তাই এটা করবেন না। কোন বড় ধরনের সমস্যাও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা যায়, শুধুশুধু ছোট ব্যাপারগুলোকে বড় করে দেখে দুরত্ব বাড়াবেন কেন।

নিজের ব্যক্তিগত অনেক কথা, বিশেষ করে প্রেমিকার কথা ছেলেরা আড্ডায় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে যা একেবারেই উচিত না। ব্যাপারটা অনেক প্রেমিকাই ভালো ভাবে নেয় না। প্রত্যকেরই তাদের নিজস্ব ও ব্যক্তিগত একটা দুনিয়া থাকে সেখানে তার কাছের মানুষটির সাথে তার একান্ত সময়গুলো নিয়ে কথাবার্তা বলে নিজেকে ছোট করা কখনোই ঠিক না।


নারীর ক্ষেত্রে-

কোনও সম্পর্কই যেহেতু একতরফা হয় না তাই ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও কিছু ব্যাপার মাথায় রেখে চলতে হবে।

প্রথম যেই আচরণটা মেয়েদের পরিবর্তনের দরকার তা হল কিছু না জেনেই নিজে থেকে কোন কিছু ভেবে ফেলা। আসল ঘটনা না জেনেই অনেক সময় মেয়েরা ঝগড়া শুরু করে দেয়। আগে আপনার সঙ্গীটিকে কথা বুঝিয়ে বলার সুযোগ দিন তারপর মানতে না পারলে তা বলুন কিন্তু আগে থেকেই না জেনে খারাপ ব্যবহার করবেন না।

অনেক মেয়েই কোন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ালে তার পুরোটাই দখলে রাখতে চায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলে, বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে এমনকি পরিবারের সাথে কোথাও ঘুরতে গেলেও তারা এটা নিয়ে কথা শুনাতে ছাড়ে না। কিন্তু এতে করে সম্পর্ক ভালো হওয়ার বদলে খারাপ হয়। আপানার সঙ্গীর প্রতি আপনার কিছু অধিকার থাকবেই কিন্তু তাকে অধিকারহীনতায় রেখে না। ভুলে যাবেন না আপনি তার জীবনে আসার আগে তার বন্ধু আর পরিবারই তার সাথে ছিল। আপনাকে পেয়ে তাদের ভুলে গেলে তো চলবে না।

সন্দেহ বাতিক হওয়া মেয়েদের খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আপনার ছেলেবন্ধুটির কোন মেয়ে ক্লাসমেট বা বন্ধু থাকতেই পারে, তার সাথে আড্ডা বা ফোনে কথা বললেই কিন্তু তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরা না। আপনার অন্তত এইটুকু বিশ্বাস রাখতে হবে আপনার সঙ্গীর প্রতি। সম্পর্ক গড়েই উঠে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। এতে মিথ্যা সন্দেহ আর অবিশ্বাস ঢুকিয়ে কেন এই ভিত্তিটা নড়বড়ে করবেন।

ছেলেদের মতোই অনেক মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষটি নিয়ে নানান কথা শেয়ার করে বন্ধুদের সাথে। কিন্তু ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা ঝগড়া হওয়ার পর আপনার সঙ্গীটি রেগে গিয়ে আপনাকে কি বলেছে এইসব কথা না বলাই ভালো। এতে করে আপনারা বন্ধুদের কাছে আপনার সঙ্গীর সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা জন্মায় যা নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না।

এই ছোটছোট ব্যাপারগুলো যদি একটু বুঝে চলা যায় তাহলে দেখবেন আপনাদের ভালোবাসার সেই ম্যাজিকটা কখনোই হারাবে না। তিক্ততায় ভরা সম্পর্ক কে চায় বলুন। যদি একটু ছাড় দিয়ে, একটু মেনে নিয়ে ভালো থাকা যায় তাহলে তা খারাপ কি! একসাথেই আপনারা থাকবেন কিন্ত একে অন্যের জায়গা দখল করে না, সম্পর্কেও একটু নিজস্ব জায়গা, একটু স্পেস, একটু দূরত্ব থাকতে হয়। এতে করে সম্পর্ক দীর্ঘ হয় কিন্তু একঘেয়েমি আসে না।

Related Posts:

  • মিথ্যা কথায় বলে, গল্পের গরু গাছে চড়ে! আর লাগামছাড়া মিথ্যেয় ভরপুর গল্পের বাইরেও যখন গরুরা গাছে অনবরত চড়ে, তখন নিখাদ চলতি ভাষায় ‘চাপা’ বলি সেটিকে আমরা। … Read More
  • তরতাজা সারাদিন প্রায় প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠেন। ঠিক। কিন্তু উঠেই শুরু করে দেন ছোটা… সময়ে পাশ কাটিয়ে আও খানিকটা এগিয়ে যাওয়া নিরন্তর প্… Read More
  • বেশি হাসবেন না নারীদের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে চান? তাহলে বেশি হাসবেন না। কেননা নারীরা বিষণ্ন পুরুষই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু পুরুষরা তার বিপরীত… Read More
  • ডেটিংয়ে যাওয়ার পর সঙ্গিনী যখন… আজকাল ভালোবাসা খুব সস্তা হয়ে গেছে। এ জাতীয় কথা প্রায়ই শোনা যায়। একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে টাইম পাস করা বা সময় কাটানোই এখন কারও কারও কা… Read More
  • সহবাস নিষিদ্ধ হওয়ার কারন সমূহ? নিষিদ্ধ সময়ে স্ত্রী সহবাস করা খুবই খারাপ কাজ। জ্ঞানীরা বলেনঃনিষিদ্ধ সময়ে স্ত্রী সহবাস শরীরের এবং মনের অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তার মধ্যে ১২ টি … Read More

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!