ঢাকা : তাই বলে তুমি বিয়ের রাতেই এমন প্রতারণা করলে? খুব অভিমানী স্বরে শিমু অন্তরকে কথাটি বললো।অন্তর আর শিমু স্বামী-স্ত্রী।স্বামী স্ত্রী বলতে একদিন হলো তাদের বিয়ে হয়েছে।পরের দিনই ছিল বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম।
শিমু বেশ মাইন্ড করেছিল ব্যাপারটায় ।একটা মানুষ কিভাবে এতো বড় অভিনয় করতে পারে!তাও বাসর রাতে!এতো এক ধরনের প্রতারণাই।সারা রাত শিমু একটা কথাও বলে নি। এমনকি অন্তরের দিকে ফিরেও তাকায় নি। তাকাবে কি, অন্তর তো ঘুমিয়েই ছিলো।এমন জঘন্য মানুষ হয় নাকি দুনিয়াতে!বাসর রাতে সুন্দরী স্ত্রীকে পাশে রেখে কেউ ঘুমাতে পারে?এতো রীতিমতো স্ত্রীর সৌন্দর্যের অবমাননা।
শিমু কিছুতেই তার রূপের এই অবমাননা সহ্য করতে পারবে না।জৈবিক কাজটা না হয় বাদই দিলাম।অন্তত পাশে বসে একটু গল্পও তো করতে পারতো সে।দুই চারটা চাওয়া - পাওয়া,।পছন্দ-অপছন্দের কথাও তো বলা যেত।ভাবছিল শিমু।
তার কিছুই করেনি অন্তর।পড়ে পড়ে শুধু ঘুমিয়েছে।শিমু রাত দুটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল।তারপরও অন্তরের ঘুম ভাঙতে না দেখে শুয়ে পড়েছিল শিমু।সে আর ঘুমায় নি।সারা রাত কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছিল।
রাতে অন্তর বাসর ঘরে ঢুকেছিল দেরি করে করে।প্রায় রাত একটার দিকে। শিমু ভেবেছিল,হয়তো বিয়ে বাড়ি বলে কাজে ব্যস্ত ছিল।তাই বলে একবারে ঢুও তো মারতে পারতো। কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কি না তাও তো জিজ্ঞাস করতে পারতো। তার কিছুই করে নি অন্তর। এসেছিল রাত একটায়।
আলু থালু চেহারা,হাতে বেনসন সিগারেট এক প্যাকেট।একটু মাতাল মাতাল ভাব। খাটে বসেই একটা সিগারেট ধরিয়েছিল। সিগারেটের ধোয়া যখন ছেড়েছিল তখন শিমুর বমি আসার জোগাড়। এমনিতেই সিগারেটের গন্ধ তার সহ্য হতো না।তার উপর একটা বোটকা গন্ধ আসছিল।
কথাবার্তায় অসংলগ্নতা, চুল, চেহারায় অগোছালো, গায়ে-জামায় গন্ধ। মদটদ খায়নি তো? ভাবছিল শিমু। এমন তো হবার কথা নয়। ওর ভাইবোন ,বন্ধ-বান্ধবী সবাই তো বলেছিলো,ও খুব ভালো ছেলে, ব্রিলিয়ান্ট। কোন নেশা-টেশা করে না, এমনকি সিগারেটও খায় না। কোন আড্ডাবাজিতেও নেই। কিন্তু প্রথম থেকেই দেখছি তার উল্টো। হয়তো রাত জাগার জন্য সিগারেট এনেছে। কিন্তু ওর চেহারায় তো রাত জাগার কোন সম্ভাবনাই দেখা গেল না।
শিমু যখন এই সব কথা ভাবছিল ঠিক তখনই বিরাট এক ধাক্কা খেয়েছিল।ধাক্কাটা লেগেছিল তার মনেও। অস্ফুট স্বরে অন্তর বলে উঠলো, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমবো সর।
শিমু খাটের মাঝখানে ছিল।অন্তরের কথায় হতভম্ব হয়ে নড়েচড়ে সরে গেল। অন্তরের কথার সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই গন্ধ বের হলো। এবার তো ধোয়ার গন্ধ নয়। নিশ্চয়ই মদ খেয়েছে, ভাবলো শিমু। ছি ছি, শেষ পর্যন্ত এই কুলাঙ্গারটা আমার ভাগ্যে জুটলো। না না,এই জঘন্য পরিবেশ থেকে আমাকে বের হইতেই হবে,আমাকে চলে যেতেই হবে।
এই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিল শিমু। ভোর পাঁচটা বাজতেই শিমু তার ব্রিফকেসটা নিয়ে কাউকে কিছু না বলে চলে যাচ্ছিল নিজের বাড়িতে।অন্তর হাতমুখ ধুয়ে যখন রুমে ঢুকছিল তখন শিমু কে যেতে দেখে তার হাত থেকে ব্রিফকেসটি নিয়ে নিলো। শিমু ব্রিফকেস ছাড়াই যেতে উদ্যত হলে অন্তর খপ করে তার হাত ধরে ফেলল, শিমু ছাড়ানোর চেষ্টা করেও না পেরে বললো,ছাড় আমাকে।
অন্তর বললো কোথায় যাচ্ছো?
আমাদের বাড়িতে।
তোমাদের বাড়িতে যাবে ভাল কথা তাই বলে কাউকে কিছু না বলে ।
শিমু রাগী গলায় বললো, কি করবো বসে বসে তোমার মতো লম্পট নেশাখোর ছেলের সাথে সংসার করবো নাকি?
অন্তর হেসে উঠে বললো, ও এই কথা। আরে বোকা মেয়ে ,আমি তো তোমাকে বাজিয়ে দেখলাম। অনেক দিনের প্লান, বিয়ের রাতে বৌকে ভড়কে দেব। কখনো প্রেম-ট্রেম করি নি তো। তাই ভেবেছিলাম বৌয়ের সাথেই মজা করবো। তাই তো মদ দিয়ে কুলি করে এসে সিগারেটের ভুয়া টান দিয়ে কাল রাতে অভিনয় করেছিলাম।
প্রথমে বিশ্বাস করেনি শিমু। পরে ভেবে দেখলো তার ভাই বোন,বন্ধুদের কথা অনুসারে অন্তরে কথা সত্যি হতে পারে। শিমু বললো তাই বলে তুমি বিয়ের রাতেই এমন প্রতারণা করলে?
আরে বোকা,ওটা ছিল অভিনয়। অন্তর বললো।
এরপর শিমু দেখলো অন্তর দরজা আটকাচ্ছে।
আপত্তি জানিয়ে শিমু বললো, কি করছো?
অন্তর বললো কাল তো বাসর রাত হয়নি। তাই…
বাসর রাত হয় নি তাই বলে বাসর দিন পালন করবে নাকি? রাতের জন্য অন্তত অপেক্ষা করো।
অন্তর শোনেনি।
দরজা ঠিকই বন্ধ করেছিল।
বাইরে থেকে শুধু শোনা গেল নতুন স্ত্রীর সেই চিরন্তর মধুর বাক্য, যাহ্, দুষ্ট কোথাকার।
0 comments:
Post a Comment