উদাসীন কবির কাব্যমালায় থাকেন তিনি। নারী
সাজায় তাকে আপন ভালোবাসায়। তিনি আমাদের কণ্ঠের কাজ করেন ভেতর থেকে। আর
বাইরে তাকে জড়িয়ে থাকে মালার আদর। তার অন্তরঙ্গে থাকে কণ্ঠের কারুকাজ। আর
বাহিরটা জুড়ে নিজেকে প্রকাশ করার ভঙ্গি। বিশেষ করে নারীর সৌন্দর্যে তার
ভূমিকা কম নয়।
আলংকারিক সৌন্দর্য প্রকাশে নারীর কাছে তার যেমন আছে ভাবগাম্ভির্য তেমনি
আছে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা। সম্ভবত সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই অনাদি কালের সেই
পাতার অলংকারে যেমন সে ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী, এই আধুনিক যুগে পশ্চিমা আর
পূর্বের মিশেলে এখনো তার দাপট সমানতালে। মূলত যেকোনো মালাই তার গলে শোভা
পায়। আর ভাবনার সেই দুয়ার থেকেই আমাদের কাছে তার গুরুত্ব বেড়ে গেছে আরো
খানিকটা। একটা সময় ছিল যখন আঁটসাঁট গয়নাতে তার অভিরুচি প্রকাশ পেতো। যার
ফলে কামিজে বড় পরিসরে ব্যাসার্ধ রাখার যেমন প্রবণতা ছিল তেমনটি ছিল
ব্লাউজেও। সেই যুগের অবসান হয়েছে, আধুনিকার গলে এখন শোভা পাচ্ছে লম্বা
ঝুলের মালা।
একটা সময় ছিল যখন লম্বা মালার জন্য পাথরের বিকল্প কিছুই ছিল না। এখন
অবশ্য আদরের সেই ঢংয়ে পুঁতির মালার পাশাপাশি পুরোনো কয়েন, তামার পাত,
কড়ি কিংবা ঝিনুকও প্রাধান্য পায়। আবার পাথরের ভাঁজে ভাঁজে ঢুকে যায়
রুপার নানা উপকরণ। কখনো তা বার্ন করে খানিকটা পুরোনো আদল দেয়া হয়। মালার
উচ্চতা ভেদে এসব উপকরণের পাশাপাশি কাঠ বা মাটিও ব্যবহৃত হয় বৈচিত্র্য
আনতে। পাহাড়ি অঞ্চলের মালাগুলোতে আবার দেখা যায় বড় বড় রঙিন পাথরের
ব্যবহার। সঙ্গে থাকে হাতির দাঁত কিংবা কৃত্রিম শিং থেকে তৈরি নানা মোটিভ।
দেশে যেমন এ ধরনের মালার প্রচলন বেড়েছে তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তার
কদর বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে স্টাইল স্টেটমেন্টে অনেক আগেই স্থান
করে নিয়েছে এই মালাটি। তাই সেসব দেশে নানা আকৃতির পাথরের পাশাপাশি ফলস
সিরামিকেও এ মালার জনপ্রিয়তা রয়েছে। ২০ থেকে ৩২ ইঞ্চি লম্বার মধ্যে এ
মালাগুলো গলার ব্যাপ্তিতে জড়িয়ে থাকে। কখনো কখনো তা দুই-তিন ধাপে
প্যাঁচানো যেতে পারে। যার ফলে গলার একটি বড় অংশজুড়ে এই মালাটির অস্তিত্ব
থাকে।
শার্ট
কিংবা টপসের সঙ্গে মানানসই এ মালাটি দুর্দান্ত মনে হয় ফতুয়ার সঙ্গেও।
কখনো এসব মালায় অসম আকৃতির পাথর যেমন থাকে কখনো তা শুকনো ফুল আর পাথরের ফুলের
কম্বিনেশনেও হয়। পাশাপাশি কানের দুল, পায়ের পায়েল, খাড়–, ব্রেস্টলেট-ও
কম নয় ফ্যাশন স্টেটমেন্টে। ডিজাইনারদের কাছেও এ ধরনের গয়নার কদর কম নয়।
তাই স্টাইল শপগুলোতে এ মালাগুলোর চাহিদা বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। বুটিক
হাউসগুলোতে এ ধরনের মালা পাওয়া যায় অপেক্ষাকৃত বেশি। অঞ্জন’স, প্রাইড,
নগরদোলাসহ জনপ্রিয় সব বুটিক হাউসেই এই মালা যেমন আছে তেমনি ভিন্ন কিছু
ডিজাইন পাওয়া যাবে আড়ং ও মায়াসীরে। আর দামের দিক থেকেও গলার এই আদরের
জন্যও খুব বেশি বাড়তি পয়সা গুনতে হয় না। বরং স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি
করতে খুব সহজেই একটি মাধ্যম বিবেচিত হতে পারে গলার লম্বা মালা।৬০ দশকের
লম্বা পুঁতির মালা নবরূপে ফিরে এসেছে ফ্যাশনের ট্রেন্ড হিসেবে। পুঁতির
সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রুপা, অক্সিডাইজসহ নানা ধরনের ধাতব পদার্থ। ২৫ থেকে ৩০
ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এসব মালা ফতুয়া, স্কার্ট-টপস ও ওয়েস্টার্ন পোশাকের
সঙ্গেই বেশি মানায়। আজকাল তরুণীদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়েছে এই
লম্বা মালা।
একসময় কেবল শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে মানিয়ে লম্বা মালা পরা
হতো। তবে সময়ের পালাবদলে তরুণীরা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি ফতুয়া
বা টপসের সঙ্গেও পরছে লম্বা মালা। লম্বা মালা হচ্ছে এমন এক অলংকার, যা
কখনো পুরোনো হয় না। তা ছাড়া লম্বা মালা মানে না বয়সের হেরফের। যেকোনো
বয়সের নারী তাঁর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লম্বা মালা পরতে পারেন।
মালা তৈরির উপাদান
হাড়গোড়, মাটি, সুতা, কাঠ, পুঁতি, নানা ধাতুর চাকতি মালা তৈরির উপাদান এগুলোই। দাম কম, দেখতে বড় আর নজরকাড়া। পোশাকের সঙ্গে রং মেলানোর বালাই নেই, যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই পরা যায় মালা। কিশোরী আর তরুণীদের কাছে এর কদর পেতে তাই দেরি হয়নি।
তবে মালা তৈরির উপাদানগুলোর মধ্যে এসেছে খানিকটা পরিবর্তন। এখন লম্বা
মালা তৈরির উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে মাটি, ঝিনুক, কাঠ, কাপড়, পুঁতি। আবার
হাতির দাঁত বা হাড়ের লম্বা মালা একটু ব্যতিক্রমী ফ্যাশনের অনুষঙ্গ। আর
আভিজাত্য এবং ক্লাসিক উভয়ের মেলবন্ধন ঘটে মুক্তার মালায়। ধাতব পদার্থের
মধ্যে তামা আর পিতলের সঙ্গে পুঁতির মালাও বেশ চলছে ।
কোন মালা কিসে মানানসই
প্যান্ট ও শার্টের সঙ্গে ২২-৩০ ইঞ্চি লম্বা মালা ভালো মানায়। টপসে বা শার্টে কলার থাকলে মালাটা একধাপ পরাই ভালো। আর কলার ছাড়া হলে কয়েক লহরে পরলে বেশি মানাবে । শাড়ির সঙ্গে বড় মালা খুব মানানসই। তবে তাঁতের শাড়ির সঙ্গে লম্বা মালাটা ক্লাসিক ফ্যাশনের উদাহরণ। পোশাক যেমনই হোক লম্বা বা বড় মালার সঙ্গে একটু হালকা রঙের বড় গলার পোশাক পরাই ভালো। এতে করে মালাটা পোশাকের ওপর ফুটে ওঠে। যাঁদের উচ্চতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে বড় মালা খুব একটা মানাবে না।
কোথায় পাবেন
বিভিন্ন বুটিক বা ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে হাতে তৈরি বাহারি এবং হাল ফ্যাশনের লম্বা মালা। আবার বিভিন্ন গয়নার দোকানেও মিলবে নানা ধরনের ধাতব ও পাথরের তৈরি বড় মালা। অঞ্জনস, কে ক্র্যাফট, কুমুদিনি, রঙ, বাংলার মেলাসহ জনপ্রিয় সব বুটিক হাউজেই এই মালা পাওয়া যাবে আর ভিন্ন ধরনের ডিজাইন চাইলে আড়ং কিংবা মায়াসিরে ঘুরে আসতে পারেন। দাম পড়বে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। মালার সঙ্গে মেলানো কানের দুলও থাকে।
বুটিক হাউজ ছাড়াও জেনেটিক প্লাজা (দ্বিতীয় তলায়), আনাম র্যাং০গস
প্লাজা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি (দ্বিতীয় তলায়), মৌচাক, আজিজ সুপার
মার্কেটের আইডিয়াস, বসুন্ধরা সিটির মম, মোহাম্মদপুরের আইডিয়া ক্র্যাফটে
পাবেন নানা রং ও নকশার বিভিন্ন দামের মালা।
সাজসজ্জাটা যেমন
বিভিন্ন আকৃতি ও উপাদানের মালা বাজারে পাওয়া যায়। ফতুয়ার সঙ্গে পরার জন্য পিতল, কাঠ, কড়ি, সুতার মালা বেশি মানানসই। শাড়ির সাথে পড়ার জন্য গলায় অক্সিডাইজ ও পিতলের মালা বেশি জনপ্রিয়। গলায় কম ঝুলের মালা পরলে মালাটা ভারী আর মোটা হলেই ভালো। আর বড় মালার ক্ষেত্রে মালাটা ছেড়ে কিংবা পেঁচিয়ে কয়েক লহরে পরা যেতে পারে। গলায় ভারী কোনো মালা পরলে কানে ছোট দুল পরুন। সঙ্গে পায়েল তো রয়েছেই। পায়ে পরার জন্য খাড়ুও এখন বেশ জনপ্রিয়। অ্যান্টিক সোনালি রঙের চলই এখন বেশি।
এ ধরনের লম্বা মালা পরলে মেকআপের তেমন প্রয়োজন নেই, মালাটাই যেন নজর
কাড়ে। ফলে মুখের সাজ হালকা হলেই ভালো। তবে আইশ্যাডোর ক্ষেত্রে গাঢ় নীল,
সবুজ, গোলাপি ইত্যাদি রঙের আইশ্যাডো দেওয়া যেতে পারে চোখে। হলুদ, লাল,
কালো, সবুজ এসব রঙের নেইলপলিশও ব্যবহার করা যায়। গলায় বড় মালার সাথে
হাতের গড়ন বুঝে পরা যেতে পারে ভারী ও মোটা বালা। হাতের বালা, ব্যাঙ্গল,
চুড়ি কিংবা ব্রেসলেট যা-ই পরা হোক না কেন, এখন ফ্যাশনে তা বেশ মোটা আকারের
হচ্ছে। হাতে মোটা একটি ব্যাঙ্গল আর ঠোঁটে থাকবে হালকা রঙের লিপগ্লস।
0 comments:
Post a Comment