ঢাকা : মাতৃত্বের স্বাদ নেয়ার আকাঙক্ষায় পরপুরুষের শুক্রাণুর সাহায্যে মা হওয়ার আনন্দযাত্রায় সামিল হচ্ছেন ব্যাচেলর মেয়েরা। স্বেচ্ছায় একা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা সমাজের তোয়াক্কা না করেই। কলকাতায় এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। শহরের ফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলোতে মা হওয়ার জন্য বেশ কিছু বিশিষ্ট মহিলাও নাম লিখিয়েছেন। তবে সমাজ কিভাবে নেবে এই ধরনের সন্তানকে তা নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। পিতৃপরিচয় জানার কোন সুযোগ নেই এই ধরনের সন্তানদের ক্ষেত্রে।
আইভিএফ পদ্ধতিতে মা হওয়ার পথে বিশিষ্ট পরিচালক অনিন্দিতা সর্বাধিকারী অবশ্য বলেছেন, আমার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই। আমিই ওর বাবা, আমিই ওর মা। ওকে আমি তাই বলবো। তবে কলকাতার মানুষ আমার সন্তানকে পিতৃপরিচয় ছাড়াই গ্রহণ করতে পারবে কিনা- সেটাই দেখার। এক মা হওয়ার জন্য ডোনার শুক্রাণু নেয়ার প্রবণতা যে বাড়ছে সে কথা স্বীকার করেছেন নোভা হাসপাতালের চিকিৎসক রোহিত গুটগুটিয়া।
তবে এই ধরনের সন্তানের মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ নয় সে কথা জানিয়েছেন আরেকজন বিশিষ্ট বাঙালি চিত্রশিল্পী ইলিনা বণিক। বছর দেড়েক আগে তিনি ডোনার শুক্রাণু নিয়ে মা হয়েছেন। এখন তার সন্তানের বয়স ১৬ মাস। অবশ্য ইলিনা শুক্রাণু নিয়েছেন তার পছন্দ করা ব্যক্তির। তিনি জানিয়েছেন, আমার জন্য এইভাবে মা হওয়ার সিদ্ধান্তটা মোটেও সহজ ছিল না।
পরিচালক অনিন্দিতা যে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেক বার ভেবেছেন তা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মা হওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আমার দু’ বছর সময় লেগেছে। তার কথা, আমার বয়স ৪০ বছর হতে চলেছে। কবে বিয়ে হবে সেই অপেক্ষায় বসে থেকে মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবো কেন? আর তাই মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তবে মাবা-মা’র সমর্থন পেয়েই এগিয়ে যেতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন অনিন্দিতা। তবে এখন তিনি বুক ফুলিয়ে বলছেন তার এই ভাবে মা হওয়ার কথা।
অবশ্য ইলিনা বা অনিন্দিতার মতো যে সব মেয়ের বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি এবং ব্যাচেলর তারাই মাতৃত্বের স্বাদ নেয়ার জন্যই পরপুরুষের শুক্রাণুর সাহায্য নিয়ে মা হতে দ্বিধা করছেন না। আইভিএফ পদ্ধতি সম্পর্কে এক বিশিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে ডোনারের কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। এরপর মহিলার শরীর থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করেও তা ল্যাবে শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করা হয়। দেহের বাইরে কৃত্রিমভাবে নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে ভ্রূণ তৈরি করে ফ্রিজ করে রাখা হয়। এবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই ভ্রূণ মা হতে চাওয়া মহিলার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর কয়েক মাস ধরে ভ্রূণকে পরিপূর্ণতা পেতে দেয়ার জন্য অপেক্ষা। তবে পরপুরুষের শুক্রাণু নিতে হলে বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে ক্লিনিকে গিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হয়। যার শুক্রাণু দেয়া হয় তার পরিচয় গোপন রাখাই হয়। তাই এই পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া সন্তানদের ক্ষেত্রে পিতৃপরিচয় জানার সম্ভাবনা নেই। এতে অবশ্য কোন খেদ নেই একা মায়েদের।
তবে আগে চরম গোপনীয়তার মধ্যে হলেও এখন মায়েদের অনেকে তাদের সিদ্ধান্ত জোর গলায় জানাচ্ছেনও। পরিচালক অনিন্দিতা এখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি জানিয়েছেন, তাকেও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন বিষয়টি গোপন রাখতেই পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু অনিন্দিতা তা করতে রাজি হননি। তবে সকলেই যে অনিন্দিতার মতো সাহসী হতে পেরেছেন- তা মোটেই নয়। মানবজমিন
0 comments:
Post a Comment