পতিগৃহে পুরোনো প্রেমিক – নির্মলেন্দু গুণ
পাঁজরে প্রবিষ্ট প্রেম জেগে ওঠে পরাজিত মুখে,
পতিগৃহে যেরকম পুরোনো প্রেমিক
স্বামী ও সংসারে মুখোমুখি ।
প্রত্যাখ্যানে কষ্ট পাই,–ভাবি, মিথ্যে হোক
সত্যে নাই পাওয়া । বুকের কার্নিশে এসে
মাঝে-মধ্যে বসো প্রিয়তমা,
এখানে আনন্দ পাবে, পাবে খোলা হাওয়া ।
সেই কবে তোমাকে বুনেছি শুক্রে, শুভ্র বীজে,
যখন নদীর পাড় ঢাকা ছিল গভীর সবুজে ।
সময় খেয়েছে মূলে, বীজের অঙ্কুরে অমাক্রোধ,
দাবাগ্নিতে পুড়ে গেছে ভালোবাসা জনিত প্রবোধ ।
অহল্যাও পেয়েছিল প্রাণ জীবকোষে, পাথর-প্রপাতে
একদিন । তোমার অতনু জুড়ে কোনোদিন হবে নাকি
সেরকম প্রাণের সঞ্চার ? কোনদিন জাগিবে না আর?
পুরোনো প্রেমিক আমি কতো পুরাতনে যাবো?
ক্ষমা করো ভালোবাসা, প্রিয় অপরাধ ।
যদি কভু মধ্যরাতে পরবাসে ঘুম ভেঙে যায়,
যদি আচ্ছন্ন স্বপ্নের ঘোরে উচ্চারণ করো এই মুখ,
যদি ডাকো যৌবনের প্রিয় নাম ধরে–;
রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যাবো পতিগৃহে পুরোনো প্রেমিক ।
মুখোমুখি দাঁড়াবো তোমার, যদি ক্ষমা পাই ।
পতিগৃহে যেরকম পুরোনো প্রেমিক
স্বামী ও সংসারে মুখোমুখি ।
প্রত্যাখ্যানে কষ্ট পাই,–ভাবি, মিথ্যে হোক
সত্যে নাই পাওয়া । বুকের কার্নিশে এসে
মাঝে-মধ্যে বসো প্রিয়তমা,
এখানে আনন্দ পাবে, পাবে খোলা হাওয়া ।
সেই কবে তোমাকে বুনেছি শুক্রে, শুভ্র বীজে,
যখন নদীর পাড় ঢাকা ছিল গভীর সবুজে ।
সময় খেয়েছে মূলে, বীজের অঙ্কুরে অমাক্রোধ,
দাবাগ্নিতে পুড়ে গেছে ভালোবাসা জনিত প্রবোধ ।
অহল্যাও পেয়েছিল প্রাণ জীবকোষে, পাথর-প্রপাতে
একদিন । তোমার অতনু জুড়ে কোনোদিন হবে নাকি
সেরকম প্রাণের সঞ্চার ? কোনদিন জাগিবে না আর?
পুরোনো প্রেমিক আমি কতো পুরাতনে যাবো?
ক্ষমা করো ভালোবাসা, প্রিয় অপরাধ ।
যদি কভু মধ্যরাতে পরবাসে ঘুম ভেঙে যায়,
যদি আচ্ছন্ন স্বপ্নের ঘোরে উচ্চারণ করো এই মুখ,
যদি ডাকো যৌবনের প্রিয় নাম ধরে–;
রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যাবো পতিগৃহে পুরোনো প্রেমিক ।
মুখোমুখি দাঁড়াবো তোমার, যদি ক্ষমা পাই ।
গতকাল একদিন – নির্মলেন্দু গুণ
গতকাল বড়ো ছেলেবেলা ছিল
আমাদের চারিধারে,
দেয়ালের মতো অনুভূতিমাখা মোম
জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আমারা দেখেছি
শিখার ভিতরে মুখ ।
গতকাল ছিল জীবনের কিছু
মরণের মতো সুখ ।
গতকাল বড়ো যৌবন ছিল
শরীরে শরীর ঢালা,
ফুলের বাগান ঢেকে রেখেছিল
উদাসীন গাছপালা ।
আমরা দু’জনে মাটি খুঁড়ে-খুঁড়ে
লুকিয়েছিলাম প্রেম,
গতকাল বড় ছেলেবেলা ছিল
বুঝিনি কী হারালাম !
গতকাল বড়ো এলোমেলো চুলে
বাতাস তুলেছে গ্রিবা,
চুমু খেয়ে গেছে কৃষ্ণচূড়ার
উজ্জ্বল মধুরিমা ।
গতকাল বড়ো মুখোমুখি ছিল
সারাজীবনের চাওয়া,
চোখের নিমিষে চোখের ভিতরে
চোখের বাহিরে যাওয়া ।
আমাদের চারিধারে,
দেয়ালের মতো অনুভূতিমাখা মোম
জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে আমারা দেখেছি
শিখার ভিতরে মুখ ।
গতকাল ছিল জীবনের কিছু
মরণের মতো সুখ ।
গতকাল বড়ো যৌবন ছিল
শরীরে শরীর ঢালা,
ফুলের বাগান ঢেকে রেখেছিল
উদাসীন গাছপালা ।
আমরা দু’জনে মাটি খুঁড়ে-খুঁড়ে
লুকিয়েছিলাম প্রেম,
গতকাল বড় ছেলেবেলা ছিল
বুঝিনি কী হারালাম !
গতকাল বড়ো এলোমেলো চুলে
বাতাস তুলেছে গ্রিবা,
চুমু খেয়ে গেছে কৃষ্ণচূড়ার
উজ্জ্বল মধুরিমা ।
গতকাল বড়ো মুখোমুখি ছিল
সারাজীবনের চাওয়া,
চোখের নিমিষে চোখের ভিতরে
চোখের বাহিরে যাওয়া ।
এক ধরনের এপিটাফ – নির্মলেন্দু গুণ
জানি, একদিন বায়ুতেই যাবো মিশে ।
আমাকে তখন যদি দরকার হয় কারও,
আজকের মতো সহজে পাবে না খুঁজে ।
চৈত্রের ঝড় হয়ে লুটিয়ে পড়বো আমি
বৃক্ষপত্রে, ধু-ধু মাঠে, –মঠের গম্বুজে ।
বায়ুর ভিতর থেকে গ্রহণ করেছি আয়ু;
জানি, একদিন বায়ুতেই যাবো মিশে ।
তখন আমাকে যদি খোঁজ, যদি খোঁজ,
শুভ্র অভ্রবিন্দুবৎ তখন আমাকে পাবে
কম্পমান পদ্মের পাতায়, ঘাস-শীষে ।
মধুর ভিতর থেকে গ্রহণ করেছি আয়ু;
মৃত্যু হয়ে একদিন মিশে যাবো বিষে ।
এবারই প্রথম তুমি – নির্মলেন্দু গুণ
ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না।
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না।
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
আশাগুলি – নির্মলেন্দু গুণ
জ্যা-মুক্ত হয়নি চিত্ত
অধীর মিলনে কোনোদিন ।
পরশে খুলেছে দ্বার, বারবার
কেটেছে অস্থির ঘুমে
শূন্য চিরশয্যা তুমি-হীন ।
অপক্ব মৈথুনে বিবসনা
শ্লীলতা ভাঙেনি শব্দ,
আমাদের অবিমৃষ্য যুগলযৌবন
অথচ জেগেছে কামে
সুপ্তোত্থিতে, প্রিয়তমে
মুখর মৃণালে, প্রিয় নামে ।
তোমাকে বেসেছি ভালো
তীব্রতম বেদনার লাগি ।
মৃত্যুর শিয়রে বসি
সেই প্রিয় মুখে রাত্রি জাগি
একদিন উচ্চরিত প্রার্থনার ভাষা;
করেছিনু আশা, আজ পূর্ণ হবে ।
অধীর মিলনে কোনোদিন ।
পরশে খুলেছে দ্বার, বারবার
কেটেছে অস্থির ঘুমে
শূন্য চিরশয্যা তুমি-হীন ।
অপক্ব মৈথুনে বিবসনা
শ্লীলতা ভাঙেনি শব্দ,
আমাদের অবিমৃষ্য যুগলযৌবন
অথচ জেগেছে কামে
সুপ্তোত্থিতে, প্রিয়তমে
মুখর মৃণালে, প্রিয় নামে ।
তোমাকে বেসেছি ভালো
তীব্রতম বেদনার লাগি ।
মৃত্যুর শিয়রে বসি
সেই প্রিয় মুখে রাত্রি জাগি
একদিন উচ্চরিত প্রার্থনার ভাষা;
করেছিনু আশা, আজ পূর্ণ হবে ।
আমার বসন্ত – নির্মলেন্দু গুণ
মনের ভিতর জুড়ে আরো এক মনের মর্মর,
পাতা ঝরা, স্বচক্ষে স্বকর্ণে দেখা চাঁদ, জ্যোৎস্নাময়
রাতের উল্লাসে কালো বিষ । এ না হলে বসন্ত কিসের ?
গাছের জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়েছে অপিচ্ছিল বোধ,
ওর মুখে কুমারীর খুন, প্রসূতির প্রসন্ন প্রসূন ।
কন্ঠ ভরে করি পান পরিপূর্ণ সে-পাত্র বিষের,
চাই পূর্ণ শিশিরে নির্ঘুম । এ না হলে বসন্ত কিসের?
0 comments:
Post a Comment