জীবনে নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই পুরুষ বাঁচে কম



ঢাকা: ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন এমন প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ থাকবেন না আগামী জাতীয় নির্বাচনে। গত পাঁচ বছরে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তারা। একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বললে এই সংখ্যাটা সাত লাখ ৪১ হাজার ৬৯ জন। এদের মধ্যে পুরুষ চার লাখ ৭৮ হাজার ৯৬০ জন এবং নারী দুই লাখ ৬২ হাজার ১০৯ জন। অর্থাৎ নারীর চেয়ে পুরুষদের মধ্যে মৃতুহার বেশি।
বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক বাস্তবতায় এই পরিসংখ্যান আগ্রহোদ্দীপকই বটে। কারণ, ছোটোবেলা থেকেই মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় নানা দিক থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে রীতিমতো বড় ধরনের প্রচারে যেতে হয়েছে সরকারকে। স্বাস্থ্য, খাদ্যের দিক থেকে ছেলে-মেয়ের সমানাধিকারের প্রচার এখনও করতে হচ্ছে সরকারকে। মেয়ে শিশুই বেশি অপুষ্টির শিকার-নানা গবেষণাতেও সে তথ্য পাওয়া গেছে।
তারপরও বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী এখন দেশে মানুষের গড় আয়ু ৬৯ বছরের বেশি। এর মধ্যে নারীদের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর।
কী কারণে এমনটা হচ্ছে, তাও গবেষণার বিষয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের জীবন যাপন পুরুষের তুলনায় অনেক গোছালো। তাদের খাদ্যাভ্যাসও তুলনামূলক নিয়ন্ত্রিত।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অপরিমিত খাদ্য গ্রহণ, তামাকজাত ও নেশাজাতীয় পণ্য গ্রহণ পুরুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ফলে তাদের গড় আয়ু নারীর তুলনায় কম।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেয়েরা পুরুষের তুলনায় চর্বিজাতীয় খাবার কম খায়। এখনও পুরুষের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে মাদক এবং ধুমপানের প্রবণতা কম। নারীদের আয়ু বাড়ার পেছনে এটা এক বড় কারণ।
আবার পুরুষের তুলনায় নারীরা কায়িক পরিশ্রম বেশি করে বলেও জানান উত্তম কুমার বড়ুয়া। এ কারণে নারীদের ডায়বেটিকস, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ কম হয়। এটাও পুরুষের তুলনায় নারীর বেশিদিন বেঁচে থাকার আরেক কারণ।
এর বাইরে বিশেষ করে মায়ের স্বাস্থ্যরক্ষায় সরকারি নানা কর্মসূচির সুফল মিলেছে। নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাছে সন্তান প্রসবে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এক দশকে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ৪০ শতাংশ। এ জন্য আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও পেয়েছে বাংলাদেশ। 
দুই দশকে সার্বিকভাবে নারীর অপুষ্টির সমস্যা কমেছে ২০ শতাংশ। তবে নির্যাতন এখনও নারীদের স্বাস্থ্যহানির কারণ। সেবা পেতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এখনও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
তবে কেবল বাংলাদেশ না, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই একই প্রবণতা দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা পৃথিবীর ৫৩টি দেশের প্রায় ৯০ লাখ মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছে, নারী ও পুরুষের মধ্যে গড় আয়ুর পার্থক্য উল্লেখযোগ্য।২০১০ সালে ইউরোপে নারীদের গড় আয়ু ছিল ৮০ বছর। অন্যদিকে পুরুষের গড় আয়ু ৭২ বছর।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!