সম্পর্ক! জীবনের বিশাল গভীরতা নিয়ে ছোট্ট একটা শব্দ। একজনের জীবনে তার সব চাইতে সুন্দর সম্পর্ক হয় পরিবারের সাথে। ধীরে ধীরে তা ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়ে নানা দিকে। বন্ধু-বান্ধবের সাথে, সামাজিকভাবে কিংবা কাজের প্রয়োজনে আরও নতুন সব মানুষের সাথে আমরা জড়িয়ে পড়ি। নতুন সব নাম, অভিজ্ঞতা আর টক-মিষ্টি স্বাদের নানারকম, নানা বয়সের সম্পর্ক। এত সবকিছুর মাঝেই কোন এক সময় বিশেষ মানুষটিকে আমরা খুঁজে পাই। শুরু হয় সম্পর্কের ভিড়ে থিতু হবার পালা।
আপনার জীবনে যুক্ত হল অজানা-আচেনা একজন মানুষ, যাকে আপনি ভালবাসবেন সারাজীবন। কিন্তু আসলে কি এবার শুধুই ভালবাসার পালা? পরিবার বা আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক মানেই সেখানে আছে দায়িত্ব, কর্তব্য, সম্মান আর সামাজিকতার বাধ্যবাধকতা। কিন্তু আপনার সঙ্গি/ সঙ্গিনীর সাথে আপনার এই ভালবাসার গল্পটি কিন্তু একটু হলেও ভিন্ন। তাই এ কথা একটু মনে রেখে চললেই আপনার ভালবাসার অনুভূতিগুলো ছড়িয়ে পড়বে সম্পর্কের আনাচে–কানাচে, আরও সুন্দর হয়ে উঠবে সম্পর্কটি।
সঙ্গি/সঙ্গিনীর প্রতি ভালবাসা আর বিশ্বস্ততার অনুভূতিগুলো সম্পূর্ণই কিন্তু অন্য রকম। কেউ বা তাকে এক পলকের জন্য দূরে রাখতে পারেন না, কেউ বা পাশে না থাকলে ঘুমাতে পারেন না। কেউ ভালবাসার প্রকাশে ভীষণ খোলামেলা, কেউ বা তা একদমই লুকিয়ে রাখেন । কিন্তু আসল জায়গাতে সবাই একমত- ‘তাকে ছাড়া আমার চলেই না'।
আসুন না, একটু ঝালাই করে নেই নিজেদের অনুভুতি আর চাওয়া-পাওয়ার অসামান্য সব গল্পগুলো।
- -সঙ্গি/ সঙ্গিনীর নিজেদের বোঝাপড়া আর বিশ্বাসই সব। মনে করুন আপনি তাকে সত্যিই ভালোবাসেন, কিন্তু আপনার সন্দেহ কখনই আপনাকে তার কাছে পুরোপুরি উজাড় হতে দেবে না। ক্ষতি কিন্তু হবে আপনাদের সম্পর্কেরই, তাও একদমই বিনা কারনে। সুতরাং পরিহার করুন সন্দেহ করার প্রবণতা।
- -জীবনে নতুন একজন মানুষ, তার সাথে আসবে নতুন আরও কিছু সম্পর্ক। যা এতদিন ছিল তার একার, এখন তা আপনাদের দুজনেরই। তাদের সবাইকে অবশ্যই সম্মান করুন। দেখবেন তাদেরকে সম্মানের ফলে আপনার সঙ্গি/ সঙ্গিনীর সাথে বোঝাপড়াটা আরও কত চমৎকার হয়ে উঠবে।
- -দুজনের সব পছদ এক হলে কোন কথাই থাকে না। কিন্তু ভালবাসলেই যে সব কিছু একই হতে হবে এমনটাই বা কে বলেছে? বরং চেষ্টা করুন যার যার নিজের পছদ আনন্দময় সময়গুলোতে ভাগাভাগি করে নিতে। যদি কোন কিছু আপনার একদমই অপছন্দের হয়, তাকে সেটা জানান। কিন্তু কখনই তার পছন্দকে খাটো করবেন না। যদি পছন্দের কাজের সময় সে আপনার সঙ্গ চায়, একটু না হয় পাশে বসলেনই। নইলে আর কেমন ভালবাসা!
- -সত্যিকারের ভালবাসা কখনও বদলায় না। সময়ের সাথে সাথে আমাদের বয়স, কাজ, দায়িত্ব আর চারপাশের পরিবর্তনের ফলে তার ভাষা বদলায় কেবলমাত্র। তাই কখনই ভাববেন না আপনার সঙ্গি/ সঙ্গিনী আপনাকে আর আগের মত ভালোবাসে না। অনেক সংসার আর সম্পর্কে এই একটি মাত্র ভুলের কারনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। আপনার মনকে বুঝানোর কাজ আপনাকেই করতে হবে। বাইরে থেকে কেউই এই সমস্যায় আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।
- -যদি দেখা যায় একদম সময় দিতে পারছেন না ভালবাসার এই মানুষটিকে, তখন কাজের ফাঁকেই একটি নিরিবিলি সময় খুঁজে নিন। দূরে কোথাও না হলেও বাড়ির কাছের ছোট ওই কফিশপটাতেই একবার বসুন। এক কাপ কফির বাহানায় খানিকটা গল্প করুন। খরচটা কি খুব বেশি হয়ে যাবে?
- -মনের কথা খুলে বলুন ভালোবাসার মানুষটিকে। যাকে ভালবাসেন, তাকেই যদি না বলতে পারেন, তবে এর ফলাফল শুধুমাত্র ভুল বোঝাবুঝি আর তিক্ততায় শেষ হবে।
- -বন্ধুর সাথে নিজেদের কথা বলবেন, শেয়ার করবেন ভাল কথা, কিন্তু একটু খেয়াল রাখবেন যে আপনার পার্টনার ঠিক কতটুকু পছন্দ করবে ব্যপারটি। যদি সে একদমই না চায়, এটা করা কি ঠিক হবে? কারন আপনি মানেই কিন্তু সে। এবং হয়তোবা সে নিজের সব কিছুকে শেয়ার করাটা পছন্দ নাও করতে পারেন।
- - আপনার পছন্দ না হলেও তার পছন্দের কোন কাজে বাঁধা দেবেন না। খুব বেশি আপছন্দ হলে তার সাথে সরাসরি কথা বলুন। নিজের সমস্যা তাকে বুঝতে দিন। দেখবেন সে নিজেই হয়তো বা শুধুমাত্র আপনার কারনেই তার পছন্দকে একটু খানি দূরে রাখবে।
- -নিজেদের সমস্যায় কখনই অন্যকে নাক গলাতে দেবেন না। এতে ভুল বোঝাবুঝি কমে তো না-ই, আরও বাড়ে। নিজেদের সমাধান নিজেরাই করুন। এমনকি নিজেরদের পরিবারের সাথে আলোচনা করতে চাইলে করুন, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিন দুইজন মিলেই। মনে রাখবেন আপনাদের মুহূর্তের দুর্বলতায় তৃতীয় কেউ খুব সহজেই আপনাদের ক্ষতির কারন হতে পারে। আপনি নিশ্চয় এমন কিছু হোক তা চাইবেন না ।
- -ভালবাসার নিয়ে কথার কি কোন শেষ আছে। যতই পড়ুন না কেন আর যতই ভাবুন না কেন, একে রক্ষা করতে হবে কিন্তু আপনার নিজেকেই। তাই কথা বলার আগে, কোন কাজের আগে একবার অবশ্যই ভেবে নিন তা আপনার ভালবাসার মানুষটির কষ্টের কারন হবে না তো।
0 comments:
Post a Comment