এখন যুগটাই এমন হয়েছে যেখানে মানুষ সত্যর থেকে মিথ্যাটাই বলে বেশি। কেউ চাপে পড়ে বলে তো কেউ বলে ঝামেলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে। আবার কেউ হয়তো অন্যকে খুশি করতে গিয়ে বলতে থাকে মিথ্যা। দুঃখজনক হলেও কেউ কেউ এমনও আছে যারা মিথ্যা বলে শখ করে বা নিজের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে। তবে যে কারনেই হোক না কেন মিথ্যা মিথ্যাই। তা কখনোই সত্য হতে পারেনা। যারা মিথ্যা বলছেন তারা সর্বদাই চেষ্টা করবেন যে কিভাবে নিজের মিথ্যা কথাকে সত্য প্রমাণ করা যায়। তবে একটু খেয়াল করলেই কিন্তু ধরা যায় কোন কথাটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা। আসুন জেনে নেই সেই সম্পর্কে।
- ১. প্রথমেই খেয়াল করুন তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। যিনি মিথ্যা বলবেন তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর একজন সত্যবাদী লোকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কখনোই এক হবেনা। মিথ্যা বলার সময়ে কিছুটা শক্ত হয়ে যাবে সে। হাতের মুভমেন্টও কমে আসবে অনেকটাই। মোট কথা স্বতঃস্ফূর্তভাব কমে আসবে অনেকটাই।
- ২. যিনি মিথ্যা বলছেন বা বলবেন তিনি প্রথমেই সরাসরি চোখের দিকে তাকাবেন না। মিথ্যা কথা চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারেন এমন মানুষ খুব কমই আছেন। মানুষ মিথ্যা কথাটাই বেশী গুছিয়ে আর সুন্দর করে বলে থাকে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে। মিথ্যা কথার ভূমিকা অপ্রয়োজনীয়ভাবেই দীর্ঘ হয়ে থাকে।
- ৩. অনেকেই মিথ্যা বলার সময় ঘামতে শুরু করবেন। কেউ কেউ দেখাবেন অস্থিরতা। কেউ হয়তো মাথা বা কানের পেছনে চুলকাতে পারেন। মানুষের শারীরিক রিফ্লেক্স এমনভাবে তৈরি যে নিজের অজান্তেই শরীর বেশ কিছু ক্লু দিয়ে দেয় অসেচতনভাবেই সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ে।
- ৪. যখন কেউ মিথ্যা বলবে তখন তার আবেগের সময় ও সময়কাল সাধারনের থেকে কমবেশি হতে পারে। আবেগের অবস্থান সাধারনের থেকে বেশি সময় স্থায়ী হলে এবং হঠাৎ করেই এই আবেগ শেষ হয়ে গেলে বুঝতে হবে ব্যক্তিটির কথা মিথ্যা হবার সম্ভাবনা বেশি।
- ৫. সেই সাথে আবেগের প্রকাশ ও সময়ের গড়মিলও হতে পারে। যেমন কেউ যদি কোন উপহার পাবার পরে বলেন যে তিনি খুব খুশি হয়েছেন এবং তারপর হাসেন, তাহলে ধরে নিন ব্যক্তিটির মিথ্যা বলার সম্ভাবনা প্রবল। কেননা খুশি হলে প্রথমে তিনি হাসবেন, তারপর বলবেন। অর্থাৎ কেউ কিছু বললে তার সাথে যদি আবেগের মিল না থাকে তবে ধরে নিতে পারেন যে তিনি মিথ্যা বলছেন। যেমন- কেউ যদি বলে যে সে আপনাকে ভালবাসে, কিন্তু কথার সাথে সাথে সেই ভালবাসার প্রকাশটা নেই, তবে তিনি অবশ্যই মিথ্যা বলছেন বলে ধরে নিতে হবে। এছাড়াও কেউ যখন মিথ্যা বলে থাকেন তখন তার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন থাকে সীমিত। সত্যি কথা বলার সময়ে যেমন কথাটি চোখ-কপাল-গালের সাথে সমন্বয় করে বলা হয়, মিথ্যা বলার সময়ে এমনটা হয়না।
- ৬. যিনি মিথ্যা বলছেন তিনি সাধারনত ডিফেন্সিভ মুডে থাকেন। কথায় কথায় রেগে যেতে পারেন, অনেকে ঝগড়াও করতে পারেন যেখানে একজন সত্যবাদী ব্যাক্তি শান্ত থাকবেন কথা বলার সময়ে।
- ৭. যিনি মিথ্যা বলছেন তিনি সাধারণত প্রশ্নকর্তাকে ভয় পেয়ে থাকেন। কারন প্রশ্নকর্তা বেশি প্রশ্ন করলে তার মিথ্যা ফাঁস হয়ে যাবার একটা ভয় থাকবে সব সময়। তাই বেশিরভাগ সময়ে সে সরাসরি উত্তর দেয়ার চাইতে সেখান থেকে সরে যেতে চেষ্টা করবে বা প্রশ্নকর্তাকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করবে।
- ৮. যিনি মিথ্যা বলছেন তার সাধারন কথার সুর ও মিথ্যা কথার সুরের মাঝে অবশ্যই পার্থক্য থাকবে। কেউ যদি প্রচলিত ভাষায় কথা বলে থাকে সাধারনত, সে হয়তো পোশাকি ভাষায় কথা বলা শুরু করতে পারে। কেউবা আবার ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করতে পারে। সেই সাথে যখন মিথ্যা বলবে তখন তাদের কথা অপেক্ষাকৃত সুন্দর হবে তাদের সাধারন সত্যি কথার তুলনায়। অনেকে আবার সরাসরি মিথ্যা না বলে ঘুরিয়ে মিথ্যা বলবে।
- ৯. যারা মিথ্যা বলছেন তারা যে বিষয়ে মিথ্যা বলছেন তা বদলে গেলে বেশ শান্ত হয়ে যাবেন। তাদের কথা বলার পরিমাণ বেড়ে যাবে সেই সাথে তাদের গলার আওয়াজও মজবুত শোনাবে। অন্যদিকে যিনি সত্য বলছেন তিনি হঠাৎ বিষয় বদলে গেলে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন এবং চেষ্টা করবেন আগের বিষয়ে ফেরত যেতে।
- ১০. অনেকেই নিজের মিথ্যা কথা ঢাকার জন্য সারকাজম বা হিউমারের সাহায্য নিতে পারে। অনেকে আবার এগুলোর সাহায্যেই মিথ্যা বলতে পারে।
আপনার সাথে কথা বলার সময়ে কারো মাঝে যদি উপরোক্ত কোন আচরন লক্ষ্য করা যায় তবে সেই ব্যক্তিটির মিথ্যা বলার প্রবল সম্ভাবনা আছে। তবে এর মানে এই না যে সেই মানুষটি আপনার সাথে মিথ্যাই বলছেন। অনেকেই হয়তো নার্ভাস হয়ে উপরোক্ত কোন আচরন করতে পারেন। কেউবা হয়তো মানসিকভাবে উত্তেজিত থাকার ফলেও এগুলোর কোন একটা আচরন করে থাকতে পারেন। আবার কারো মানসিক অবস্থার কারনেও অন্য রকম আচরন হতে পার আপনার প্রতি।
এছাড়াও সবাই যে একই সমান ও একই সময়ে নিজেদের আবেগ প্রকাশ করতে পারেন তাও নয় কিন্তু। কারো মাঝে আবেগের তারতম্য মানে এই না যে সে ব্যাক্তি আপনাকে মিথ্যা বলছেন। মনে রাখবেন যার সাথে কথা বলছেন তাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন কি না। যদি পারেন তবে তার মধ্যে এমন কোন আচরণ দেখলে খারাপ কিছু ভেবে বসবেন না যেন। অন্যকে বিশ্বাস করতে শিখুন প্রথমে। তাহলে দেখবেন সবাই আপনার বিশ্বাসের মূল্য দিবে এবং মিথ্যা বলবেনা আপনাকে।
0 comments:
Post a Comment