কতোই না সম্পর্ক সাথে নিয়ে আমরা বাস করি। এত সব সম্পর্কের মধ্যে একটি অন্যতম সুন্দর সম্পর্ক হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। কত না মধুর এই দাম্পত্য জীবন। একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষকে আপন করে নেয়া,তার সাথে সারা জীবন অতিবাহিত করা। শুনতে প্রথমে কঠিন হলেও জীবনের একটি সময়ে পৌঁছে এই আত্মিক সম্পর্কটি হয়ে ওঠে জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এই সুন্দর সম্পর্কের ভেতরও মাঝে মাঝে বাসা বাঁধে ভয়ংকর এক ব্যাধি, এই ব্যাধির নাম "সন্দেহ" ।
কেবল এই সন্দেহের কারণেই এত সুন্দর একটা সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটতে সময় লাগে না। স্বামী অথবা স্ত্রী যে কোনও জনের মনেই সন্দেহ দানা বাঁধতে পারে। তবে আমারা আজ আলোচনা করবো স্বামীকে সন্দেহ করা নিয়ে।
- একটি সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে আস্থা অর্থাৎ বিশ্বাস। যে সম্পর্কে বিশ্বাস নেই,সেই সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই। একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিশ্বাস সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী রোজ দেরী করে বাসায় ফিরছে,তার মুঠোফোনটি বার বার বেজে উঠছে- এতে একজন স্ত্রীর মনে সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো,অফিস এর জরুরী কাজটার জন্যই হয়তো তার দেরী করে বাসায় ফেরা বা মুঠোফোনে জরুরী আলাপ । তাই প্রথমেই সন্দেহ না করে স্বামীর কাছ থেকে তার সমস্যাটি জানার চেষ্টা করুন।
- প্রতি মানুষের খানিকটা একান্ত সময় প্রয়োজন। স্বামী হয়েছেন বলেই সারাটা সময় আপনার সাথে থাকতে হবে এমন কোনও নিয়ম নেই। তিনি হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যেতে চাইতে পারেন, কিংবা একা একা কিন্তু আরাম করা, গান শোনা বা টিভি দেখার মতন কাজ করতে চাইতে পারেন। প্রতিটি মানুষের এই একান্ত সময়টা দরকার হয়। এই ব্যাপার নিয়ে অযথা সন্দেহ করতে যাবেন না।
- প্রতিটি মানুষের একটি অতীত আছে। সেই অতীত নিয়ে বর্তমানে ঘাটাঘাটি করে অযথা সন্দেহের সূচনা করবেন না।
- মানুষ মাত্রই অপর মানুষের সাথে মিশবে। আপনার স্বামী অন্য কোনও নারীর সাথে কথা বললেন বা পরিচিত হলেন মানেই তাঁদের মাঝে প্রেম হয়ে গেলো- এই ধরনের চিন্তা ভাবনা বাদ দিন।
- অনেক সময় হয়তো কর্মক্ষেত্রের চিন্তার কারনে স্বামীর মন মেজাজ খারাপ থাকে। আপনাকে সময় দিতে পারেন না, হয়তো ভুলে যান স্মরণীয় কোনও দিন। এ রকম পরিস্থিতিতে মন খারাপ নয়,বুদ্ধির সাথে মোকাবেলা করুন। আপনার সঙ্গীর মনে নেই তো কি হয়েছে? আপনি মনে রাখুন, সঙ্গীকে দিন দারুন কোন সারপ্রাইজ। এতে আপনার সঙ্গীটি যেমন খুশী হবেন, তেমনি নিজের ভুলও বুঝতে পারবেন। আর পরবর্তী দিনগুলোতে সে স্মরণীয় দিনটির কথা অবশ্যই মনে রাখার চেষ্টা করবেন।
- স্বামীকে বলুন যে আপনি তাকে সাহায্য করতে চান। রাগারাগি বামান অভিমান নয়,ভালবাসার সাথে তাকে ভরসা দিন। তাকে অনুভব করান যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনি তার পাশে থাকবেন। দিনে না হলেও রাতে দু জন এক সাথে ডিনার করুন। রান্না করুন তার প্রিয় কোন খাবার। প্রিয় কোন উপহার দিয়ে তাকে চমকে দিতে পারেন। হোক না তা ছোট্ট কিছু,কম দামের। প্রিয় মানুষকে উপহার দিতে কোন বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই,তাই না?
- মাঝে মাঝেই সময় করে কাছে পিঠেই কোথাও ঘুরতে যান,কিছুটা সময় দুজন একা কাটান। সম্ভব হলে স্বামীর প্রিয় কোন বন্ধুকে বাসায় আমন্ত্রন জানাতে পারেন। এতে তার মনের চাপ অনেকটাই কমে যাবে। তার মনের উপর চাপ কম থাকলে দেখবেন যে আপনাদের সম্পর্ক মধুর থাকবে, আর তার প্রতি সন্দেহও আপনার মনে দানা বাঁধবে না।
- আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা, কিছু সন্দেহ করে স্বামীর সাথে রাগা রাগি করবেন না। সেটা কারণে- অকারণে যাই হোক না কেন। আগে পুরো ব্যাপারটি বুঝতে চেষ্টা করুণ। তার কোন কথা বা কাজ আপনার ভাল না লাগলে তাকে সেটা বুঝিয়ে বলুন। হয়তো তার কাছে এমন কোনও ব্যাখ্যা মিলবে জা কিনা আপনার কাছে গ্রহণ যোগ্য মনে হবে। রাগা রাগি করলে সম্পর্কের শুধু অবনতিই হয়। হয়তো রাগ করে একটু বেশি কথা শুনিয়ে দিলেন,সঙ্গী হয়তো বেশী কষ্ট পেলেন মনে। ব্যাস,শুরু হয়ে গেল দীর্ঘমেয়াদি মনো-মালিন্য
- কোনও কিছু নিয়ে সন্দেহ করে রাগারাগি হলে নিজের ইগোকে একটু দূরে সরিয়ে রাখুন। নিজেই না হয় এইবার আগে থেকে "sorry" বলুন। একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন ক্ষমা চাইলে কেউ কখনও ছোট হয়ে যায় না। যেহেতু সন্দেহ করেছেন আপনি, সেই অহেতুক হয়ে থাকলে ক্ষমাও আপনাকে চাইতে হবে।
স্বামীকে নিজের সব থেকে ভাল বন্ধু ভাবুন। আপনার মনের কথা গুলো তার সাথে ভাগাভাগি করে নিন,তাকেও অনুভব করতে দিন,আপনি তাকে কত বেশি ভালবাসেন আর বিশ্বাস করেন। পরস্পরের সাথে বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকলে সন্দেহ মনে দানা বাঁধতে পারবে না।
0 comments:
Post a Comment