প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সহজলভ্য পর্ণগ্রাফি, হুমকির মুখে অপ্রাপ্ত বয়সীরা

দেখা গেল পরিবারের ছেলে মেয়ে দুজনই পৃথক পৃথক স্কুলে পড়ে। দিনকাল তো ভালো না, দুশ্চিন্তার হাত থেকে বাঁচবার জন্য মা ছেলে-মেয়ে দুজনের হাতেই তুলে দিলেন মোবাইল ফোন। কিন্তু তাতে দুশ্চিন্তা তো কমলোই না, বরং বাড়লো। কি করে? দেখা গেল গভীর রাতে মা তাঁর কিশোরী কন্যার কক্ষের বন্ধ দরজায় কান ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছেন- মেয়ে যদি কারো সাথে ফোনে কথা বলে!

মেয়ের দিকে মনোযোগটা বেশি দিতে গিয়ে পাশের কক্ষে থাকা ছেলের কথা মায়ের আর মনে থাকেনা। হয়তো বুঝতে পারেন না যে ঠিক যে মোবাইল ফোনের কারণে তিনি তাঁর কিশোরী মেয়ের অনিষ্ট আশংকা করছেন- সেই একই কারনে কিন্তু তাঁর কিশোর ছেলেটিও পড়তে পারে ভয়াবহ এক সঙ্কটে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির কারনে আজকাল যে স্রেফ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করা সম্ভব হয়- এমন তথ্য এখনো অনেক মা-ই জানেননা!

মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের এমন সুযোগ পেয়ে অনেক স্কুল পড়ুয়া কিশোর কিশোরী আজকাল খুব সহজেই ঝুঁকে পড়ছে পর্ণগ্রাফির দিকে। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় এখনো অনেক পরিবার কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিশু কিশোরদের কাছে যৌন আচরন কিংবা শিক্ষার বিষয়টি চেপে যায়। যথার্থ জ্ঞান বা দিকনির্দেশনার অভাবে কোমলমতি শিশু কিশোররা জীবনের সূচনালগ্নেই মারাত্মকভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছে, ঝুঁকে পড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণের দিকে।

বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে পর্ণগ্রাফি আসক্তির কারনে মানুষ যে শারীরিক এবং মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে- এ ব্যাপারে অনেকেরই এখনো স্বচ্ছ কোন ধারনা হয়নি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে শৈশব বা কৈশোরেই পর্ণে আসক্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে মানুষের কাছে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের মত ব্যাপারগুলো খুব গতানুগতিক বা সাধারন আচরন বলে মনে হয়। এসব আচরণের মাঝে যে বীভৎসতা কিংবা কদর্যতা আছে- তা আর পরবর্তীতে পর্ণ আসক্ত মস্তিষ্কটি আলাদাভাবে বুঝতে পারেনা। আর পর্ণ আসক্তদের অস্বাভাবিক আচরণের কারনে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে শিশুরাই।

সম্প্রতি এপ্রিল জোন্স নামের পাঁচ বছরের এক শিশুকে যৌন নির্যাতন এবং খুনের অভিযোগে আটককৃত মার্ক ব্রিজারের ল্যাপটপ ঘেঁটে অনেক শিশু পর্ণ এবং শিশুদের নগ্ন ছবি পাওয়া যায়। বার বছর বয়সী আরেক কিশোরীকে হত্যার পর গ্রেফতার হওয়া স্টুয়ারট হ্যাজেলের ব্রাউজিং হিস্টোরি ঘেঁটেও দেখা যায়- হ্যাজেল preteen porn কিংবা rape এর মত কনটেন্টগুলোকে নিয়মিত গুগলে সন্ধান করেছে। মুক্ত যোগাযোগের এই যুগে পর্ণ এখন প্রায় ডালভাতের মত সহজলভ্য হয়ে গেছে। মোবাইল ফোন, ডিভিডি, পেন ড্রাইভ এমনকি গুগল গ্লাস- পর্ণ ব্যবসায়ীরা কোন মাধ্যম, কোন প্রযুক্তিকেই ছাড় দিতে রাজি নন। আগে যা সীমাবদ্ধ ছিল চটি বই বা পত্রিকার মাঝে আর সংগ্রহ করতে হতো লুকিয়ে-চুরিয়ে, এখন সেগুলোই একটা ক্লিকে উপস্থিত মুঠোফোনের মাঝে।

আমাদের দেশে আশংকা জনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণ, বাড়ছে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি সহ আরও নানান রকম যৌন অপরাধ মূলক কাজকর্ম। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে ধর্ষক নিজেও হয়তো কেবল কৈশোর পার করেছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা পর্ণ গ্রাফিকেও সহজের চাইতে সহজ লভ্য করে দিয়ে সকলের কাছে। বিশেষ করে অপাপ্ত বয়স্কদের কাছে। তবে কেবল আমাদের দেশ নয়, কমবেশি এখন পৃথিবীর সব দেশেই একই চিত্র। তরুণ বয়সীরা বিগত সময়ের চাইতে এখন অনেক বেশি যৌন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

যে কারনে বাইরে থেকে ঘিরে না রেখে আপনার শিশুর ভেতরেই এর প্রতিরোধ বুনে দিন। অপসংস্কৃতির সাথে লড়াইয়ের জন্য নিজস্ব সংস্কৃতির চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র আর কিইবা হতে পারে! ওর ন্যায়-নীতির অনুভূতিটুকু নিয়ে কাজ করুন, দিন পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং দিকনির্দেশনা এবং সর্বোপরি ওর চারপাশ ঘিরে রাখুন সুস্থ সংস্কৃতির আবহ দিয়ে।

কঠোর শাসন, মারধোর কিংবা কম্পিউটার- মোবাইল ব্যবহারে বাধা না দিয়ে বরং আপনার সন্তানের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করুন। নিজস্ব নীতিবোধ আর উপলব্ধি দিয়ে সে নিজেই মোকাবেলা করবে পর্ণের মত বিষাক্ত সরীসৃপটিকে ..

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!