“বিবাহ বার্ষিকী” এই শব্দটা নিয়ে লিখতে কেমন যেন আলাদা ভাললাগা সৃষ্টি হয় মনের ভেতরে । সেই প্রথম দিনটার কথা মনে পড়ে যায় । আমি ছিলাম একটু বোকা বোকা, সেও । অজানাকে জানার একটা আগ্রহ ছিল প্রবল । জীবনের প্রথম কাউকে সম্পুর্নভাবে নিজের করে পাবার একটা আনন্দ ছিল, অসীম । বাইশটি বছরের জমে থাকা কথা শেয়ার করার আ্রগহ ছিল, সীমাহিন । তারপর ধীরে ধীরে কখন যে একই ছাদের নীচে এ্কই কম্পল নিয়ে দুজনে টানাটানি করতে করতে এই দশটা বছর কাটিয়ে দিলাম, টেরই পাইনি । আজ সে দিনগুল খুব মিস করছি । আবার ভালও লাগছে এই ভেবে জীবনের এতগুল বছর কাটিয়ে দিয়েও আমাদের ভালবাসা রয়েগেছে সেই প্রথম দিনের মত, অজানা, অচেনা, আরো বেশী আবেগময়ী ।
বিবাহ বার্ষিকী :
“বিবাহ বার্ষিকী” এই শব্দটা ছেলেদের কাছে যতটা গুরুত্ব বহন করে তার চেয়ে মেয়েদের কাছে অনেকবেশী গুরুত্বপুর্ন । কারন শব্দটা মুলত বিনোদেন ও আনন্দদায়ক শব্দ । কিন্তু আমার ছেলেরা অনেক সময় ভাবী জীবনটা শুধু কাজ কাজ আর, মাস শেষে কখন মাইনে পাবো, কখন বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, ডিস বিল, বাচ্চার দুধের বিল দিয়ে মাথাটা হালকা করে নাকে সড়িষার তেল দিয়ে ঘুমাবো । কিন্তু ভাবতে চাইনা এর বাইরে অনেক কাজ আছে আমাদের, ভাবতে হয় আমাদের জীবনের আনন্দময় মুহুর্তগুলো, পুরোনো রঙিন স্বুতিগুলো আবার নতুন করে সামনে নিয়ে আসতে হয়, জীবন করে নুতন করে উপভোগ করার জন্য ।
অনেক সময় আমরা পাগল হয়ে যাই, আমার পছন্দের গাড়ীটির ট্যক্স জমা দেওয়ার জন্য, না হলে পুলিশ রাস্তায় গাড়ী আটকাবে । জমির খাজনা দেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি জমি বেদখর হবে বা কেচ খেতে হবে । পুরানো সনদপত্রটা নিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে থেকেই দৌড় ঝাপ কির সনদপত্রটি নবায়ন করার জন্য । কিন্তু কই এটাতো কখনো ভাবীনা, গত এক বছর আমরা দুজন মানুষ সুখে দুখে একই ছাদের নীচে, একই সংসারে কাটিয়েছি, কত ঝড়তুফান, কত প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে এই একটি বছর আমরা অতিবাহিত করলাম, তাই গত একটি বছরে আমাদের সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আজকের দিনটিতে আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ও আমাদের সংগীনীকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত এবং আজকের দিনটি উৎযাপনের মাধ্যমে আগামী বছরের জন্য আমাদের সম্পর্কটাকে নবায়ন করা উচিত । কারন অনেক সময় আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাও ফিকে হয়ে যায়, তাই বছরের এই দিনটি উৎযাপনের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কটা আবার নতুন করে শুরু করার অঙ্গীকার করা যায় ।
একবার ভাবতো !
অচেনা দু’টি পথ, অজানা দু’ দেহ-মন । মিলনের প্রত্যাশায় বেছে নিল শুভক্ষন। হল পরিচয়, হল পরিণয়, শুরু হল পথচলা পাশাপাশী । শুরু হল ভাগাভাগি, জীবনের অনুভূতি, সুখ-দুখ, কান্না-হাসী। জল গড়িয়ে কেটে গেল দিন । স্বপ্নের আগামীর ঠায় হল অতীতে। সুখের দিনগুলো আজ ঠায় পেল রুপোলী স্মৃতিতে । - এই পুরানো স্বৃতিগুলোকে আজকের দিনে নতুন করে সাজিয়ে আগামী বছরটিতে আমাদের সর্ম্পকটাকে আরো রঙিন করে তুলি ।
আসলে ভালবাসাটা ভেতর থেকে আসা উচিত, কেউ কাউকে বলে শেখাতে পারেনা, এটা স্কুল কলেজের কোন পড়া নয়, যে গাইড বা নোট বই থেকে শিখে নেওয়া যায় । আর এই ভেতর থেকে আনতে হলে আগে আমাদের মানিসকতা পরিবর্তন করতে হবে । সংসার কিংবা সম্পর্কটাকে ভাবতে হবে একটা সাইকেলের মত । স্বামী-স্ত্রী হলো চুটি চাকা। এর একটি চাকা বিকল/দুর্বল হলে সাইকেলটির অস্তিত্ব থাকবেনা। তেমনি আমাদের স্ত্রীদেরকেও জীবনের একটি পার্ট ভাবতে, মুল্য দিতে হবে সমানভাবে । আমাদের জীবনের দৈনিক/মাসিক রুটিনে তাদের জন্য একান্তভাবে কিছু সময় বা বিশেষ বিশেষ দিনগুলোকে একটু ভিন্নভাবে সাজাতে হবে। জীবনকে আাগমীতে বাচিয়ে রাখার জন্য এইসব দিনগুলো আরো রঙিন করে সাজাতে হবে । যাতে বেচে থাকার অনুপ্রেরণাগুলো আরো সজীব ও রোমান্টিক থাকে ।
আমি চাই :
আজ যাদের বিবাহ বার্ষিকী, তারা অফিস থেকে যাবার সময় ভাবীর জন্য সাধ্যমত একটা সুন্দর শাড়ী আর একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে যান । সন্ধ্যার হালকা মিষ্টি কুয়াশাচ্ছন্ন ঠান্ডায় বরফ আর গোলাপের পাপড়ী মেশানো পানি দিয়ে গোসল করে নতুন শাড়ীটা পড়তে বলুন । বলুন সময় নিয়ে আজ মনের মত করে সাজো । আর আপনি রুমের পুরাতন কালার বাল্বটি খুলে, নতুন একটি বল্ব জ্বালান, বাকিসব আলোগুলো নিভিয়ে দিন । পুরো রুমটায় সুগন্ধি স্প্রে করুন । এবার ভাবীর দুহাত ধরে রুমের ঠিক মাঝখানে দাড়ান । হাটু গেড়ে বসুন, ভাবীর চোখের দিকে তাকান, এবার অন্তরের ভেতর থেকে বলুন-
আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে ভালোবাসা মানে যদি হয়, দুই জন মিলে একসাথে চাঁদনী রাতে চাঁদ দেখা তবে আমি তোমার সাথে চাঁদ দেখতে চাই । আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে ভালোবাসা মানে যদি হয়, গোধূলি লগ্নে সমুদ্রের পাড়ে দুইজনে হাত ধরাধরি করে হাঁটা তবে আমি তোমার হাত ধরে হাঁটতে চাই । আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে ভালোবাসা মানে যদি হয় বৃষ্টির দিনে দুই জনে একসাথে ভেজা তবে আমি তোমার সাথে ভিজতে চাই । আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা তবে ভালোবাসা মানে যদি হয়, এক মগ কফি দুই জনে ভাগ করে খাওয়া তবে আমি তোমার থেকে আমার সেই ভাগটা চাই । যদি এটাকে ভালোবাসা বলে তবে আমি সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসতে চাই ।
0 comments:
Post a Comment