যারা প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করেন, হয়ত এরকম ছবি দেখে তাদের মনে কোন ফিলিংস’ই আসেনা । কারণ তারা ফিলিংস কে ব্রেইনে পাত্তা দেননা । যদি ফিলিংসটা ব্রেইন আর মনকে পেয়ে বসে, তাহলেতো অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে, তা কি করে সম্ভব? আপনাকে ছাড়াতো অফিস চলবেইনা । তার চেয়ে দেখেও না দেখার ভান করাই বরং ভাল।
কিন্তু কদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন? নিজেকে লুকাতে লুকাতে একদিন আপনার সঙ্গীও লুকিয়ে আপনার জায়গায় অন্য একজনকে বসিয়ে নিবে, ভেতরে ভেতরে । আপনি কি একটা জিনিস লক্ষ করেছেন, বিয়ের দিন রাতে আপনার সঙ্গীনীর হাত যতটা নরম ছিল, আজ ততটা আছে কি? সেদিন তার হাত ধরে যতটা ভাললাগতো, আজ ততটা লাগে কি? সেদিন চেহারায় যতটা উজ্জলতা, মায়াবীভাব ছিল, আজ তা আছে কি? সেদিন চোখের দিকে তাকালে যতটা ভাল লাগতো, আজ ঐ রুক্ষ চেহারা আর চোখের দিকে ততটা ভাল লাগে কি?
হ্যা হ্যা
......আমি জানি আপনি আমাকে গালাগাল দিচ্ছেন, আর বলছেন, দূর...এগুলো ফালতু প্যাচাল । এগুলো ভাববার সময় আছে? আমি বড় চাকুরী করি, দামী গাড়ীতে চড়ি, এতো ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে আমার ভাবলে চলেনা । যারা পলিথিনের ঘর বানিয়ে রাস্তায় থাকে, এগুলো ওদের ভাবনা, ওরা বউকে দামী দামী গহনা, দামী দামী খাবার খাওয়াতে পারেনা, তাই এগুলো বলে মিথ্যা সান্তনা দেয়, আমার এগুলো নিয়ে ভাববার সময় কোথায়?
মনে পড়ে, শেষ কবে এভাবে সবুজ চীরচেনা পথে আলতো করে তার হাত ধরে হেটেছেন? যদি হেটে থাকেন তবে অবশ্যই দেখেছেন, আপনার সঙ্গীনীর হাতটি সেই প্রথম দিনের মত নরম, মোলায়েম, কোমল ভাবটি নেই ! এখন রুক্ষ, শক্ত আর খসখসে হয়ে গেছে ! কারণ তিনি আপনার জন্য এখন বাসাতেই লন্ড্রী খুলে বসেছেন, আপনার টাকা সেইফ করার জন্য । আপনার আর আপনার বাচ্চার কাপড় ধুতে ধুতে সাবান আর পাউডারের খারের কারনে তার হাতটা এখন শক্ত আর খসখসে হয়ে গেছে । কিন্তু আপনি কি পারতেন না আগের মতো আপনার জামা-কাপড়গুলো লন্ড্রীতে দিতে কিংবা আপনার সাধ্য থাকলে একটা ওয়াসিং মেশিন কিনতে, কারণ ওয়াসিং মেশিনটা কোন বিলাসিতা নয়, এটা সত্যিকারার্থে প্রয়োজনীয় ।
মনে পড়ে, শেষ কবে আপনি রান্না ঘরে গিয়েছেন । চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রান্না করতে করতে আপনার সঙ্গীনীর চেহারাটা কিভাবে রুক্ষ, বয়সের অতিরিক্ত ছাপ পরে গেছে। আজ একবার গিয়ে দেখুন না রান্না ঘরে, কিভাবে দুটো এ্যাডজাস্ট ফ্যান লাগানো যায়, কিভাবে অন্তত দশ ডিগ্রি না পারেন পাঁচ ডিগ্রি তাপমাত্রাও কমানো যায় ! না হলে একটি ছোট্ট টেবিল ফ্যান কিনে দিন, অন্তত রান্নার সময় যাতে একটু কষ্টটা কম লাগে । তার কষ্ট কি আপনার কষ্ট মনে হয়না ?
গত সাতদিন ছুটি ছিল আপনার, কাজের সময় কিংবা রাস্তা পার হওয়ার সময়...হাত ধরাটা অন্য বিষয় ওটা দায়িত্ববোধ, ভালবাসা বা অনুভুতি শেয়ার করা নয় । কোন কাজ ছাড়া শুধু আপনারা হাতটে বেড় হয়েছেন, তখন আলতো করে তার হাতটা ধরে কিছু সময় পার করেছেন কি? জানি করেননি, কারণ ওর হাত দিয়ে হলুদ-পিয়াজের গদ্ধ আসে, হাতটা খসখসে, ধরে আরাম লাগেনা, যতটা ইয়ং সুন্দরী কলিগের হাত ধরে লাগে !!
(রাগ করবেন না, আপনি ধরেন না, কিন্তু আমি ধরি, তাই বুঝলাম)।
কিন্তু আপনার কি মনে আছে, যেদিন প্রথম ভালবেসে আপনাকে বিয়ে করে আপনার সংসারে এসেছিল, সেদিন শুধু হাতটা নয়, পুরো শরীরটাই ছিল রেশমের মতো নরম, গোলাপের মতো সুগন্ধী, ঠিক যেন শীতের কুয়াশাছন্ন বাগান থেকে শিশির ভেজা গোলাপটা ছিড়ে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিল । আর আজ আপনার অযত্ন আর অবহেলায় ঝড়া আর বাসী ফুলের রুপ ধারন করেছে। তবে এখনো সময় আছে ঠিক আগের অবস্থানে না নেওয়া গেলেও আদর, যত্ন আর ভালবাসা দিয়ে অনেকদিন সজিব রাখা যাবে ।
চলুন, দিনে হয়ত আপনার লজ্জা লাগতে পারে, কিংবা সময় পাননা, আজ সন্ধ্যার পরে সঙ্গীনীকে নিয়ে একটু হেটে আসুন, ঘুরে আসুন ফুসকার দোকান, কিংবা নদীর ধার দিয়ে ! দেখবেন প্রতিদিনের সন্ধ্যার চেয়ে আজকের সন্ধ্যাটা অনেক রোমাঞ্চিত হবে, ভাললাগবে । আমরা বেচে থাকার সময়টা বাড়াতে পারবোনা, কমাতেও পারবোনা, কিন্তু সেই সময়টাকে একটু ভালবাসা জড়ানো, রোমাঞ্চিত, আনন্দপুর্ন, হাসিখুসীতে পরিপূর্নতো করতে পারি । নিশ্চয়ই তাতে কোন বাধা নেই । বিশ্বাস করুন আমি অনেক দম্পতিকে দেখেছি, রাত দশটার পরে রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোতে হাত ধরে হাটছে । ফুটপাতে দাড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে । হেসে হেসে গল্প করছে, আর একজন আর একজনের গায়ে গড়িয়ে পরছে কলেজ জীবনের মতো । আমি অনেককে দেখেছি, যারা দিনের বেলায় বিলাস বহুল গাড়ীতে ঘুরে বেড়ায়, অথচ রাতের বেলা সঙ্গীনীকে নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুটপাতের টং দোকানে চা খেতে । এগুলোতে আমাদের মান সম্মান, ভালবাসা কমেনা, বরং বাড়ে । একদিন করেই দেখুন না, কমে কিনা??
0 comments:
Post a Comment