ঈদ মোবারক!
ঈদের দিনটিতো শেষ হয়ে গেল, কিন্তু আজ হাজারো ব্যস্ততায় আপনার কাছের মানুষটির একবারো খোঁজ নিয়েছেন কি? আমি জানি অনেকের কাছের মানুষটি কাছেই আছে । আবার যাদের দূরে আছে তারা হয়ত ফোন করে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেছেন, আবার কেউ কেউ হয়ত গিয়ে দেখা করেছেন । কিন্তু সব দেখায় মন ভরেনা, সব কথাও হ্নদয় ছুতে পারেনা ।
যাদের মনের মানুষ কাছে আছে, হাজারো ব্যস্ততার মাঝে তারা কি আজ একবারও তাকে একাকী দরজার আড়ালে ডেকে বলেছেন কি
"ঈদ মোবারক"। কিংবা দিনের শেষ ভাগে সকল ব্যস্ততা শেষ করে শুধু একান্তে তাকে ডেকে নিয়ে
"আজ খুব কষ্ট হয়েছে না? হয়ত তোমার মতো নয়, তবুও আমিও একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমার খোঁজ নিতে পারিনি কিংবা তোমার কাজে সাহায্য করতে পারিনি । তবে বিশ্বাস ছিল তুমি সব সামলে নিতে পারবে । কারণ তোমার যোগ্যতা আর ভালবাসা তোমার প্রতি এই বিশ্বাস, আস্থা, সাহস রাখতে বাধ্য করে । শুভ রাত্রি
"।
কিংবা "আজ কেমন আছো? আজ সেই দিনটির কথা খুব মনে পরছে।এমনই একটা আনন্দ আর কোলাহলপূর্ণ দিনে তুমি আমার জীবনে এসেছো । তোমার যোগ্যতা আর ভালবাসা দিয়ে আমার মতো মানুষকে করেছ ঘরমুখী । সংসারের পরম মমতায় বন্ধী করে শিখিয়েছো দায়িত্ববোধ, দিয়েছো নির্ভরতা । সত্যিই তোমার ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ না হলে কবেই ভেসে যেতো আমার ছন্নছারা জীবনটা । আর আজকের এই আনন্দের দিনে উপলব্ধি করছি, এ আনন্দ আর সুখের ভীত তোমারই গড়া । ধন্যবাদ তোমাকে । শুভ রাত্রি ।"
কিংবা ব্যস্তার মাঝে একটু আড়ালে ডেকে
" খুব কষ্ট হচ্ছে? কপালের ঘামটুকু মুছে ফেলো । তোমাকে খূব ক্লান্ত দেখাচ্ছে । একটু নিজের খেয়ালও রেখো ।"
কিংবা "আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে । চলো বাগানে যাই ফুলেরা তোমায় দেখবে, কারণ তুমি ফুলের চেয়েও সুন্দর । (বাড়িতে ফুল বাগান না থাকলে) চলো ছাদে গিয়ে পুর্নিমার চাঁদকে ডেকে বলি, দেখ চাঁদ আমার প্রিয়া তোমার চেয়ে কত সুন্দর ।"
প্রতিদিন আপনি বাইরে থাকেন তাই হয়ত দেখতে পাননা, যে আপনার সঙ্গীনী সারাদিন কত ব্যস্ত থাকে । চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কতটা সময় তাকে রান্না ঘরে কাটাতে হয় । আর এই ধরনের হাজারো কাজ, দুশ্চিন্তা, একাকিত্ব, আর আপনাকে হারানোর ভয় সারাদিনে তার মনে কষ্টের বিন্দু বিন্দু বালুকণা জমতে থাকে । আপনি যখন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে একান্ত নিভৃতে তার জন্য দশটা মিনিট সময় বরাদ্দ রাখবেন, সে দিনের ছোট্ট ছোট্ট ঘটনাগুলি আপনার সাথে শেয়ার করবে । আপনি কোনটায় পরামর্শ দিবেন । কোনটায় শান্তনা দিবেন । কোনটায় বলবেন
"প্লিজ একটু সামলে নাও । আমিতো আছি ।"
কোনটায় বলবেন
"মন খারাপ করোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে ।"
কিংবা মাথাটা একটু বুকের সাথে নিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিন । তাহলে সারাদিনে মনে ভেতরের জমে থাকা কষ্টের বিন্দু বিন্দু বালুকণাগুলো আপনার ভালবাসার স্রোতোধারায় ভেসে যাবে । আর যে হাসিটা আর অশ্রু ছলছল নয়ন দুটি নিয়ে পরম নির্ভরতায় আপনাকে জড়িয়ে ধরে থাকবে, সে আনুভুতিটুকু উপলব্ধি করে আপনার সারাদিনের অবসাদ আর ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি এই শেয়ার করার কোন সুযোগটুকু সে না পায়, দিনে দিনে কষ্টের বিন্দু বিন্দু বালুকণাগুলো জমতে জমতে মনের ভেতরে একদিন একটা পাহাড় তৈরি হয় । তখন সারারাত সময় দিয়েও তা ভাঙা যায় না । আর সেই পাহাড় ভাঙার শব্দ পাশের ফ্লাট থেকেও শোনা যায় । কিংবা মনের ভেতরে তৈরি হওয়া সে পাহাড়টা মনটাকেই একদিন দিখন্ডিত করে দেয়। ভেঙ্গে দেয় সম্পর্কটাকে । হয়ত কখনও কখনও বাইরে থেকে বোঝা যায়, কখনও একই ছাদের নীচে থেকেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বোঝা যায় না ।
তাই সারাদিনের রুটিনে সঙ্গীনীর জন্য অন্তত দশটা মিনিট বরাদ্দ রাখুন, তার সারাদিনের কর্মকান্ডগুলো শেয়ার করার জন্য । শেয়ার করার মতো যদি কোন কিছুই না থাকে তবে অন্তত দুই কাঁধের উপরে হাত দুটো রেখে কিছুক্ষণ চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলুন
"আজ কেমন আছো তুমি?"
আর যারা দূরে থাকেন তারা দিনের শেষে একবার অন্তত কাজ ছাড়া ফোন করে, কিছুক্ষন নিরব থেকে.......
"আজ কেমন আছো তুমি?"
0 comments:
Post a Comment