সুখ-দুঃখ,মান অভিমান আর অনেক ভালোবাসা নিয়েই মানুষের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু অনেক সময় নিজের সঙ্গীকে ভুল বোঝার কারনে এত সুন্দর সম্পর্কের ভেতর নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ধরুন আপনি হয়তো প্ল্যান করেছেন আপনার সঙ্গীকে নিয়ে বিকালে কোথাও ঘুরতে যাবেন,আপনার সঙ্গীটিও বেশ ভাল মুডেই সায় দিলেন। কিন্তু কোনো একটা কারণে সময় দিতে পারলেন না তিনি, হয়ে উঠলো না বেড়াতে যাওয়া। এই রকম পরিস্থিতি অনেক সময়ই সামনে আসে দাঁড়ায়, আর সত্যি কথা বলতে কি তখন ভীষণ রাগ হয় , অভিমান হয়। আর এই রাগ থেকেই তৈরি হয় ভুল বোঝাবুঝির।
কথা দিয়ে কথা না রাখা, সঙ্গীকে পর্যাপ্ত সময় না দেয়া এই রকম হাজারও ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে কি করে দাম্পত্য জীবনে সুখ আনবেন তাই নিয়েই রইলো আজকের আলোচনা।
১)অতিরিক্ত প্রত্যাশার দায় চাপিয়ে দিবেন না-
আমাদের ভালবাসার মানুষটির কাছে আমরা হয়ত অজান্তেই অনেক কিছু প্রত্যাশা করে ফেলি। কিন্তু তারা হয়তো আমাদের এই প্রত্যাশার খবরই রাখেন না। পরে আশাহত হয়ে আমরা তাদেরকেই দোষ দিয়ে থাকি। এটা না করে যদি আমরা নিজের প্রত্যাশা একটু সীমাবদ্ধ রাখি তাহলে ভুল বোঝাবুঝির মাত্রা অনেকখানিই কমে যাবে।
২)বিশেষ দিন পালনে নিজেই উদ্যোগী হন-
কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিন পালন করতে চাইলে সঙ্গীকে একটু আগে থেকেই তারিখটা মনে করিয়ে দিতে পারেন। এতে অভিমান ও আশাহত হবার সম্ভাবনা কমবে। এর পরও যদি আপনার সঙ্গী বিশেষ দিনটির কথা ভুলে যান তারপরও আপনি আপনার পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব আয়োজন করে রাখুন, সঙ্গীর পছন্দের উপহার তৈরি রাখুন। আপনার সঙ্গী যখন দেখবেন যে আপনি বিশেষ দিনটি পালনের জন্য আয়োজন করছেন,আর রাগও হননি তখন সে অবশ্যই ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ দিনের কথা মনে রাখার চেষ্টা করবেন।
৩) পরস্পরকে দোষারোপ নয়-
অহেতুক একে অপরের উপর দোষ চাপাবেন না। আপনার সঙ্গীটি হয়তো কাজের চাপে গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ভুলে গিয়েছেন বা আপনাকে সময় দিয়ে উঠতে পারেননি। এটাও ভেবে দেখুন, আপনার প্রিয় মানুষটি কেন শুধু শুধু আপনার কাছে মিথ্যা কথা বলবে? তাই অপরকে দোষ না দিয়ে আসল কারণটিকে বুঝতে চেষ্টা করুন। আর বাইরের মানুষের সামনে পরস্পরকে দোষারোপ তো একেবারেই করবেন না।
৪) রাগ চেপে রাখবেন না-
কোন বিষয়ে আপনার রাগ হলে মনের ভেতর বেশি সময় চেপে রাখবেন না। সঙ্গীর সাথে আলোচনা করে ব্যাপারটা মিটিয়ে নিন। কারন আপনি না বললে সে কি করে বুঝবে যে আপনি অভিমান করেছেন আর কেনই বা করেছেন। তাই কোনো বিষয়ে রাগ হলে চুপ করে না থেকে সঙ্গীর সাথে আলোচনা করে রাগ মিটিয়ে নিন।
৫) ছোট্ট কিছু নিয়ম মেনে চলুন-
নিজেরা কয়েকটি অলিখিত নিয়ম আন্তরিকভাবে মেনে চলুন। যেমন, বাড়ি ফিরতে দেরী হলে বা একসাথে কোথাও যাবার কথা থাকলে আপনার সঙ্গীকে আগে থেকেই জানিয়ে দিন। তাহলে দুজনের কাউকেই অসুবিধায় পড়তে হবে না।
৬) ব্যক্তিগত বিষয় নিজেদের মাঝেই রাখুন-
দাম্পত্য খুবই ব্যক্তিগত সম্পর্ক। নিজেদের ভেতর রাগারাগি বা ভুল বোঝাবোঝি যাই ঘটুক না কেন, সেটা নিজেদের কাছেই সীমাবদ্ধ রাখুন। অন্যদের সাথে নিজের স্বামী/স্ত্রীর অন্যায় বা দোষ নিয়ে আলোচনা করতে যাবেন না, কিংবা কাউকে ডেকে দাম্পত্যের ঝগড়ায় সমঝোতা করে দিতে বলবেন না। এতে কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি বাড়বে বই কমবে না। নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে বাইরের মানুষকে নাক গলাতে দেয়া মোটেও উচিত নয়। পরামর্শের আশায় অপরের সাথে দাম্পত্য জীবন নিয়ে আলোচনা করলে সুফল তো পাওয়াই যায় না,বরং হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে ।
৭) অতীতকে টানবেন না ঝগড়ায়-
কোন ছোট্ট ব্যাপারে নিজেদের মতের মিল না হলে পুরনো ঘটনা টেনে এনে জটিলতা আরও বাড়াবেন না। রাগারাগির সময় পুরানো ঘটনা টেনে আনলে ঝগড়া আরও বড় আকার ধারন করে।
৮) সরি বলতে শিখুন-
যদি আপনার মনে হয় রাগটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে, তাহলে সেই সমস্যার সমাধানও আছে। আপনার সঙ্গীর পছন্দের একটি ছোট্ট উপহার দিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করে ফেলুন। সাথে বলুন আন্তরিক একটি সরি।
এছাড়াও যে ব্যাপার গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন-
- ৯) সন্তানদের সামনে ঝগড়া বা কটু বাক্য বিনিময় করবেন না। এতে সম্পর্কের ক্ষতি হয় খুব, ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে।
- ১০) কারো সাথে পরস্পরকে তুলনা করতে যাবেন না। এতে মনে আঘাত পাবেন আপনার ভালোবাসার মানুষটি।
- ১১) কাজের চাপে আপন মানুষটিকে ভুলে যাবেন না যেন। বা কাছের মানুষের সাথে মেজাজ দেখাতে যাবেন না।
- ১২) আর্থিক সমস্যা জীবনে থাকতেই পারে। সেটার কারণে অপর মানুষটিকে দোষারোপ করবেন না। বা খোটা দিবেন না।
- ১৩) তৃতীয় ব্যক্তির কথায় কান দিয়ে নিজেদেরকে ভুল বুঝবেন না। কিছু কানে এলে আপন মানুষটিকে সত্য খুলে বলুন।
পরিবারের সুখ শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব স্বামী বা স্ত্রীর কারো একার নয়। সুখী পরিবার সৃষ্টিতে স্বামী স্ত্রী দুজনের অবদান সমান গুরুত্বপূর্ণ।
0 comments:
Post a Comment