মাকে ভালবাসার জন্য যে কোনও দিবসের প্রয়োজন নেই, সেটা এক বাক্যে স্বীকার করবেন যে কেউ। তবে মা দিবস কিন্তু এটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য নয় যে “মা-কে ভালবাসুন”, বরং মা দিবস পালনের পিছনে অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য এটাই যে মায়ের সাথে আপনার সম্পর্কটাকে একটু বিশেষ ভাবে উদযাপন করা। যেভাবে আমরা উদযাপন করি একটি বিশেষ দিন বা উৎসব, ঠিক সেভাবেই।
অনেকের মতে এই মা দিবসের সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে মূলত গ্রিক দেবতাদের এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ নামে (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত।
আবার প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল এবং সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত। আবার মাদারিং সানডে নামে খ্রিস্ট ধর্মেও একটি দিন পালনের রীতি আছে। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠানখ্রিস্টানদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও "প্রধান গির্জার" সম্মানে।
মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হতো। এবং সেখান থেকেই ক্রমান্বয়ে বর্তমানের এই আধুনিক মা দিবসের জন্ম। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস ঘোষণা করা হয়। এবং তখন থেকেই বিশ্বের অনেক দেশেই মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে পালন করা হয় মা দিবস হিশাবে। তবে মজার ব্যাপারটা হলো, অনেক দেশেই আবার মা দিবস পালিত হয় তাদের নিজস্ব কোনও তারিখে। আবার বেশ অনেকগুলো দেশ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন পালন করে থাকে মা দিবস। তবে তারিখ যাই হোক না কেন, উদ্দেশ্য সেই একই- “মা” নামক বিশেষ মানুষটিকে সম্মান প্রদর্শন।
আরেকবার বলি সেই পুরানো কথাই... মায়ের জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করতে অবশ্যই কোনও দিন লাগে না। তবে একটি বিশেষ দিন পালন করার মাঝে ক্ষতিও তো নেই কিছু,তাই না? বছরে ৩৬৫ দিন মা আপনার জন্য খেটে চলেন অবিরাম, একটি দিন নাহয় আপনি নিলেন মায়ের স্থানটি আর ঠিক সেই পরিমাণ মমতা দেয়ার চেষ্টা করলেন যেমনটা মা আপনাকে দিয়ে থাকেন। একটি দিনের জন্য আপনি নাহয় হলেন আপনার মায়ের জন্য “মা” ।
আর যাদের মা নেই? ভাবতেও মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে যায়, তাই না? কিন্তু আসলে কি জানেন, মা নেই বলে কোনও কথা নেই। মা আছেন, মায়েরা থাকেন। সর্বদা আর সারাক্ষণ, মৃত্যু লোকের ওপারে গিয়েও মা থাকেন। হয়তো আপনার মা এই পার্থিব পৃথিবীতে নেই, কিংবা আপনার কাছে নেই... কিন্তু নিশ্চিত জানবেন যে আপনার অন্তরের আহবান, ভাবনা, শুভকামনা অবশ্যই তার কাছে গিয়ে পৌঁছায়। যতই দূরে থাকুন না কেন, কখনও না কখনও তিনি নিশ্চয়ই মনে করেন আপনাকে।
0 comments:
Post a Comment