সমাজে পুরুষদের দুশ্চিন্তা কাটানোর রয়েছে নানা উপায়। ইচ্ছা করলেই ঘর
থেকে বাইরে ঢুঁ মেরে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলেন। কিংবা পুরনো বন্ধুদের নিয়ে
রমরমা আড্ডা, পার্টি কিংবা পান করা, ঠোঁটের কোণে জ্বলন্ত ধোঁয়াও নাকি তাদের
দুশ্চিন্তা কমানোর মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু চার দেয়ালে বন্দিরা
চাইলেই পারেন না তাদের মন থেকে দুশ্চিন্তার মেঘ কাটিয়ে ঝরঝরে রোদের
ঝিলিমিলিতে মেতে উঠতে। তাই তো উদ্বিগ্ন জীবন নারীর স্বাভাবিক জীবনযাপন
ব্যাহত করে। মনের অজান্তেই সবাই দুশ্চিন্তাময় জীবন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার
উপায় খোঁজে। কিন্তু কদাচিৎ সে উপায় মেলে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মনঃচিকিৎসক আয়েশা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন,
প্রত্যেক মানুষের মনে দুশ্চিন্তা থাকলে তা কারো সঙ্গে ভাগ করে নেয়া উচিত।
দুশ্চিন্তা দূর করার সেরা পথ হলো, বিশ্বাস করেন এমন কাউকে সমস্যাটির কথা মন
খুলে বলা। আমরা একে বলি ক্যানারসিস। এ ধরনের রোগী যখন আসেন, তাদের মনের
কথা পুরোপুরি বলার পরই তারা শান্ত হন। দুশ্চিন্তা নিয়েই কেবল চিন্তা করে
চললে, তা মনের মধ্যে পুষে রাখলে স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে। সবার এমন পজিটিভ
ভাবনা হওয়া উচিত যে, ‘আমার সমস্যা ভাগ করে নেয়ার মতো পৃথিবীতে কেউ না কেউ
অবশ্যই আছে।’
অনেক সময় দেখা যায়, শুধু মনের মধ্যে তোলপাড় করতে থাকা কথাটি কারো কাছে
প্রকাশ করতে পেরেই অনেকে নিরুদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। ক্রমেই তিনি স্বাভাবিক
হয়ে ওঠেন। যিনি হাসতে ভুলে গিয়েছিলেন, তার মুখেও সূর্যের আলোর মতো ঝলমলে
হাসি ফুটে ওঠে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘কথা’র রয়েছে আরোগ্য লাভের বিরাট
ক্ষমতা। অতএব যখনই কোনো আবেগজনিত সমস্যা আসবে, আমরা যেন কারো সঙ্গে মনের
কথাটি খুলে বলি। তবে তিনি যেন অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য হন এবং তার কাছ থেকে
ভালো কিছু পরামর্শও পেয়ে যেতে পারেন। আর যদি পরামর্শ বা উপদেশ নাও দিতে
পারেন, তবু মনের বোঝা কিছুটা কমবে।
পরামর্শ: একটি নোট বই রাখতে পারেন। যাতে আপনার প্রিয় কবিতা, উদ্ধৃতি
লিখে রাখতে পারেন। কোনো বর্ষণসিক্ত অপরাহ্নে মন-মেজাজ ঠিক না থাকলে প্রিয়
লাইনগুলোর ওপর চোখ বোলাতে পারেন।
অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে বেশি না ভাবাই ভালো। হয়তো আপনার বা আপনার সঙ্গীর
চেয়েও বেশি দোষ-ত্রুটি রয়েছে। সেসব না ভেবে নিজের এবং তার গুণটির কথাই
বেশি ভাবেন। দেখবেন সঙ্গীর গুণগুলো নিয়ে গর্ববোধ করছেন। ফলে জীবন সম্পর্কে
পজিটিভ ভাবনা ফিরে আসবে।
পাড়া-পড়শি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন। বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়া মানুষকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে।
রাতে ঘুমানোর আগে পরবর্তী দিনের কাজের একটা তালিকা মনে মনে ঠিক করে নিতে পারেন। তাতে কাজকর্মে সুবিধা হবে এবং চাপমুক্ত থাকবেন।
দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন, বিশ্রাম নিন, বাইরে বেড়িয়ে আসতে পারেন।
যখনই ক্লান্ত মনে হবে সটান শুয়ে পড়ুন। কিছুক্ষণ চোখ বুজে ভালো কিছু ভাবতে চেষ্টা করুন। হতে পারে কোনো সুখকর স্মৃতি।
ছন্দময় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে চেষ্টা করুন। এতে স্নায়ু শান্ত হয়। মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়।
0 comments:
Post a Comment