অন্য রকম এক প্রেম- "পরকীয়া"


পরকীয়া বলতে কি বুঝি তা আশা করি সবারই জানা আছে। চার অক্ষরের একটি শব্দ। কিন্তু এর ঝাঁঝ অতি মারাত্মক। এর ছোবলে একটি সংসার যেমনি তছনছ হয়ে যায়, তেমনি ব্যক্তিজীবন হয়ে উঠে দু:সহ। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন আর মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়ে যাবার পর পরকীয়ার হার আরও বেড়ে গেছে।কমপিউটার ও ইন্টারনেটের এই যুগে অনলাইনে পরকীয়া গড়ে উঠার ব্যাপক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের সম্পর্কগুলোতে আবেগীয় বিষয়টাই বেশি থাকে।

বিয়ে মানে কেবল শারীরিক সম্পর্ক নয়, বরং পরস্পরকে জানার বোঝার একটি মাধ্যম। যে মাধ্যমে আমরা প্রবেশ করি ঠিকই, তবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলটাই করি অধিক। কিন্তু তাকে আর জানা হয় না। রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী গল্পের একটি উক্তি ছিল এরকম- জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও একজনের মনের খবর জানা হয়নি।

প্রত্যেক স্বামী এবং স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক কিছু চাহিদা আছে। যখন এসব চাহিদা পূরণ হয় না, স্বপ্নভঙ্গের ব্যথায় কষ্ট পায় মন- মূলত তখনই পরকীয়ার সূত্রপাত ঘটে।
একে অপরের প্রতি উদাসীনতা ধীরে ধীরে একজন স্বামী থেকে একজন স্ত্রীকে আলাদা করে ফেলে, বা একজন স্ত্রী থেকে স্বামীকে আলাদা করে ফেলে। বেড়ে যায় মানসিক ব্যবধান। যার কারণে শুরু হয় মনোমালিন্য। এবং অবশেষে পরকীয়া।

প্রেম করে বিয়ে করেছেন, এমন অনেকের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গীনি যখন অন্যের প্রেমে হাবুডুবু খান তখন একটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। পরকীয়া তাহলে কেন হচ্ছে? সত্যি কথা বলতে কি, কারণের অভাব নেই। শারীরিক অক্ষমতা, বয়সের পার্থক্য....ইত্যাদি অনেক বিষয় চলে আসছে সম্পর্কের মাঝে। অনেক সময় সংসারে মানিয়ে নিতে না পারার সমস্যা থেকেও হচ্ছে। পরকীয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে -
  • পরকীয়ার প্রথম কারন হলো আপনি হয়তো আপনার স্বামী অথবা স্ত্রীকে সময় দিতে পারছেন না। একে অপরকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার কারনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। স্বামী অথবা স্ত্রী এমন কাউকে খুজতে থাকে যার সাথে তার একাকীত্ব ঘুচে যায়। এমন কাউকে খুজতে থাকা থেকেই পরকীয়ার সূত্রপাত।
  • স্বামী অথবা স্ত্রী যদি চাকুরীজীবি হয়ে থাকে তাহলে তারা তাদের অফিসের বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে অধিকাংশ নারী বিবাহের পর বাকি জীবনটা গৃহবধূ হিসাবে পার করে দেয়। এসব গৃহবধূদের অনেকেই বিবাহ পরবর্তী একাকীত্ব ঘুচাতে তাদের কোন আত্নীয় সম্পর্কের অথবা প্রতিবেশী কারও সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয় ।
  • অফিস সহকর্মী কিংবা বন্ধুবান্ধবদের পরকীয়ার গল্প শুনতে শুনতেই অনেকে নিজের জীবনেও সেই উত্তেজনা খুঁজতে গিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। আমেরিকার নিউ ওমেন ম্যাগাজিনের জরিপে জানা যায় চাকরিজীবী বিবাহিত নারীরা তাদের কর্মস্থলেই ‘লাভার’-দের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করে থাকেন। আমেরিকান সমাজে অবিশ্বস্ততার হার দিনে দিনে বাড়ছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে জানা যায় যে, ২৫ শতাংশ পুরুষ পরকীয়া করছে এবং ১৭ শতাংশ নারী তাদের স্বামীদের প্রতি বিশ্বস্ত নয়।
  • সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সীরা সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ত বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া বিয়ের আগে প্রেমের সময়টায় কেউ কেউ একাধিক সম্পর্কে জড়ায়। তাদের যুক্তি হলো বিয়ের পর তো আর এসব করা যাবে না। গবেষণায় দেখা যায়, এই ধরনের চরিত্রগুলো বিয়ের পরও নিজেদের আচরণ সামলাতে পারেন না। তাছাড়া প্রেমের সময় সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বস্ততাও কিন্তু এক ধরনের পরকীয়া।
  • ছেলে ও মেয়েরা কিন্তু একই কারণে পরকীয়ায় জড়ায় না। মেয়েরা মূলত পুরুষের বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগীয় ও অর্থ সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এবং শারীরিক চাহিদা থেকে পরকীয়ায় জড়ায়। অন্যদিকে পুরুষরা সাধারণত বহুগামী মানসিকতা থেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে থাকে। আপনার বন্ধুবান্ধব পুরুষরা কেউ যদি পরকীয়া করে থাকে দেখবেন তাদের পরকীয়ার গল্পে যৌন কর্মকাণ্ডের কথাই বেশি থাকে। অন্যদিকে নারীরা তাদের প্রেমিকের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগীয় কর্মকাণ্ড বলতে বেশি পছন্দ করে।
  • অপ্রিয় হলেও সত্য যে অধিকাংশ প্রবাসীর বউ পরকীয়ায় জড়িয়ে গেছে শারিরীক চাহিদার কারণেই। এটা প্রমানিত সত্য যে দেশে বর্তমানে যত পরকীয়া সম্পর্ক আছে তার ৬০ভাগই প্রবাসীদের বউ।
অনেকের পরকীয়া সম্পর্ক জানাজানি হয়ে যায় আবার অনেকের হয় না। পুরুষশাসিত সমাজে স্বামীরা অধিকাংশ সময় পরিত্রাণ পেয়ে যায় আর স্ত্রী-দের ব্যপারে জানাজানি হলে স্ত্রীকে অনেক অত্যাচার, অনাচার সহ্য করতে হয়। কিন্তু সেই ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হলো কেউ জানতে চায় না। প্রকৃত কারণ আড়ালেই রয়ে যায়।

কিভাবে বিরত থাকবেন পরকীয়া থেকে

গবেষণা থেকে জানা যায় সন্তানের ভবিষ্যৎ অনেক মানুষকে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি করা থেকে বিরত রাখে। এবং অনেকে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ালেও সন্তানের ভবিষ্যতকে গুরুত্ব দিয়ে পরকীয়া সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসে। আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষের মনের মধ্যে সবসময় ভালো ও মন্দের দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি মানুষের মনের আকর্ষণ স্বাভাবিক। সেই আকর্ষণকে মোকাবেলা করাটাই হলো একজন ভালো মানুষের কাজ। মানুষের মনের মন্দ চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে মানুষকে সাহায্য করে তার শিক্ষা, তার ধর্ম, তার পারিবারিক মূল্যবোধ এবং আরো অনেক কিছু।

যদি আপনি পরকীয়ায় জড়িত হয়ে থাকেন তাহলে একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন আপনি যা করছেন তাতে করে আপনার সঙ্গী কি ভীষণ ভাবে প্রতারিত হচ্ছে না? স্বপ্ন আর ভালবাসা নিয়ে সারা জীবন এক সাথে কাটিয়ে দেয়ার জন্য আপনারা একি বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এই বন্ধনকে আরও মজবুত করুন,প্রয়জনে আপনার সঙ্গীর সাথে শেয়ার করুন আপনি কি চান, আবার এটাও খেয়াল করুন আপনার সঙ্গী আপনার কাছ থেকে কেমনটা আশা করছে । দু জনেই যদি দুজনের ভালো লাগা,মন্দ লাগা গুলোকে শ্রদ্ধা করেন ,নিজেদের মানসিক দূরত্ব কমিয়ে ফেলেন তাহলে দেখবেন জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। পারস্পরিক দূরত্ব বাড়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে অনেকটাই ।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!