পুজোর ক’দিন দেবী যেমন স্বামীকে ফেলে একা, তেমনই কি শহরের দেবীরা


দেবীপক্ষের চলতি হাওয়ায় এই শহরের দেবীরা কী করছেন বলুন তো? পুজোর ক’দিন দেবী যেমন স্বামীকে ফেলে একা, তেমনই কল্লোলিনী শহরের একা তিলোত্তমার সংখ্যাও তো কম নয়। অনেক দিন হয়ে গেল, এই শহর মেনে নিতে শিখেছে সিঙ্গল উওম্যান-এর কনসেপ্ট। পুরুষ ছাড়াই নিজেদের জীবন সুন্দরভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন নারীরা। কেউ রয়েছেন একা, কেউ বা সন্তানের সঙ্গে। পুজোর আড্ডাতেও সেই মেয়েরা কিন্তু সিঙ্গলই! পুজোর ঠিক আগেভাবেই নারী একেবারে নিজের মতো করে নিজের পুজোটা কীভাবে কাটানো যায়, বুঝে নিচ্ছে সেটা। পুজোর মধ্যে বাড়ছে গার্লস্ হ্যাং আউটের সংখ্যা। শুধু সিঙ্গল মহিলারাই নন, রীতিমতো পরিবার নিয়ে থাকা অনেক বয়স্ক মহিলাও বন্ধুবান্ধব নিয়ে আলাদা করে দেখা করছেন কফিশপে। নিখাদ মেয়েলি সময় কাটানোর জন্য।

তবু বাধ সাধে ওই পোড়া মন। চলতি পুজোর হাওয়ায় পাশে ছেলে না থাকাটা উদার মনে মেনে নিচ্ছে না অনেক মেয়েই। এই যেমন শহরের এক কর্পোরেট কর্মী সুপর্ণা বিশ্বাস। বরকে মোটেই পাত্তা না দিয়ে এদিক-ওদিক শপিং আর আড্ডা দিয়ে প্রি-পুজোর দিনগুলো কাটাচ্ছিল, তবু মনে মনে আশা ছিল পুজোর ক’টা দিনের জন্য তুলে রাখা প্রেম নিয়ে। কিন্তু সে আশায় ছাই। কর্পোরেটে কর্মরত সুপর্ণার বর পঞ্চমীর দিন অফিস ট্যুরে গিয়ে দিওয়ালি কাটিয়ে ফেরার ফরমান দিতেই বেচারার সব আশায় শেষ। ‘কী আর করব! কলেজের পুরনো বন্ধুরা মিলে একটা ভাল দেখে কফি শপে আড্ডা বসাব। কোনও ছেলে থাকবে না সেই আড্ডায়’, জানাল সুপর্ণা। এমনিতেই কাজের চাপ আর উড়ুক-প্রেমিকদের নিয়ে আজকের নারীর জীবনে প্রেমহীনতা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ আকছার শোনা যায়। তাই নারীশক্তির আরাধনার সময়ে মনোবিদরা বলছেন, জীবনে পুরুষকে খানিক কম গুরুত্ব দিয়ে আপন প্রেমে তুষ্ট হতে। তা বলে পুরুষ বাদ দিয়ে জীবন কাটানোর কথা তাঁরা বলছেন না। শুধু বলছেন, প্রাথমিক ভাবে প্রেমের মাত্রা একেবারেই না কমিয়ে, শুধুমাত্র নারীত্বে একটু গর্ব করতে থাকুন। দেখুন, আপন প্রেমে কেমন সুন্দর হয়ে ওঠে চারপাশ আর পুজো।

তা, পুরুষকে তেমন পাত্তা না দিয়ে কীভাবে সন্তুষ্ট থাকা যায়, সেই গোপন কথা ভাগ করে নিলেন শুচিস্মিতা মজুমদার। ১০ বছরের প্রেম শেষে বিয়ের কয়েক বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরেও হেব্বি বিন্দাস শুচিস্মিতা। জানাচ্ছেন, ‘আমি চাকরি করি না। যাকে বলে আদ্যন্ত গৃহিণী। প্রেমিক বর হলেই একেবারে পালটি খায়। প্রথম দিকে কষ্ট হত। তারপর বুঝলাম ছেলেদের এগুলো রক্তে মিশে আছে, কনশাসলি কিছু করে না। তখন ওকে ওর মতো করেই ডিল করলাম। যাঁরা মনখারাপ করে আছেন, তাঁদের বলি- নিজের গোপন স্পেস তৈরি করুন। কখনও বরকে একদম বন্ধু ভেবে আপনার প্রিয় বান্ধবীর গোপন সমস্যা শেয়ার করবেন না। ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হবে। আর হ্যাঁ, প্রেম মানেই পাসওয়ার্ড শেয়ারিং একেবারেই নয়। নিজের একটা আলাদা জগৎ রাখুন। পুরুষ সময় না দিলেও সেই জগৎ আপনার সঙ্গে থাকবে’।

তারপরেও সমস্যা অবশ্য থেকেই যায়। এই যেমন মেয়েদের অভিযোগ, প্রেমিক ফোনে কথা শোনে না। মানে অন্যমনস্ক হওয়ার জন্য যেন প্রেমিকার সঙ্গে কনভারশেসনের সময়টাই বেছে নেয়। অনেকে আবার ফোনে কথা বলতেই বিরক্ত। বেশ তো কাটিয়ে দিন। বন্ধু বাড়ান। তাঁদের সঙ্গেই জমিয়ে দিন পুজো। মেয়েদের ব্যাপারটা মেয়েরাই যে সবচেয়ে ভাল বোঝে! মনোবিদ অনিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েদের এহেন অভিযোগ নিয়ে বলছেন, ‘আসলে নারী আধুনিক হলেও সমাজ তো হয়নি। তাই নারী এখনও পুরুষকে নিজের থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। একটা কথা জানবেন। আপনাকে নিজের বন্ধু হতে হবে আগে। তারপর অন্য কেউ’। আর কী? পুজোয় কাছের পুরুষটি বড্ড বেশি রোয়াব দেখাচ্ছেন? চলুন তো হয়ে যাক একটা গার্লস হ্যাং আউট! শহর জুড়ে ঠেকের অভাব নেই। শুধু কোথায় গিয়ে কানায় কানায় আনন্দে ভরে উঠবে মন, ঠিক করে ফেলুন সেটুকুই!

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!