বিশ্বকাপের ফাঁদে ব্রাজিলের শিশু যৌনকর্মীরা

 বিশ্বকাপকে ঘিরে রীতিমতো সাজ সাজ রব পড়ে গেছে ব্রাজিলে। ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসরটিকে বর্ণিল করে তুলতে চেষ্টার কমতি নেই। বিপুলসংখ্যক বিদেশি পর্যটকের আগমনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও রমরমা অবস্থা হবে বলে আশা করছে ব্রাজিল। কিন্তু বিশ্বকাপকে ঘিরে যা কিছু হচ্ছে তার সবই ইতিবাচক নয়। বিশ্বকাপ যৌন-পর্যটনের জন্যও কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। আর সেই ব্যবসার ফাঁদে পড়বে ব্রাজিলের শিশু যৌনকর্মীরা।
 
বিশ্বকাপের সময় বেশ ঝুঁকির মুখেই থাকবে দেশটির শিশু যৌনকর্মীরা। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের শরীর বিকোনোর এই ক্লেদাক্ত পেশায় আসা রোধ করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বটে। কিন্তু সেটা কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে তা একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েই আছে এখন পর্যন্ত।
 
বর্তমানে ব্রাজিলে বড় শহরগুলোতে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে যৌনকর্মী হিসেবে। কার্নিভাল বা নতুন বছরের উত্সবের মতো বড় অনুষ্ঠানের সময় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায় যৌনকর্মী হিসেবে শিশুদের উপস্থিতি। বিশ্বকাপের সময় যে এটা আরও বেড়ে যাবে সেটা ভালো মতোই আঁচ করতে পারছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
 
বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা মেটানোর জন্য হয়তো অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে দেহ ব্যবসার পথে নিয়ে যাবে দালালেরা। বিষয়টি সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে জোসেলেনো ভিয়েইরা দস সান্তোসকে। যিনি কাজ করছেন শিশুদেরকে যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আয়োজক শহরগুলোতে শিশু যৌনকর্মীদের ব্যবহার নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে যতটা সম্ভব এটা রোধ করার চেষ্টা করছি।’
 
কিন্তু ব্রাজিল সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই সংশয় আছে। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে ব্রাজিলিয়ান অর্থনীতিতে। এর মধ্যে বেশির ভাগই যাবে স্টেডিয়াম, যাতায়াত ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে। এক কোটি ডলার খরচ করা হবে বিজ্ঞাপনের পেছনে। এসবের বিবেচনায় খুব অল্প পরিমাণ টাকাই বরাদ্দ করা হয়েছে শিশুদের পতিতাবৃত্তির পথে আসা ঠেকানোর জন্য।

সেভ দ্য চিলড্রেনের ব্রাজিল শাখার নির্বাহী পরিচালক ডেনিস সিসারিও বলেছেন, ‘এই বিষয়টা সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। আর শিশুদের যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করা থেকে বিরত রাখতে সরকারের কোনো সদিচ্ছাও আমাদের চোখে পড়ছে না।’

ব্রাজিল সরকার শিশুদের এ পেশায় আসা থেকে বিরত রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল প্রায় এক দশক আগে। কিন্তু পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং অবনতিই হয়েছে। ২০০১ সালে যেখানে শিশু যৌনকর্মীর সংখ্যা ছিল এক লাখ, ২০১২ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখে। এখন বিশ্বকাপ ঘিরে আবারও নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটা যে সমস্যার মূলে পৌঁছাতে পারবে না তা ভালো মতোই বুঝতে পারছেন দস সান্তোস। তিনি বলেছেন, ‘আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে বিশ্বকাপের জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে সেটা খুবই অপ্রতুল। কিন্তু আমরা আশা করছি এর মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতের জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা যাবে।’

এবারের বিশ্বকাপে ছয় লাখের মতো বিদেশি পর্যটক ব্রাজিলে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁরা ব্রাজিলীয় মুদ্রায় ২৫ বিলিয়নের মতো অর্থ খরচ করবেন ব্রাজিলে থাকাকালে (এক হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার)। অর্থের এই ঝনঝনানি হোটেল-মোটেলগুলোকেও প্রলুব্ধ করবে অস্থায়ীভাবে যৌনকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া। এর পাশাপাশি পর্যটনের দেশ ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠিত পতিতালয়গুলো তো আছেই।

চাইলেও হয়তো পুরোপুরি রোধ করা যাবে না এ পেশায় শিশুদের আসা ঠেকানো। তবে স্রোত যত প্রবলই হোক, বাধ দেওয়া চেষ্টা না করাও তো বোকামি! সূত্র: রয়টার্স।

0 comments:

Post a Comment

" কিছু স্বপ্ন আকাশের দূর নীলিমাক ছুয়ে যায়, কিছু স্বপ্ন অজানা দূরদিগন্তে হারায়, কিছু স্বপ্ন সাগরের উত্তাল ঢেউ-এ ভেসে যায়, আর কিছু স্বপ্ন বুকের ঘহিনে কেদে বেড়ায়, তবুও কি স্বপ্ন দেখা থেমে যায় ? " সবার স্বপ্নগুলো সত্যি হোক এই শুভো প্রার্থনা!