সে এক দানব! ফুল বাগানে ঢুকে সব ফুল করে দলিত-মথিত। বোটা থেকে সুন্দর ফুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে পিষে ফেলে পায়ে। এমন কাউকে কি বলা যায়? সে যখন মানুষের বেশে নিষ্পাপ পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করে, গিলে খায় সুন্দর স্বপ্নগুলো তখন তাকে কি বলা যায়? যৌনদানব?
এমন প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে ছোট্ট সোনামনীদের মনে। ওরা ফুলের মতো, পাখির মতো। এসব নিয়ে ওরা কখনও ভাবেনি। কিন্তু হঠাৎই সবকিছু কেমন ঘোর লাগা অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। এমনি অবস্থা হয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুছাত্রীদের।
বুধবার রাতে কঞ্চিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ‘চরম ভয় আর পরম শ্রদ্ধা’র হেড মাস্টারকে এমন শাস্তি দেয়ার সে কারণ এখনও বোধগম্য হচ্ছে না শিশু-শিক্ষার্থীদের কাছে।
তবে কোমলমতি কিছু শিশুর কাছে দানবের চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন ওই শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে ভলোছাত্রী বানানোর নামে পাঁচ ছাত্রীকে স্কুল ছুটির পর প্রাইভেট পড়াতেন তিনি। এ জন্য উদার অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষককের দায়িত্বশীলতার জন্য শ্রদ্ধার আসন খানিকটা বড় করে হয়তো দিয়েছেন। কিন্তু শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের দানবের স্বরূপটা এক পর্যায়ে ধরা পড়ে যায় শিশুদের কাছে।
না, এটা ঢাকার যৌনবিলাসী পরিমল কিংবা কুষ্টিয়ার যৌনদস্যু পান্না মাস্টারের গল্প নয়। নয় দিনাজপুরের যৌনঅভিযাত্রী তসলিম উদ্দিন মাস্টারের গল্পও। এ ঘটনা শহর থেকে অনেক দূরের একেবারে ‘মঙ্গাপ্রবণ, শিক্ষাবঞ্চিত এলাকার গল্প। যেখানে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া মানুষগুলোকে বসানো হয় ফেরশতা কিংবা দেবতার আসনে।
দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক জিয়াউর নিষ্পাপ শিশুদের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। অনেক শিশু হয়তো সেটা বুঝতেও শেখেনি। প্রাইভেট পড়ানোর নামে ছাত্রীদের সঙ্গে তিনি ‘যৌনআচরণ’ করতেন। ছোট্ট শিশুরা অনেক বড় মনের! এসব আচরণের জন্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে হয়তো ক্ষমাই করে দিতো তারা। কিন্তু এক পর্যায়ে বিষয়টি তাদের কাছে নির্যাতন হিসেবে মনে হতে থাকে।
শিশু ছাত্রীদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরে ছুটির পরে প্রাইভেট পড়াতেন প্রধান শিক্ষক। তবে শিক্ষকের আচরণ তাদের বিব্রত করতো। যে কোনো ছাত্রীকে অন্যদের কাছ থেকে কৌশলে আলাদ করে নিয়ে যৌনহয়রানী করতেন। প্রথম প্রথম বোঝা যেতো না। কেউ কাউকে বিষয়টি বলতেও সাহস পেতো না। দীর্ঘদিন ধরেই অন্য সবাইকে ছুটি দিয়ে মাত্র একজনকে কাছে ডেকে নিতেন। এরপর ‘যৌনদানব’ তার ইচ্ছে পূরণ করতেন। এক পর্যায়ে কিছুটা কানাকানি থেকে হয় জানাজানিও। বুঝে ফেলে সবাই সবার গোপন রহস্য। এতে বাড়তে থাকে ঘৃণা, জমতে থাকে ক্ষোভ।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ছুটির পর প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের সঙ্গে আগের আচরণ শুরু করলেই তারা একযোগে চিৎকার দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে। টের পেয়ে যায় গ্রামবাসী। তারা হয়ে ওঠে চড়াও। এক পর্যায়ে ‘শ্রদ্ধেয়-সম্মানিত’ প্রধান শিক্ষককে কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নেয়ার সময় অন্য তিন শিক্ষকও এসময় হয়ে পড়েন অবরুদ্ধ।
ঘটনার এক ফাঁকে প্রধান শিক্ষক পালিয়ে যান। পুরো এলাকায় পড়ে যায় হৈ চৈ। খবর যায় থানায়। পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের রোষানল থেকে শিক্ষকদের মুক্ত করে। পরে গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ছাত্রীদের ওপর প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানীর অপরাধ প্রমাণিত হয়। এরপর পর বুধবার রাতেই তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
গাইবান্ধ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আমিরুল ইসলাম প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
এঘটনায় কোমলমতি শিশুদের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার কারণ জানাতে গিয়ে শিশুদের কাছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন এলাকার অভিভাবকরা।
0 comments:
Post a Comment