শিক্ষক মোরা শিক্ষক/মোরা মানুষের পরম আত্মীয়/ ধরণীর মোরা দীক্ষক। কবি
গোলাম মোস্তফা শিক্ষকদের সম্পর্কে এরকম উচ্ছ্বসিত বাণী করেছেন। কিন্তু সেই
ধরণীর দীক্ষরাই যখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে ব্যাপাটি রীতিমত ব্রিবতকর ও
উদ্বেগজনক।
২০১১ সালে ‘পরিমল জয়ধর’ নামটি তোলপাড় তোলে সারাদেশে। পরিমলকে নিয়ে যখন
সারা দেশ তোলপাড় ঠিক সে সময়ও নিবিঘ্নে একই অপকর্ম করে যাচ্ছিলো কুষ্টিয়ার
আরেক শিক্ষক পান্না। এক্ষেত্রে শুধু ছাত্রীই নয় অভিভাবকদেরকেও ফাঁদে ফেলত
পান্না।
শুধু এ দুজনই নয় প্রায়শই এরকম ঘটনা ঘটে কোনো না কোনো
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় অভিভাবক মহলে শঙ্কার সৃষ্টি
হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নিপীড়নের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে
বাড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের কয়েকটি আলোচিত ঘটনা তুলে ধরা হলো।
পান্না মাস্টার :
হেলাল উদ্দিন পান্না। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ছাত্রী যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত আলোচিত নাম। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা হেলালকে সবাই পান্না মাস্টার হিসেবেই চিনতো। তিনি কুষ্টিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এই শিক্ষকতার আড়ালে হেলাল ভয়ঙ্কর অপকর্মের জন্ম দিয়েছেন। প্রায় দেড়শ নারীর সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি।
ছাত্রীদের পড়ানোর নাম করে নানান কৌশলে ফাঁদে ফেলতেন এই পান্না মাস্টার।
এরপর তাদের নিয়মিত বাধ্য করতেন যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। এইসব দৃশ্য
আড়ালে ভিডিও করতেন তিনি। পড়ে এগুলো দিয়েই ব্লাক মেইল করে নানা ধরনের
ফয়দা লুটতেন এই বিকৃত মস্তিষ্কের শিক্ষক। তার হাত থেকে বাদ যায়নি ছাত্রীর
অভিভাবকরাও। অনেক অভিভাবকেই ফাঁদে ফেলে ব্যবহার করেছেন পান্না। তার
ধারণকৃত ভিডিও চিত্রগুলোও ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন যায়গা।
রোববার পান্না মাস্টারকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরিমল জয়ধর:
ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পরিমল জয়ধর। ২০১১ সালে এই শিক্ষক দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেন ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায়।
প্রাইভেট পড়তে আসা ছাত্রীকে নিপীড়ন করেন পরিমল। শুধু তাই নয় সে ছবি
তুলে এবং ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আরও কয়েক দিন
ছাত্রীকে নিপীড়ন করেন পরিমল। এ ঘটনা প্রকাশ করলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া
হয়। পরবর্তীতে সেই ভিডি প্রকাশ পায় ইন্টারনেটে। এ ঘটনায় পরিমলের বিরুদ্ধে
মামলা দায়ের করেন ছাত্রীর বাবা।
২০১১ সালের ৭ জুলাই পরিমলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি চলছে।
তারেক চন্দ্র মণ্ডল:
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের ইংরেজি শিক্ষক তারেক চন্দ্র মণ্ডলের বাসায় প্রাইভেট পড়তে গেলে নিপীড়নের শিকার হয় দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী।
ঘটনার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা ব্যবস্থা
নেয়নি। পরে বিষয়টি অন্যরাও জেনে গেলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তখন অভিভাবকদের
চাপের মুখে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় তারেককে।
বাসুদেব:
ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে চলতি বছরের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয় রাজধানীর সূত্রাপুরের সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের শিক্ষক বাসু দেব কুমার রায়কে।
প্রাইভেট পড়ানোর সময় ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছে বলে এ শিক্ষকের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। সে সাথে এ ঘটনা কাউকে না জানোর জন্য হুমকি প্রদান
করেন ওই শিক্ষক। পরে ঘটনা জানতে পেরে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা মামলা দায়ের
করেন। এর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ দেন নির্যাতিতা ছাত্রীর
পরিবার।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত
মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল জলিল মাস্টারকে (৬০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে
আদালত। একই সঙ্গে আদালত তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায় আরো এক বছর
সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় নারী ও শিশু নিযার্তন দমন
ট্রাইব্যুনাল বিশেষ আদালত-১ এর বিচারক মো. শফিকুল করিম এ রায় দেন। আসামি
বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
নারী ও শিশু নিযার্তন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. হাবিবুল ইসলাম
তালুকদার জানান, ২০১০ সালের ৩ আগস্ট হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাপাইকাপ
গ্রামের কাপাইকাপ সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক আ. জলিল মাস্টার ওই মাদ্রাসার
ছাত্রীকে কাপাইকাপ বকাউল বাড়ির কাচারি ঘরে কয়েকবার ধর্ষণ করে। এ ঘটনায়
গর্ভবতী হয়ে ওই ছাত্রী ২০১১ সালের ১৯ এপ্রিল একটি কন্যা শিশু জন্ম দেয়।
আবদুল জলিল মাস্টার :
চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার কাপাইপুর মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল জলিল (৬০)। তিনি ১১ বছরের এক ছাত্রীকে নিপীড়ন করে আলোচনায় আসেন। এক পর্যায়ে ছাত্রীটি গর্ভধারণ করেন। এ ঘটনায় শিক্ষক জলিলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী নির্যাতনের আরো বহু ঘটনা
রয়েছে। যেসব ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পরপরই পুরো জাতিকে স্তব্ধ হয়ে দেখতে হয়
এ ধরনের বর্বরতাকে।
0 comments:
Post a Comment